আরেক মানবতাবিরোধী অপরাধ

২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় একটি অধ্যায়। নির্বাচনে বিজয় লাভের পরপরই বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতা-কর্মীরা সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যে বর্বরতম হামলা চালিয়েছিল,


তা ছিল স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে সবচেয়ে জঘন্য হামলা। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগি্নসংযোগ অর্থাৎ মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো কিছুই তখন বাদ রাখেনি তারা। ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এটা ছিল একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধেরই আরেকটি রূপ। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও সেই সত্য স্পষ্ট হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার প্রত্যক্ষ মদদে ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংস ঘটনা ঘটে। প্রতিবেদনে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের অনেকে একাত্তরেও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল।
সংগত কারণেই ২০০১ সালের সেই সহিংসতার পর এ দেশের গণমাধ্যম, সচেতন নাগরিক শ্রেণী এবং নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর একটি প্রধান দাবি ছিল_বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে এর সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক এবং অপরাধীদের উপযুক্ত সাজা দেওয়া হোক। অবশেষে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামের সংগঠনের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ ২০০১ সালের সহিংসতার কারণ উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের চিহ্নিত করার জন্য হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। তাঁর এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন। পরে সাবেক জেলা দায়রা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের সদস্যরা মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে গত ১৩ মার্চ প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেন। বাকি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে গত ২৪ এপ্রিল সেই প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বিএনপি-জামায়াত জোটের ১৮ হাজার নেতা-কর্মীকে সহিংসতার প্রত্যক্ষ মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়, তাদের অনেকেই প্রত্যক্ষভাবে সহিংসতায় অংশ নেয়। চিহ্নিত এসব ব্যক্তিকে আইনের আওতায় নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়। আমরাও চাই, কোনোরূপ প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে নয়, নিরপেক্ষ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই সময়কার সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.