পবিত্র কোরআনের আলো-আমানত ও সাক্ষ্যের ব্যাপারে সততা রক্ষার পদ্ধতি নির্দেশ

১০৬. ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানূ শাহা-দাতু বাইনিকুম ইযা হাদ্বারা আহাদাকুমুল মাওতু হীনাল ওয়াসিয়্যাতিছ্না-নি যাওয়া আ'দলিম্ মিনকুম আও আ-খারা-নি মিন গাইরিকুম ইন আনতুম দারাবতুম ফিল আরদ্বি ফাআসা-বাতকুম্ মুসীবাতুল মাওতি; তাহবিছূনাহুমা মিম্ বা'দিস্ সালা-তি ফাইউক্বছিমা-নি বিল্লা-হি ইনি র্তাবতুম লা-নাশতারীবিহী ছামানান ওয়া লাও কা-না যা-ক্বুরবা ওয়া লা নাকতুমু শাহা-দাতাল্লা-হি ইন্না ইযাল্লামিনাল আ-ছিমীন।


১০৭. ফাইন উ'শিরা আ'লা আন্নাহুমাছ্ তাহা-ক্বা ইছমান ফাআ-খারা-নি ইয়াক্বূমা-নি মাক্বা-মাহুমা মিনাল্লাযীনা ফাআ-খারা-নি ইয়াক্বূমা-নি মাক্বা-মাহুমা মিনাল্লাযীনাছ্ তাহাক্বা আ'লাইহিমুল আওলাইয়া-নি ফাইউক্বছিমা-নি বিল্লাহি লাশাহা-দাতুনা আহাক্বু মিন্ শাহা-দাতিহিমা ওয়া মা'তাদাইনা ইন্না ইযাল্ লামিনায্ য্বা-লিমীন।
১০৮. যা-লিকা আদ্না আইঁয়্যা'তূ বিশ্ শাহা-দাতি আ'লা ওয়াজহিহা আও ইয়াখা-ফূ আন তুরাদ্দা আইমা-নুম্ বা'দা আইমা-নিহিম; ওয়াত্তাক্বুল্লা-হা ওয়াছমাঊ'; ওয়াল্লা-হু লা-ইয়াহ্দিল ক্বাওমাল ফাছিক্বীন। [সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ১০৬_১০৮]
অনুবাদ : ১০৬. হে ইমানদাররা! তোমাদের কারো যখন মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, তখন ওসিয়ত করার মুহূর্তে তোমাদের মধ্য থেকে দুইজন ন্যায়নিষ্ঠ মানুষকে সাক্ষী বানিয়ে রাখবে। অথবা বাইরের দুইজন লোককে হলেও সাক্ষী বানিয়ে নেবে_যদি তোমরা ভ্রমণে থাকো এবং সেই সময় মৃত্যুর বিপদ এসে পড়ে। পরে যদি এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ সৃষ্টি হয়, তবে সাক্ষী দুইজনকে নামাজের পরে দাঁড় করাও, তারা আল্লাহর নামে কসম করে বলবে, আমরা কোনো স্বার্থের বিনিময়ে এ সাক্ষ্য বিক্রি করব না, যদি ঘনিষ্ঠ কোনো আত্মীয় হয় তবুও না। আমরা আল্লাহর নামে দেওয়া এ সাক্ষ্য গোপন করব না, যদি তেমন কিছু করি, তবে আমরা গুনাহগারদের দলে শামিল হব।
১০৭. পরে যদি প্রকাশ পায় যে এ দুইজন সাক্ষী অপরাধে লিপ্ত ছিল, তবে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্য থেকে দুইজন সাক্ষী তাদের স্থলাভিষিক্ত হবে। তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, আমাদের সাক্ষ্য অবশ্যই তাদের সাক্ষ্য অপেক্ষা সত্যভিত্তিক হবে, আমরা সীমালঙ্ঘন করিনি। যদি সে রকম করি, তবে আমরা জালেমদের দলভুক্ত হয়ে পড়ব।
১০৮. এভাবেই বেশি আশা করা যায়, তারা ঠিক ঠিক সাক্ষ্য দেবে, অথবা তারা অন্ততপক্ষে এ ভয় করবে যে তাদের শপথ অন্য কারো সত্য শপথ দ্বারা বাতিল করে দেওয়া হবে। তোমরা আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ থাকো এবং রাসুলের কথা শোনো, আল্লাহ তায়ালা পাপীদের সঠিক পথ দেখান না।
ব্যাখ্যা : মদিনার বনি সহম গোত্রের জনৈক মুসলমান এক কাফেলার সঙ্গে সিরিয়ায় বাণিজ্য করতে গিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর দুই খ্রিস্টান সঙ্গী তামিম দারি ও আদি ইবনে বারার কাছে ওসিয়ত করে যান তাঁরা যেন তাঁর পরিত্যক্ত সম্পদগুলো তাঁর উত্তরাধিকারীদের কাছে পেঁৗছে দেন। পরিত্যক্ত বস্তুগুলোর মধ্যে একটি স্বর্ণখচিত রৌপ্য পাত্রই ছিল বেশি মূল্যবান। তাঁরা দেশে ফিরে এসে সেই পাত্রটি ছাড়া আর সব জিনিসই মৃতের উত্তরাধিকারীদের কাছে পেঁৗছে দিল। উত্তরাধিকারীরা সেই স্বর্ণখচিত পাত্রটির কথা জানত। তারা পাত্রটির ব্যাপারে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করল এবং খোঁজখবর করতে থাকল। তামিম ও আদি জবাব দিলেন, অন্য কোনো জিনিস তিনি তাঁদের কাছে দেননি। যা দিয়েছিলেন তা তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন। পরিশেষে মোকদ্দমা রাসুলের কাছে পেশ করা হলো, তখন এ আয়াতটি নাজিল হয়। এর পরের আয়াত অর্থাৎ ১০৭ নম্বর আয়াতটি নাজিল হয়েছে এই আয়াতের ধারাবাহিকতায় এবং একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। তামিম ও আদি শপথ করে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করে চলে যাওয়ার কয়েক দিন পর মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা মক্কার জনৈক ব্যক্তির কাছে এই পাত্রটি দেখে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন, তামিম ও আদি মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে এটি ক্রয় করেছিলেন এবং তিনি তাঁর কাছে এটি বিক্রি করেছেন। এরপর তামিম ও আদিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা বললেন, ক্রয়কালে আমাদের কোনো সাক্ষী ছিল না বলে আমরা ক্রয়ের ব্যাপারটি তখন গোপন করেছিলাম! অতএব মামলাটি আবারও রাসুল (সা.)-এর দরবারে পেশ করা হলো। তখনই এই আয়াতটি নাজিল হয়।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী


No comments

Powered by Blogger.