...জন্য সম্পাদক দায়ী নয়

আমরা কমন একটা কথার সঙ্গে পরিচিত—মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন। না, শুধু মতামতের জন্যই সম্পাদক দায়ী নন, তা কিন্তু না। মতামতের পাশাপাশি আরও অনেক কিছুর জন্যই সম্পাদক, বিশেষ করে রস+আলোর সম্পাদক দায়ী থাকেন না।


বিস্তারিত খুলে বলছেন ইকবাল খন্দকার

রস+আলো হাতে নিলে মাঝেমধ্যে ধাঁধায় পড়ে যেতে হয়। এটা কোন দিক দিয়ে খুলব, আমরা সেটা সহজে বুঝে উঠতে পারি না। কারণ, এমনভাবে উল্টাপাল্টা পিন মারা থাকে, মোটামুটি দুই সাইডই জট লেগে থাকে। এই উল্টাপাল্টা, বাঁকা-ত্যাড়া পিনগুলো খুলতে গিয়ে হয়তো আমরা রস+আলোর পাতা ছিঁড়ে ফেলি, নয়তো হাতের আঙুলে রক্তের প্রবাহ সৃষ্টি করে ফেলি। এই যে রস+আলোর ত্যাড়া-বাঁকা পিন নিয়ে আমরা নিয়মিত ঝামেলায় পড়ছি, এর জন্যও সম্পাদক দায়ী নন। কারণ রস+আলোর গায়ে পিন মারার দায়িত্ব তাঁর না। তাঁর দৌড় হচ্ছে গ্রাফিকস পর্যন্ত। এর জন্য দায়ী করলে বড়জোর প্রেসের লোকজনকে করা যেতে পারে।

রস+আলোতে অনেক দিন ধরে বিভিন্ন শিল্পীর জনপ্রিয় গানের প্রথম কলি ছাপা হয়ে আসছে। কেন ছাপা হয়ে আসছে, সেটা আপনারা খুব ভালো করেই জানেন। জি, এগুলো রিংটোন বা ওয়েলকাম টিউন হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ছাপা হয়ে আসছে। কী লিখে, কোন নম্বরে সেন্ড করলে কোন গান রিংটোন হিসেবে বাজবে, সেটাও লেখা থাকছে রস+আলোতে। মনে করুন, আপনি একদিন একটা গান রিংটোন হিসেবে ব্যবহারের জন্য রস+আলোতে লেখা নিয়মকানুন মোতাবেক চেষ্টা করলেন; কিন্তু প্রথমবার সফল না হয়ে বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর সফল হলেন। কেন প্রথমবার সফল হওয়া সম্ভব হলো না, কেন নেটওয়ার্ক বিট্রে করল, এসবের জন্য কিন্তু সম্পাদক দায়ী নন!

সকালে আমরা একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠতেই পারি। সোমবার রস+আলো দেওয়া হয় বলে এই দিন আগে আগে বিছানা ছাড়ব, অতটা ঠেকা পড়েনি। তো, ১০টার দিকে উঠে দরজার নিচের দিকে তাকাতেই পত্রিকা পাওয়া গেল। কিন্তু পত্রিকা পাওয়া গেলেও রস+আলো পাওয়া গেল না। তার মানে যেহেতু পত্রিকাটা হাতে হাতে দিতে হয়নি, রস+আলোও কেউ বুঝে নেয়নি, এই সুযোগে ম্যাগাজিনটা হারিয়ে গেছে। এই যে রস+আলো নিয়ে দুই নম্বরিটা হলো, এর জন্যও কিন্তু বিভাগীয় সম্পাদক দায়ী নন। কারণ, তাঁর পক্ষে সম্ভব না আপনার বাসার কাছে দাঁড়িয়ে কারও ওপর নজরদারি করা। যেহেতু এই সময় তিনি নিজেও ঘুমান।

বাসায় সদস্য প্রচুর। কিন্তু রস+আলো মাত্র একটা। রস+আলোর সংখ্যা এবং পরিবারের সদস্যসংখ্যার মধ্যে এই যে অসামঞ্জস্য, এর প্রভাব প্রতিনিয়তই লক্ষ করা যায়, বিশেষ করে পরিবারের দু-একজন সদস্য তো নিয়মিতই ম্যাগাজিনটা নিয়ে টানাটানি করে। একদিন টানাটানি করতে গিয়ে ছিঁড়েই গেল। কেন ছিঁড়ল, এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি, একপর্যায়ে হাতাহাতি। রস+আলো নিয়ে এই যে এত সব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটল, এর জন্য কোনোভাবেই সম্পাদক দায়ী থাকবেন না।

রস+আলোতে বিজ্ঞাপনের আধিক্য দেখে প্রথম প্রথম অনেকে অনেক কিছু বললেও এখন সবার গা-সওয়া হয়ে গেছে। কেউ কেউ তো রস+আলোকে বিজ্ঞাপনের আখড়া নামে বিশেষায়িতও করে ফেলেছে। এই যে এত এত বিজ্ঞাপন, এসব বিজ্ঞাপনে কিন্তু অনেক লোভনীয় অফারও থাকে, বিশেষ করে এটা কিনলে সেটা ফ্রি—এ ধরনের কথা তো থাকেই। রস+আলোতে এই ধরনের কোনো বিজ্ঞাপন দেখে নির্দিষ্ট দোকানে আপনি চলে গেলেন পণ্যটা কিনতে। কিন্তু গিয়ে দেখলেন সাপ্তাহিক ছুটির কারণে দোকান বন্ধ। রিকশা ভাড়াটা জলে যাওয়ার শোকে আপনি যদি এই দোকানের পাশাপাশি রস+আলোকেও দোষারোপ করেন, লাভ নেই। কারণ, এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

No comments

Powered by Blogger.