নির্ধারিত সময়েই দখলমুক্ত করতে হবে-ঢাকার চার নদী রক্ষা

প্রকৃতির অকৃত্রিম দান যে চারটি নদী ঘিরে রয়েছে আমাদের প্রিয় ঢাকা মহানগরকে, মানুষের অবিমৃশ্যকারিতায় সে নদীগুলোর চূড়ান্ত বিপর্যয় ঠেকাতে হবে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে যত কথা বলা হয়েছে, কাজ ততটা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহে নদীগুলোকে অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করার অভিযান চলেছিল কিছুদিন।


কিন্তু নানা স্বার্থান্বেষী মহলের বিরোধিতায় সেই অভিযান খুব ফলপ্রসূ হতে পারেনি।
বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। একটি মানবাধিকার সংস্থার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ বছরের জানুয়ারি মাসে এক রায় দেন। রায়টিতে আদালত আগামী নভেম্বরের মধ্যে নদীগুলোর সীমানা থেকে সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীতীরে হাঁটার পথ নির্মাণসহ ১২ দফা নির্দেশনা দেন। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রায়টি পুনর্বিবেচনা ও কিছু নির্দেশনা সংশোধনের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চে আরজি পেশ করলে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়। অবশ্য সুখের বিষয়, কয়েক মাস পিছিয়ে হলেও গত মঙ্গলবার আদালতের রায় পাওয়া গেছে। আদালতের পূর্ববর্তী রায় অপরিবর্তিত আছে, তবে আদালত রায়টি বাস্তবায়নের সময় আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এখন আমরা বলব, আর যেন কোনোভাবেই সময় বাড়ানো না হয়। কারণ এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে, নদীগুলোকে সম্পূর্ণভাবে দখলমুক্ত করার পরও সুস্থ, স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অনেক কাজ করতে হবে। ঢাকার চারপাশের জলপথকে আরও কার্যকর করার জন্যও নদীগুলোর তীরের অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। প্রয়োজন হবে বুড়িগঙ্গার পানির দূষণ দূর করার উদ্যোগ এবং একে আরও দূষণের হাত থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া।
আদালতের ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজগুলোও এগোয়নি। যেমন—ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে বা সিএস রেকর্ড অনুসারে ভূমিজরিপের মাধ্যমে নদীগুলোর সীমানা চিহ্নিত করার নির্দেশনা আদালতের রায়ে ছিল। ভূমি জরিপ করা হয়েছে, কিন্তু নদীগুলোর সীমানা-নির্ধারক খুঁটি স্থাপন করা হয়নি। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কারণ সরকারিভাবে চিহ্নিত ও নির্ধারিত সীমানা ঘোষণা না করা হলে নদীগুলোর অব্যাহত অবৈধ দখল রোধ করা অসম্ভব। এসব ক্ষেত্রে আদালতের স্থিতাবস্থার সুযোগ নিয়ে অবৈধ দখলদারেরা দখলবাজি চালিয়ে যায়। তা ছাড়া আদালতের নির্দেশনায় তিন মাসের মধ্যে নদী কমিশন গঠনের কথা ছিল, কিন্তু সে কাজটিও করা হয়নি। আদালত সময় বাড়িয়েছেন বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো যদি কাজে তৎপর না হয়ে কাল ক্ষেপণ করতে থাকে এবং শেষ মুহূর্তে গিয়ে আবারও সময় বাড়ানোর আবেদন জানায়, তাহলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু—ঢাকা মহানগরকে বেষ্টন করে থাকা এই চারটি নদীকে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সংকটাপন্ন তো বটেই, এ চার নদীকে বিপন্ন বললেও অত্যুক্তি হয় না। কেবল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেই এগুলোর বিপন্নতার অবসান হবে না, এসব নদীকে রাসায়নিক বর্জ্যসহ নানা ধরনের দূষণের হাত থেকে রক্ষা করাসহ নাব্যতা উদ্ধার ও পানিপ্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যেও বড় উদ্যোগ নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.