বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না

২৯৭ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। শহীদ নজরুল ইসলাম
বীর প্রতীক বীরের মতো মরতে চেয়েছিলেন তিনি আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এ-দেশীয় সহযোগী রাজাকারদের ঘেরাওয়ে পড়ে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম। তিনি একা। পালানোর সব রাস্তাই বন্ধ। লড়াই করে বীরের মতো মরতে বা বাঁচতে হবে, অন্যথায় কাপুরুষের মতো ধরা দিতে হবে। প্রথমটাই তিনি বেছে নিলেন।


কিন্তু তাঁর দুভার্গ্য। লড়াই করে জীবন দিতে বা বাঁচতে পারলেন না। আহত অবস্থায় শেষ পর্যন্ত ধরাই পড়লেন। এ ঘটনা কয়রাডাঙ্গায়, ১৯৭১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর।
কয়রাডাঙ্গা চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার অন্তর্গত। নজরুল ইসলামসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি ভারত থেকে আলমডাঙ্গায় এসেছিলেন গেরিলা অপারেশনে। তাঁরা বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশন করেন। সেদিন তিনি এসেছিলেন নিজ গ্রামে। কিন্তু তাঁর আসার খবর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্থানীয় দোসররা জেনে যায়। তারা গোপনে দ্রুত খবর পৌঁছে দেয় সেখানে টহলে থাকা পাকিস্তানি সেনাদের।
খবর পেয়ে পাকিস্তানি সেনাদের টহল দল সহযোগী রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে কয়রাডাঙ্গায় চলে আসে। তাদের আসার খবর গ্রামবাসীর কেউ টের পায়নি। নজরুল ইসলাম খবর পেয়ে প্রথমে পালানোর চেষ্টা করেন। সেই চেষ্টা করতে গিয়ে দেখেন সব পথ রুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা গোটা এলাকা ঘেরাও করে এগিয়ে আসছে। তখন তিনি লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাতেও তিনি ব্যর্থ হন। তাঁর কাছে ছিল হালকা অস্ত্র। সেই অস্ত্র দিয়ে কয়েকটি গুলি করামাত্র পাকিস্তানি সেনারা ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি শুরু করে। তিনি আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যান। এরপর পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে আটক করে।
পাকিস্তানি সেনারা নজরুল ইসলামের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। জানার চেষ্টা করে তাঁর সহযোদ্ধাদের নাম ও অবস্থান। শত নির্যাতনেও তা তিনি প্রকাশ করেননি। পরে পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে হত্যা তাঁকে করে।
নজরুল ইসলাম ১৯৭১ সালে দর্শনা কলেজের আইকম প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। কুষ্টিয়া যুদ্ধে (৩০-৩১ মার্চ) তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। কুষ্টিয়া মুক্ত করার জন্য চুয়াডাঙ্গা থেকে মুক্তিবাহিনীর (ইপিআর সদস্য) একটি দল চুয়াডাঙ্গা থেকে আলমডাঙ্গা হয়ে কুষ্টিয়া অভিমুখে যায়। তখন তাঁদের সঙ্গে আলমডাঙ্গার শত শত ছাত্র-জনতা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গার পতন হলে তিনি ২০ এপ্রিল ভারতে যান। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৮ নম্বর সেক্টরের বানপুর সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য শহীদ নজরুল ইসলামকে মরণোত্তর বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ৩৭৪।
শহীদ নজরুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর বাবার নাম মো. ফতে আলী। মা সৈয়দতুন নেছা। শহীদ নজরুল ইসলামের ছবি পাওয়া যায়নি।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৮ এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, মো. আবদুল হানান্ন।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.