জবাব দিতে হবে কর্তৃপক্ষকেই-শহরে বাঘের বাচ্চা

ঢাকার একটি বাসা থেকে তিনটি বাঘশাবক উদ্ধার করা হয়েছে। এই নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক হইচই। সাধারণত টিভি চ্যানেল এবং পত্রিকাগুলো নতুন কোনো খবর পায় না। তাই এবার তারা বাঘ নিয়ে একেবারে উঠেপড়ে লেগেছে। বাঘের বাচ্চা নিয়ে প্রতিদিনই কিছু না-কিছু থাকছে।


আর থাকবেই বা না কেন, যেনতেন বাচ্চা তো না, একেবারে সাক্ষাৎ বাঘের বাচ্চা। লোকালয়ে বাঘের বাচ্চা না থাকলেও ‘বাঘের বাচ্চা’ কথাটার প্রচলন আছে। কেউ দুঃসাহসিক কোনো কাজ করলেই বলা হয়, ‘শাবাশ! বাঘের বাচ্চা!’ র‌্যাব যখন বাঘের বাচ্চা উদ্ধার করল, তখনো অনেকেই বলেছে, ‘শাবাশ! বাঘের বাচ্চা!’ বাংলাদেশ দলের কেউ ভালো খেললে সবাই বলে, ‘শাবাশ! বাঘের বাচ্চা!’ এমনকি পুলিশ যখন সাংবাদিক পেটায়, তখনও ওপরমহল থেকে বলা হয়, ‘শাবাশ! বাঘের বাচ্চা!’ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই ‘বাঘের বাচ্চা’ বিশেষণটির ব্যবহার কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে। যত্রতত্র এই বিশেষণ ব্যবহার করায় বাঘসম্প্রদায় বেশ বিরক্ত বলে জানিয়েছেন প্রাণিগবেষকেরা। আসল বাঘের বাচ্চাকেই বাঘের বাচ্চা বলুন—এটাই বাঘদের প্রাণের দাবি। আসলেই তো, কারও সাহসিকতা বোঝাতে গিয়ে বাঘের ছেলেমেয়ে নিয়ে টান দেওয়ার মানে কী? অথচ এই ব্যাপারটি নিয়ে কেউই কিছু ভাবছে না। আসলে আমাদের প্রবাদ-প্রবচনগুলো বাংলা ব্যাকরণ পরীক্ষা ছাড়া আর কোথাও কোনো কাজে আসে না। যেমন, একটা প্রবাদ আছে—বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। প্রবাদ অনুযায়ী, বাঘের বাচ্চাগুলোকে বনে নিয়ে যাওয়ার কথা। অথচ কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ে গেল হাতিরপুলের চিড়িয়াখানায়। এরপর ডুলাহাজরায়। কোনো মানে হয়? তাহলে হয় প্রবাদ ডিলিট করেন, না হলে বনের বাঘ বনেই ফিরিয়ে দিন। অথচ এখানে শুধু কবি নয়, কর্তৃপক্ষও নীরব। তবে শুধু প্রবাদ নয়, স্লোগানেও আছে সমস্যা। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠান, কিংবা টিকা খাওয়ান—এই স্লোগানগুলো পুরোপুরি পরিষ্কার না। বাচ্চাদের বলতে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? বাঘের বাচ্চাও তো বাচ্চা, তাহলে কি তাদেরও স্কুলে পাঠাতে হবে? টিকা দিবসে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে? এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? জাতির বিবেকের কাছে এমনিতেই অনেক প্রশ্ন জমেছে, তার প্রশ্নসংখ্যা আর বাড়িয়ে লাভ নেই। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দ্রুত দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.