আবার রক্তাক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার রক্তাক্ত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে হলের মধ্যেই এ সংঘাত হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্ররা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে।


সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ও অন্তত ৩৫টি হাত বোমার বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া গেছে। ভাংচুর হয়েছে ১৩টি কক্ষ। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। সংঘর্ষের পর হলে তল্লাশি চালিয়ে একটি পিস্তল এবং কয়েকটি রামদা ও লাঠিসোঁটা উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে হল কর্তৃপক্ষ। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ৬৫ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে একজন ভর্তি হয়েছেন। তিনজনকে পাঠানো হয়েছে পঙ্গু হাসপাতালে। সোমবার রাতে হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মাহির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সম্পাদক সোহাগ ও হলের সহসম্পাদক রাহাতের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। হলের প্রক্টর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ছাত্রদের দুটি অংশের মধ্যে রাতে উত্তেজনা দেখা দিলেও তা বৈঠকের মধ্য দিয়ে রাতেই মিটমাট করে দেওয়া হয়। ছাত্ররা সংবাদমাধ্যমকে জানায়, রাত আড়াইটার দিকে বৈঠক শেষ হয়। এর দুই ঘণ্টার মাথায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। লাঠিসোঁটা, রড, হকিস্টিক নিয়ে একে অপরের ওপর হামলে পড়ে। কয়েকজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও দেখা যায়। সংঘর্ষের সময় হলের টিভি কক্ষ এবং অন্য ১২টি কক্ষ ভাংচুর হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গত বছরও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পরস্পরের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে আবু বকর নামে এক মেধাবী ছাত্রের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির সুপারিশে কয়েকজন ছাত্রকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই দেখা গেছে ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পরস্পর সংঘর্ষ লিপ্ত হয়েছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে এই ছাত্রসংগঠনটির বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার স্থান। সেখানে ছাত্ররা অধ্যয়ন করতে আসে। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির নামে কয়েক দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যা ঘটছে, তাকে অন্তত সুস্থ রাজনীতিচর্চা বলা চলে না। অথচ বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির উজ্জ্বল অতীত রয়েছে। সেই অতীত এখন কেবলই স্মৃতি। একসময় সব গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আজকের ছাত্ররাজনীতির দিকে দৃষ্টি দিলে অতীতের সেই সোনালি দিনগুলো আর খুঁজে পাওয়া যায় না। যেখানে দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনা হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আজ নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। গত বছর এমনই এক সংঘর্ষে আবু বকরের মৃত্যুর পর বেশ কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু মুহসীন হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যকার সংঘর্ষের পর একটাই প্রশ্ন সামনে আসে, যারা নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে সহপাঠীদের ওপর আঘাত করতে পারে, তারা কি ছাত্র?
এবারও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্টও দেবে। সেই রিপোর্ট যেন চাপা পড়ে না থাকে। সঠিক তদন্ত হতে হবে। যারা দোষী প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা একেবারেই অনভিপ্রেত।

No comments

Powered by Blogger.