অবিলম্বে আলোচনায় বসুন-পোশাকশিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ

রোববার সকালেও আশুলিয়ায় পোশাকশিল্প শ্রমিকেরা বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ করেছেন। তাঁদের আন্দোলন ন্যায্য মজুরির জন্য। সম্প্রতি মূল্যস্ফীতির কারণে শুধু যে দৈনন্দিন বাজারের খরচ বেড়েছে তা-ই নয়, বেড়েছে ঘরভাড়া থেকে শুরু করে যাতায়াত ভাড়া, অসুখ-বিসুখে ওষুধের দাম, এককথায় জীবনধারণের সব ধরনের ব্যয়।


সুতরাং, নেহাত কষ্টেসৃষ্টে স্রেফ বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতেই তাঁরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন। এই দাবি মালিকপক্ষ সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা না করে কারখানা বন্ধের যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা শ্রমিক, মালিক বা শিল্প খাতের জন্য কোনো সুফল দেবে না; বরং পোশাকশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
গতকাল প্রথম আলোর প্রথম পাতায় আশুলিয়ার এক অসহায় শ্রমিককে পুলিশের লাঠিপেটার যে পীড়াদায়ক ছবিটি ছাপা হয়েছে, তা দেখলে যে কারও মনে প্রশ্ন জাগবে, এটা কি কোনো সভ্য সমাজের চিত্র? কোনো গণতান্ত্রিক দেশে পুলিশ কি এভাবে একজন শ্রমিককে পেটাতে পারে? এই ছবি যখন আমেরিকা-ইউরোপের তৈরি পোশাক ক্রেতারা দেখবেন, তখন তাঁরা এ দেশের পোশাকশিল্পের মালিকদের সম্পর্কে কী ধারণা করবেন? আর পুলিশ দিয়ে নির্বিচারে শ্রমিক পেটানোর এ দৃশ্যটিই বা তাঁদের অন্তরে কী ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি করবে? মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশের পোশাকশিল্প খাতের এ ধরনের নেতিবাচক ঘটনা বিশ্বের বড় বড় ক্রেতাকে বিচলিত করে। কারণ, তাঁদের দেশের ক্রেতারা প্রশ্ন তোলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রতি অমানবিক আচরণ করলে কেন তাঁরা তাঁদের তৈরি পোশাক কিনবেন। বিশ্ববাজারের এই সংবেদনশীলতা উপেক্ষা করে যে চলা সম্ভব নয়, সেটা পোশাকশিল্প মালিকেরা যত দ্রুত উপলব্ধি করবেন, ততই মঙ্গল।
শ্রমিকদেরও সচেতন থাকতে হবে। কারণ, দাবি আদায়ের আন্দোলন করার জন্য যদি শেষ পর্যন্ত কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তাঁদের জীবনে আরও বেশি সংকট দেখা দেবে। প্রকৃতপক্ষে শ্রমিকেরা সব সময়ই তাঁদের কারখানার স্বার্থকে মূল্য দেন। জীবনধারণের জন্য কারখানা টিকিয়ে রাখা যে কত বেশি প্রয়োজন, তা একজন শ্রমিকের চেয়ে ভালো আর কেউ বোঝে না। বলা হয়, শ্রমিকদের নাকি মহলবিশেষ উসকানি দেয়। সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু শুধু অনুমাননির্ভর অভিযোগ তুলে মূল সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি সরাসরি নাকচ না করে অবিলম্বে আলোচনায় বসা দরকার। এখানে সমস্যা হলো, নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিক, মালিক ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যে কমিটি গঠনের কথা, সেটা সব কারখানায় নেই। এ অবস্থায় অবিলম্বে শ্রমিকদের আস্থাভাজন প্রতিনিধির সঙ্গে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে প্রতিটি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কারখানা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যই এটা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.