বিশ্ব পর্যটন দিবস-পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অবদান by বনরূপা

আজ ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার দ্বাদশ অধিবেশন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হয়। ওই অধিবেশনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রতিবছর সংস্থাটির সহযোগী একটি দেশ দিবসটি আয়োজন করবে। সেই থেকে বিশ্ব পর্যটন সংস্থার আহ্বানে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো 'ট্যুরিজম লিংকিং কালচারস।' পর্যটনকে আজ সারা বিশ্বে শিল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
তাই সহযোগী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করছে। জাতিতে জাতিতে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্য বিশ্ব পর্যটন সংস্থা কাজ করে আসছে। পর্যটন শিল্প দিন দিন বিশ্বব্যাপী গুরুত্ব পাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশের জাতীয় আয়ের বেশির ভাগই আসে এই পর্যটন শিল্প থেকে। সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ভুটান ছাড়া অন্য সব দেশই আমাদের দেশের চেয়ে বেশি আয় করছে এই পর্যটন শিল্প থেকে। আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে, পথে-প্রান্তরে ছড়িয়ে আছে অনেক পর্যটন স্থান। কিন্তু আমরা অনেকেই দেশের সব পর্যটন স্থানের অবস্থান জানি না। কঙ্বাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, বান্দরবান, রাঙামাটি, সিলেট, পাহাড়পুর প্রভৃতি স্থানও আমাদের কাছে দেশের প্রধান পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিত। পর্যটনের আনুষঙ্গিক বিষয়ে বাজার সৃষ্টির ফলে আমাদের দেশেও অর্থনৈতিক দিকে ঘটেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। দেশে আসছে প্রচুর বিদেশি মুদ্রা। পর্যটন শিল্প যে সম্প্রতি এক লাভজনক উদ্যোগে পরিণত হয়েছে তা পৃথিবীজুড়ে স্বীকৃত। বর্তমান বিশ্বে পর্যটন শিল্পকে বলা হয় প্যাকেজ শিল্প। পর্যটন শিল্প হলো পণ্যের মোড়কের মতো। অর্থাৎ সারাটা দেশ হলো মোড়ক আর পর্যটন স্থানগুলো হলো পণ্য। এখন পর্যটন শিল্প শুধু প্রণোদনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর রয়েছে বহু শাখা-প্রশাখা। পর্যটন শিল্পের মধ্যে আছে বিনোদন পর্যটন, স্বাস্থ্য পর্যটন, শিক্ষা পর্যটন, লোমহর্ষক অভিযাত্রিক পর্যটন, স্পোর্টস পর্যটন, আয়ুর্বেদিক পর্যটন, ধর্মীয় পর্যটন, সাংস্কৃতিক পর্যটন প্রভৃতি। অসীম সম্ভাবনাময় পর্যটন এই শিল্পকে কিভাবে দিকনির্দেশনা দিয়ে জাতীয় রাজস্ব আয় বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দেওয়ার সময় এখনই। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে অবহেলা আর দুর্নীতিতে পর্যটন করপোরেশন ভরপুর। এক পা এগোলে, পাঁচ পা পেছনে যায়। কঙ্বাজারের মতো নোংরা আর অপরিকল্পিত পর্যটনের স্থানে কিভাবে পর্যটক সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব? যদি এমন পরিস্থিতি আমরা দূর করতে না পারি, নামিদামি হোটেল-মোটেল খুলে দিলেই পর্যটকসংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়। সুন্দরবন একাই পর্যটন শিল্প এবং এখানকার পর্যটন শিল্পের বিকাশ দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দিতে পারে। অতএব, বিশ্ব পর্যটন দিবসে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ, পর্যটন স্থানগুলোর সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা ও পছন্দকে বিবেচনা করে পর্যটকসংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করুন। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সর্বোপরি দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের এখনই সজাগ দৃষ্টি দেওয়া উচিত। পর্যটন দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা, সেমিনার, পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, ইলেকট্রনিক মাধ্যমগুলোতে আলোচনা আর টক শো করেই যেন আমাদের কর্মযজ্ঞ শেষ না হয়। সততা, আন্তরিকতার সঙ্গে দেশপ্রেমকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়ার সময় উপস্থিত। আধুনিক পর্যটন আর্থসামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। এটি এখন বিশ্ব বাণিজ্যেরও অন্যতম অংশ এবং একই সময়ে অনেক উন্নয়নশীল দেশের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে।
বনরূপা

No comments

Powered by Blogger.