সিদ্ধান্ত যেন কাগজে-কলমে আটকে না থাকে-সরকারি শেয়ার বাজারে ছাড়া

খবরটা ইতিবাচক। সরকারি মালিকানা রয়েছে, এমন ২৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে ছাড়ার জন্য ছয় মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও শেয়ার ছাড়া এবং তালিকাভুক্ত নেই, সেগুলোর নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার ছাড়তে হবে।


খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বিষয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো যে শেয়ার ছাড়তে চায় না, তাতেও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেছেন।
অর্থমন্ত্রীর তথা সরকারের এই সিদ্ধান্ত একাধিক কারণে তাত্পর্যবহ। প্রথমত, বর্তমানে শেয়ারবাজারে বিপুল পরিমাণ অর্থপ্রবাহ রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে বাজারে শেয়ারের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা মেটাতে ও বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে হলে ভালো শেয়ারের জোগান বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সেদিক থেকে সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক ও ভালো কোম্পানির শেয়ার যথেষ্ট সহায়ক হবে। দ্বিতীয়ত, এর মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে, যা দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্যিক অবস্থা জোরদার করবে। তৃতীয়ত, এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সরকারের সম্পৃক্ততা বাড়বে, যা সরকারকে বাজারের প্রতি অধিকতর মনোযোগী করবে। এটা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজারের প্রতি আস্থা বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বিভিন্ন সময়ে সরকারি শেয়ার বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবে আর সেভাবে কার্যকর হয়নি। বরং সরকারি শেয়ার রয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলো নানা টালবাহানা করে প্রক্রিয়াটি আটকে রেখেছে। এদের মধ্যে একাধিক বহুজাতিক কোম্পানিও রয়েছে। আর তাই এসব কোম্পানি এবারও যে সহজে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, এমনটি নিশ্চিত হওয়া কঠিন। তার ওপর রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। শেয়ার ছাড়লে আমাদের কী লাভ হবে, এমন মানসিকতা আমলাতন্ত্রের মধ্যে প্রবলভাবে গেড়ে বসে আছে। এসব অবস্থা থেকে উত্তরণ না ঘটাতে পারলে ছয় মাস পরে গিয়ে আবারও হতাশায় নিমজ্জিত হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.