সৌদি নারীর ভোটাধিকার-অধিকারের স্বীকৃতি অভিনন্দনযোগ্য

ভোটাধিকার পেল সৌদি নারী'_এ সংবাদটি গতকালের পত্রপত্রিকায় সংগত কারণেই গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়েছে। পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং সিদ্ধান্তটি অভিনন্দনযোগ্য। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এখনো পশ্চাৎপদ এবং নারীও যে মানুষ, বিশ্বের কোনো কোনো দেশ তা স্বীকৃতি দিতে কুণ্ঠিত।


বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ও গোঁড়ামি যেসব দেশে যথেষ্ট দৃঢ়, সেসব দেশে এই আধুনিককালেও নারী সম্পর্কে অনুরূপ ধারণা পোষণ করা হয়। মনে রাখা দরকার, ধার্মিক ও ধর্মান্ধকে কখনোই এক কাতারে ফেলা যায় না। আমাদের কথা হলো, শেষ পর্যন্ত সৌদি নারীরা ভোটাধিকার পাচ্ছেন এবং আমরা আশা করি, অবশ্যই এর ইতিবাচক প্রভাব সে সমাজের অন্যত্রও পড়বে। শুধু ভোটাধিকারই নয়, পৌরসভা নির্বাচনে সৌদি নারীরা প্রার্থীও হতে পারবেন। সৌদি আরবের প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে এ এক বড় অগ্রগতি এবং যুগান্তকারী ঘটনা। সৌদি নারীদের স্থান হবে শুরা কাউন্সিলেও (পরামর্শ সভা)।
রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর যুক্ত হওয়ার এই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত অনেক অন্ধকার দূর করতে সক্ষম হবে_এও সংগতভাবেই আশা করা যায়। সৌদি আরব একটি রক্ষণশীল ধনী রাষ্ট্র হলেও কিছু বিষয়ে দেশটির নীতিনির্ধারকদের কট্টর মনোভাব এত দিন যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছিল, এরও অবসান হবে বলে আশা করা যায়। আরব বিশ্বে পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। নারীও যেহেতু মানুষ, সেহেতু তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই দরকার এবং সমাজের সব স্তরে তাঁদের কার্যকর অংশগ্রহণও জরুরি। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত গ্রুপগুলো রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবে নারীর ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিল দীর্ঘদিন থেকে। ভোটার তালিকায় নারীদের নাম অন্তর্ভুক্ত না করায় গত এপ্রিলে জেদ্দায় অনেক নারী সমাবেশ করে এর প্রতিবাদ জানান। এটি ছিল সৌদি আরবের প্রেক্ষাপটে একটি বিরল ঘটনা। শুধু তাই নয়, গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে অনুমতি লাভের দাবিতে গত জুনে দেশব্যাপী আন্দোলনের অংশ হিসেবে গাড়ি চালান প্রতিবাদী নারীরা। উল্লেখ্য, সৌদি আরবে বর্তমানে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিয়েই কেবল গাড়ি চালাতে পারেন বা দূরে ভ্রমণে যেতে পারেন সে দেশের নারীরা_এ ব্যাপারেও দাবি ক্রমেই প্রবল হচ্ছে।
সমগ্র বিশ্বে উন্নয়ন-অগ্রগতির জোয়ার বইছে। মানুষ তার স্বভাব ও জন্মগত অধিকারের কারণেই মুক্ত জীবনযাপন করতে চায়। স্বাধীনতা মানুষের বিকাশ ঘটায়, উন্নতির শীর্ষে উঠতে সহায়তা করে। স্বাধীনতা যেকোনো সমাজ বা ব্যক্তির জন্য অপরিহার্য। কিন্তু স্বাধীনতা যাতে স্বেচ্ছাচারিতায় রূপ না নেয় এবং কেউ যাতে এর অপব্যবহার না করে, এ ব্যাপারে সবারই সতর্ক থাকা দরকার। স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা সুযোগ লাভের কারণে মন্দচর্চা যেকোনো সমাজের জন্যই ক্ষতিকর। আমরা মনে করি, সৌদি নারীরা যেহেতু সচেতন, সেহেতু তাঁদের তরফে এসবের ব্যত্যয় ঘটবে না। মানুষ প্রথম পরিচিত মানুষ হিসেবেই, লিঙ্গ হিসেবে নয়। সামগ্রিকভাবে একজন ব্যক্তির সর্বাগ্রে পরিচয় মানুষ হিসেবে। আমরা সৌদি সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই এবং অগ্রগামী চিন্তা কিংবা সিদ্ধান্তের আলো সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করবে বলেই মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.