কুমিল্লা সিটি করপোরেশন-কুমিল্লাবাসী সৎ ও যোগ্য মেয়র চায় by গাজীউল হক

২০১২ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নবগঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আপিল নিষ্পত্তির শুনানি শেষে গেজেট প্রকাশ হয়ে গেছে। ভোটার তালিকাও তৈরি আছে। নির্বাচন যে দরজায় কড়া নাড়ছে, শহরের বিভিন্ন অলিগলিসহ প্রধান সড়কগুলোতে চোখ রাখলেই তা টের পাওয়া যাচ্ছে। সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থী এবং তাঁদের অনুসারীরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ভোটপ্রত্যাশীদের ফেস্টুন, পোস্টার ও ব্যানারে পুরো নগরে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। এখন কথা হলো, আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে কারা প্রার্থী হচ্ছেন। তাঁদের পরিচয় কী। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মেয়র পদে কাকে সমর্থন দিচ্ছে—বিতর্কিত না সজ্জন, সন্ত্রাসী না ভালো, কালোটাকাওয়ালা নাকি জনগণের নেতা—এ ধরনের নানা প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। বিশেষ করে, গত ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জে জনতার রায়ে যে ভোটবিপ্লব হয়েছে, তা নিয়ে বড় দুটি দলকে ভাবতে হবে। প্রার্থী সমর্থনের ক্ষেত্রে জনগণের চাওয়াকে হিসাবে নিতে হবে।
কুমিল্লায় সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে উভয় দলে যাঁদের নাম শোনা যায়, তাঁদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া অন্য সবাই কমবেশি নানা অভিযোগে অভিযুক্ত। আর যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, তাঁদের দলীয় সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে সমর্থনপ্রাপ্ত মেয়র পদপ্রার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচিত ও সমালোচিত ব্যক্তিরাই থাকবেন বলে মনে হয়।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) প্রথম নির্বাচনে ভোটাররা তথা কুমিল্লাবাসী সৎ, যোগ্য, সজ্জন ব্যক্তিকেই প্রথম মেয়র পদে দেখতে চান, যিনি আগামী প্রজন্মের কাছে সুন্দর শহর উপহার দেবেন, সন্ত্রাস ও টেন্ডারবাজমুক্ত শহর উপহার দেবেন। ১৮৬৪ সালের ৩০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ড ও ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সদর দক্ষিণ পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। চলতি বছরের ১০ জুলাই উভয় পৌরসভাকে একীভূত করে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৭ ওয়ার্ডের ওই করপোরেশনের নির্বাচনে এক লাখ ৬৯ হাজার ১৭৪ জন ভোটার রায় দেওয়ার জন্য প্রহর গুনছেন।
এখনো কোনো দলই মেয়র পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। এ কারণে দলীয় নেতা-কর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন। দলীয় কোন্দলই এই অবস্থার কারণ। উভয় দলে তীব্র কোন্দল রয়েছে। তবে বিভিন্ন সূত্রে ও সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থীদের কার্যক্রম দেখে আন্দাজ করা যাচ্ছে, কারা এ পদে প্রার্থী হতে চান।
আওয়ামী লীগের হয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হতে চান কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন। তিনি দলীয় সমর্থন পেলে সংসদ সদস্যপদ ছেড়ে দিয়ে প্রার্থী হতে আগ্রহী বলে প্রচার রয়েছে। সাংসদ নিজেও একাধিকবার এ প্রতিবেদকের কাছে এমন আভাস দিয়েছেন। প্রতি শুক্রবার রাতে দুটি ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বৈঠকে বসছেন। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বর্ষীয়ান নেতা আফজল খানও প্রার্থী হতে চান। ইতিমধ্যে তিনি শহরের বিভিন্ন সামাজিক উৎসবে অংশ নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি ওমর ফারুকও প্রার্থী হতে চান। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নিজের প্রার্থিতার কথা জানান দিয়ে ইতিমধ্যে ৩০ হাজার পোস্টার ও ৪৫০টি ব্যানার লাগিয়েছেন। স্থানীয় সাংসদ প্রাথী না হলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি নূর-উর-রহমান মাহমুদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার আহমেদও মেয়র পদে দাঁড়াবেন। কুমিল্লা পৌরসভার সর্বশেষ মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক, একই দলের সাধারণ সম্পাদক আমিন উর রশিদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুল হক চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।
যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া অন্যদের বর্তমান ও অতীতের কর্মকাণ্ডের কথা কুমিল্লাবাসী জানেন। তাঁদের কারও কারও বিরুদ্ধে দলীয় নেতা-কর্মীকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে শহরে অস্ত্র এনে সন্ত্রাসী বাহিনী সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। কারও পারিবারিক জনপ্রিয়তা এতটাই শূন্যের কোঠায় যে তিনি কীভাবে মানুষের কাছে ভোট চাইবেন। দুর্নীতির অভিযোগে গা ঢাকা দেওয়া ব্যক্তি কেমন করে জনতার মুখোমুখি হবেন। বিতর্কিত ও সমালোচিত টেন্ডারবাজদের পৃষ্ঠপোষক নেতা মেয়র হলে শহরের উন্নয়ন কেমন করে হবে। লোভী ও পরের ধনের দিকে যাঁর চোখ, তিনি মেয়র হলে তাঁর পরিবারের সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে নগরবাসী। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও দ্রুত বিচার আইনে সাজাপ্রাপ্তদের মদদদাতাকে কোনো দল মনোনয়ন দিলে শহরে অপরাধ ছড়িয়ে পড়বে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনী ফলাফলের দিকে উভয় দলকে নজর দিতে হবে। ওই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য, সামাজিক ও দলীয় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, এমন নেতাকে সমর্থন দিতে হবে। একজন সেলিনা হায়াৎ আইভী কুমিল্লায় না থাকলেও তাঁর কাছাকাছি নেতা উভয় দলকে ঠিক করতে হবে। তৃণমূল ও কেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয় করে একক প্রার্থী দিতে হবে (স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও)। বিতর্কিত কাউকে মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে।
গাজীউল হক: প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা।
gajiulhoqsohag@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.