কাল বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি সই-সুন্দরবনের পাশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না করার দাবি

নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছর পর কাল রোববার বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি সই হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) লিমিটেডের মধ্যে এ চুক্তি হবে।


এদিকে গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে দেশের ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিক সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ঝুঁঁকিপূর্ণ এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন না করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। এ জন্য পরিবেশজনিত প্রভাব ও জনমত যাচাই সাপেক্ষে অন্য কোনো সুবিধাজনক স্থান নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
যৌথ উদ্যোগে নির্মিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে প্রতিটি ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট হবে। কেন্দ্রটি চলবে আমদানি করা কয়লা দিয়ে। এর একটি ইউনিট বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই চালু করার পরিকল্পনা ছিল। এ-সংক্রান্ত চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে।
কয়লা আমদানির জন্য মংলা বন্দরের দুটি জেটি ব্যবহারে বন্দর কর্তৃপক্ষ রাজি না হওয়া, এনটিপিসির সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি নির্ধারণ এবং তাদের সঙ্গে পিডিবির দ্বিমত ইত্যাদি কারণে চুক্তি সই বিলম্বিত হয়।
এখন সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে মংলা বন্দরের জেটি ব্যবহারের ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন পাওয়া গেছে। বিদ্যুতের দামের বিষয়টির এখনো সম্পূর্ণ ফয়সালা হয়নি। তবে উভয় পক্ষ এ ব্যাপারে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। এর ভিত্তিতেই আগামীকাল চুক্তিটি সই হচ্ছে।
আগামীকাল বেলা ১১টায় বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত চুক্তি সই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই উপস্থিত থাকবেন। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চললে ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ এই কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হতে পারে।
১২ নাগরিকের উদ্বেগ: ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান স্বাক্ষরিত আবেদনে বলা হয়, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য রামপাল উপজেলাকে নির্বাচিত করায় আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এতে বিশ্ব ঐতিহ্যের ধারক পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন এবং এর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার যে প্রাথমিক পরিবেশগত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুকূলে ছাড়পত্র দিয়েছে, তাতে প্রকল্প এলাকাটি যে সুন্দরবনের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার চার কিলোমিটারের মধ্যে এবং বনের সীমানা থেকে ১০ কিলোমিটার বাফার জোনের মধ্যে অবস্থিত, তা স্পষ্ট।
বিশিষ্ট নাগরিকেরা উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের রামসার কনভেনশনের সচিবালয় সুন্দরবনের পাশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ তিনটি সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তাঁরা রামপালের বদলে অন্য কোনো স্থানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনের দাবি জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, সুলতানা কামাল, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, রাশেদা কে চৌধূরী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এম এ মতিন, আবু নাসের খান, সারা হোসেন, খুশী কবির, বদিউল আলম মজুমদার, ফারাহ কবীর ও ইফতেখারুজ্জামান।

No comments

Powered by Blogger.