সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী-অন্য দেশের কাছে জবাবদিহিতা নয়

গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে কোনো রাষ্ট্রের কাছে সরকার জবাবদিহিতা করবে না। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে সরকারের জবাবদিহিতা দেশের জনগণের কাছে, সংসদের কাছে; ভিন্ন কোনো দেশের কাছে নয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ মন্তব্য করেন।


সে সময় তাঁর আসন্ন দিল্লি সফর এবং জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী কাতসুয়া ওকাদা, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আসন্ন ঢাকা সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের কাছে দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারকে জবাবদিহিতা করতে হবে কি না, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক কিছু নয়, বরং অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো।
দীপু মনি বলেন, আগামী শনিবার বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় 'অংশীদারি সংলাপ'-এর বিষয়টি জানানো হতে পারে। দুই পক্ষের পরবর্তী বৈঠকের পর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
প্রস্তাবিত এই অংশীদারি সংলাপ দুই দেশের আলোচনার মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে। সংলাপ যেমন পারস্পরিক মতদ্বৈধ নিরসনে ভূমিকা রাখবে তেমনি সম্পর্ক এগিয়ে নিতেও সহযোগিতা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব ইস্যুতে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অধিকতর সহযোগিতার ব্যাপারে আলোচনা হবে।
'অংশীদারি সংলাপ' প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, এটি দুই দেশের মধ্যে আলোচনার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠকের সুযোগ তৈরি হবে। অন্য অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এমন সংলাপ করে আসছে। এসব বৈঠকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তার বিষয়াদিসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা হিলারির এ সফরে আছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মতপার্থক্য খুবই সামান্য। তবে কোনো চুক্তি স্বাক্ষরের যে প্রক্রিয়া সেটিও খুব ছোট নয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমি নাকচও করছি না, আবার বলতেও পারছি না যে চুক্তি হবে।'
হিলারির সফরকালে বাংলাদেশকে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জবাবদিহি করতে হতে পারে- সাবেক কূটনীতিকদের এমন আশঙ্কার ব্যাপারে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখার জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন রয়েছে।
দীপু মনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্কের কারণে অনেকে হীনমন্যতায় ভোগেন। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলে। বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু তা জবাবদিহিতা নয়।
নির্বাচন নিয়ে সংলাপের আহ্বানে বিব্রত নয় সরকার আগামী নির্বাচনের উপায় ঠিক করতে সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসতে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে সরকার বিব্রত কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'বিব্রত হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখিনি। নির্বাচন কমিশন গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি পদের জন্য নির্বাচন আয়োজন করেছে। নির্বাচনগুলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।' নির্বাচনগুলো যেমন সর্বজনগ্রাহ্য হয়েছে তেমনি সর্বজন প্রশংসিত হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
দীপু মনি বলেন, 'আমাদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার যৌক্তিকতা নেই। বন্ধুর সব পরামর্শ শুনতে পারি। কিন্তু যেটি যৌক্তিক সেটির বিষয়ে নিশ্চয়ই আমাদের জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।'
মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ ঘটনার তদন্তে স্বাধীন কোনো সংস্থাকে কাজে লাগাতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আহ্বান প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ইলিয়াস আলীর খোঁজ করছে। আশা করা হচ্ছে, সবাই এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে।
তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রস্তাব বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে সরকারের যে কাঠামো আছে তাকেও এ ব্যাপারে কাজে লাগানো যেতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া উদ্বেগজনক। তবে সার্বিকভাবে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়। অন্য অনেক দেশের ও সমাজের তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপ নয়। অবশ্য সব দিকেই উন্নতি করার সুযোগ আছে।
ভারতের সঙ্গে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি নিয়ে কাজ চলছে
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি নিয়ে কাজ চলছে। উভয় পক্ষ চুক্তির খসড়া দেখছে।
ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ঢাকা সফর প্রসঙ্গে দীপু মনি বলেন, রবীন্দ্র সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীর সমাপনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি। দুই দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ হবে। বাংলাদেশ তা করবে। এ ছাড়া ৭ মে দিল্লিতে যৌথ কমিশনের বৈঠকে সামগ্রিক সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোচনা হবে। বাণিজ্য, সংযোগ (কানেকটিভিটি), সীমান্ত ব্যবস্থাপনাসহ সব ইস্যুতে আলোচনা হবে তখন।
গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের পর দুই দেশের সম্পর্কে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই- সাংবাদিকদের এ কথার জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'দৃশ্যমান কিছু নেই তা মনে হয় না। কেবল বাণিজ্যের পরিমাণের দিকে তাকালেই অনেক অগ্রগতি দেখা যাবে। তিন বছর আগে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩০ কোটি ডলার। এখন তা ১০০ কোটি ডলার ছুঁতে চলেছে।'

No comments

Powered by Blogger.