ভর্তুকি দিয়ে যেন চালাতে না হয়-বন্ধ পাটকল চালুর সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) বন্ধ চারটি পাটকল আবার চালু করার প্রস্তাবে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের সিদ্ধান্তটি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর সঙ্গে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থের যোগ রয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে বলা হয়েছে, মিলগুলো চালু করতে ব্যয় হবে ১৭৬ কোটি টাকা।


তারপর এগুলো নিয়মিতভাবে চালু রাখার জন্যও মাসে মাসে প্রয়োজন হবে বিপুল অর্থ।
আন্তর্জাতিক বাজারে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বাড়ার প্রেক্ষাপটে বন্ধ পাটকলগুলো আবার চালু করা বাস্তবসম্মত। দেশের ভেতরেও প্লাস্টিকসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানজাত দ্রব্যসামগ্রীর ব্যবহার কমিয়ে পাটজাত দ্রব্যসামগ্রীর ব্যবহার বাড়ানোর ভাবনাও সময়োপযোগী। পৃথিবীর অনেক দেশই এ ধরনের পরিবেশবান্ধব দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহারের পথে ফিরে যাচ্ছে। সুতরাং দেশের ভেতর ও বাইরে পাট ও পাটজাত দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা বাড়ছে, ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। এটা পাটশিল্পের বাণিজ্যিক সাফল্যের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা নির্দেশ করে। পাটের সমৃদ্ধ সোনালি অতীতের কারণও ছিল তা-ই।
কিন্তু যেকোনো শিল্পের বাণিজ্যিক সাফল্যের জন্য যে সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন, আমাদের দেশে সরকারি পর্যায়ে তার বেশ অভাব রয়েছে। আদমজী জুট মিলের মতো বিরাট প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে ক্রমাগত লোকসানের বোঝা টানতে না পেরে। যে বন্ধ পাটকলগুলো আবার চালু করার প্রস্তাব অনুমোদিত হলো, সেগুলোও দীর্ঘদিন ধরে লোকসানি প্রতিষ্ঠান ছিল বলেই বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। সরকারি অর্থে বছরের পর বছর লোকসানি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কিছু লোকের কর্মসংস্থান হয় বটে, কিন্তু জাতির অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটে না, শিল্পটিও বিকাশ লাভ করতে পারে না। কিছু মানুষের কায়েমি স্বার্থ এর সঙ্গে জড়িত থাকে বলে লোকসানি প্রতিষ্ঠান হলেও কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে সেগুলো চালু রাখার চেষ্টাও চলে। উল্লিখিত বন্ধ পাটকল আবার চালু করার পেছনে যেন কোনো মহলের সে রকম উদ্দেশ্য না থাকে, সেটা নিশ্চিত করা দরকার। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল বলে আমরা সেগুলো চালু করছি—ভাবনাটা যেন এমনও না হয়। পুরো বিষয়টি দেখা উচিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। আর পাটকলগুলো আবার চালু করলেই তো বড় কাজ হয়ে যাবে না; সেগুলো যেন নিজের আয় থেকে কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা দিতে পারে, কাঁচামাল সংগ্রহের অর্থ জোগাতে পারে, প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের প্রয়োজন থাকলে তাও নিজের উপার্জিত আয় থেকেই করতে পারে, অর্থাৎ সার্বিকভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হতে পারে, বছরের পর বছর ভর্তুকি দিয়ে চালাতে না হয়—এসব নিশ্চিত করার ওপরই নির্ভর করবে পাটকলগুলো আবার চালু করার সিদ্ধান্তের সাফল্য। আমরা মনে করি, সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মনিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ ও সততা নিশ্চিত করা গেলে পাটকলগুলো লাভজনকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

No comments

Powered by Blogger.