হিলারি ক্লিনটন আসছেন কাল-আলোচনায় সুশাসন-রাজনীতি

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঢাকা সফরে দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সুশাসনসহ দেশের চলমান পরিস্থিতি আলোচনায় আসবে। এ ছাড়া মানবাধিকার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিতে পারেন তিনি।
ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছে।


এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি গতকাল তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ৫ মে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে দুই পক্ষ একমত হলে অংশীদারি সংলাপ চূড়ান্ত করার ঘোষণা আসতে পারে। তবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা রূপরেখা চুক্তি (টিকফা) সই হওয়ার ব্যাপারে তিনি স্পষ্টভাবে কিছু বলেননি। শুধু বলেছেন, টিকফা নিয়ে আলোচনা চলছে। দুই দেশের মধ্যে মতপার্থক্য অনেকটাই কমে এসেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং বিশেষায়িত মার্কিন সহায়তা তহবিল মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ অ্যাকাউন্টে (এমসিএ) অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈঠকের আলোচ্যসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে কাজ চলছে।
সহযোগিতা রূপরেখা প্রায় চূড়ান্ত: যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ চূড়ান্ত হচ্ছে হিলারির আসন্ন ঢাকা সফরে। এটি হলে দুই দেশের সহযোগিতা নিবিড় হবে। এর আওতায় নিয়মিতভাবে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দুই পক্ষ একমত হলে যৌথ ঘোষণায় এর উল্লেখ থাকবে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র গত রাতে প্রথম আলোকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত সহযোগিতা সংলাপের রূপরেখার চূড়ান্ত ঘোষণা আসছে হিলারির সফরে। আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে দেওয়া যৌথ ঘোষণায় এ ব্যাপারে উল্লেখ থাকবে।
টিকফা সই হচ্ছে না: বহুল আলোচিত ও যুক্তরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষিত রূপরেখা বাণিজ্য চুক্তি টিকফা এই সফরে সই হচ্ছে না। অর্থাৎ হিলারির সঙ্গে দীপু মনির বৈঠকে এটি সই হবে না, এমনটাই জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সূত্রটি। এ ব্যাপারে দীপু মনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুই পক্ষ চুক্তি সইয়ে দূরত্ব কমিয়ে এনেছে। তবে এটি সই হবে কি না, খোলাসা করেননি তিনি।
চুক্তিটির প্রস্তুতির সঙ্গে জড়িত একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, গত মাসের প্রথমার্ধে টিকফার ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এটি এখনই সই না করে বিশেষ করে শ্রম অধিকার বিষয়ে দেশের স্বার্থের বিষয়টি পর্যালোচনার পর এগোনোর পক্ষে মত দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতকে পাশ কাটিয়ে এটি সই করার পদক্ষেপ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে অবহিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি তুরস্ক সফর শেষে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে তিনি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় বিষয়টি তোলেন। কেন এভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটানো হলো, সেটি প্রধানমন্ত্রী জানতে চান। পরে তিনি পুনরায় সব মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেন।
সুশাসন প্রসঙ্গ: কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার নিয়ে জানতে চাইবেন হিলারি ক্লিনটন। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া আর পোশাকশ্রমিক অধিকার সংগঠন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) সংগঠক আমিনুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র খোঁজ নেবে।
এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি, যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গও প্রাসঙ্গিকভাবে তোলা হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, গত বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা হিলারির চিঠির প্রেক্ষাপটে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি বেশ তাৎপর্যপূণ। কারণ, গত বছরের ২৬ অক্টোবর লেখা ওই চিঠিতে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির বেশ কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সফরের স্মৃতি উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘উন্নততর পরিস্থিতিই ভবিষ্যতে আমার বাংলাদেশ সফরের পথ সুগম করবে।’
কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন এক সময়ে বাংলাদেশ সফর করছেন, যখন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তা ছাড়া, সুশাসন নিয়ে মার্কিন উদ্বেগগুলোও সেভাবে দূর হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.