দেশে অর্থনৈতিক সংকট নেই : প্রধানমন্ত্রী-শেখ হাসিনাকে আবার নির্বাচিত করার আহবান আশরাফের

দেশে কোনো রকম অর্থনৈতিক সংকট নেই বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ অনেক ভালো জায়গায় আছে এবং অর্থনীতি সচল রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে।৪০তম সমবায় দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, 'আমি আপনাদের জানাতে
চাই, অর্থনৈতিক অবস্থা প্রকট হয়নি। আমরা অর্থনীতি সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও আমরা অনেক ভালো জায়গায় আছি।'
দেশে তারল্য সংকট নেই দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, 'অনেকে বলেন অর্থ নেই, অর্থ নেই। কিন্তু মোবাইল ফোনের লাইসেন্স রিনিউ করে আমরা অনেক হাজার কোটি টাকা পেয়েছি। কয়েক মাস পর আরো কয়েক হাজার কোটি টাকা আসবে।'
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আগামী সাধারণ নির্বাচনেও শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় সৈয়দ আশরাফ পদত্যাগ করেছেন বলে যে গুজব রটেছিল সে বিষয়ে গত কয়েক দিনে মুখ না খুললেও গতকাল তিনি এ আহ্বান জানান।
দুই দিন বিদ্যুৎ ছাড়া থেকে দেখুক : সরকারি ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমালোচনা করে সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন নিবন্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিদু্যুৎ বিভাগকে বলেছি, যাঁরা আর্টিকেল লিখছেন_ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কী দরকার ছিল, তাঁদের লাইন দুই দিনের জন্য কেটে দিতে। আমাদের উৎপাদিত বিদ্যুতে এসি রুমে বসে লিখবে। দুই দিন বিদ্যুৎ ছাড়া থেকে দেখুক।'
শেখ হাসিনা দাবি করেন, এর আগে আর কোনো সরকার এত অল্প সময়ে এত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ করতে পারেনি। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'বিদ্যুতের দাম বাড়লে চিৎকার শুনি। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন লাইনের জন্যও খরচ আছে।'
সরকারি কর্মকর্তাদের গরমের সময় স্যুট ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পোশাক আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। গরমে স্যুট পরার দরকার নেই। শীতাতপ যন্ত্রের ব্যবহার পরিমিত করারও আহ্বান জানান তিনি।
বস্তিগুলোতে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'এগুলো আমরা কিছু দেখি, আবার কিছু দেখেও দেখি না। এই ছিন্নমূল মানুষগুলোকে তো রান্না করে খেতে হবে।'
সমবায় আন্দোলনে দারিদ্র্য নিরসন হবে : বাংলাদেশের সমবায় আন্দোলনকে বিশ্ব সমবায় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তুতি নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সমবায় সংস্থা ২০১২ সালকে সমবায় বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ প্রেক্ষাপটে আমি দেশের সমবায় আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক সমবায় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি; কারণ বাংলাদেশের রয়েছে সমৃদ্ধ সমবায় আন্দোলনের ঐতিহ্য।' তিনি আরো বলেন, সমবায় আন্দোলনে ব্যাপকভাবে দারিদ্র্য নিরসন হবে।
শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী করলে সোনার বাংলা গড়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাবে : আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাবে বলে মত প্রকাশ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, 'আমরা বাঙালি জাতি ধীর-স্থির অবস্থায় থাকি না। একটা সরকার আসার পর বৈধ ও অবৈধ পথে সরকারকে উৎখাত করতে চাই। এভাবে সোনার বাংলা হবে না।'
বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সমালোচনা করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, 'একটা ভঙ্গুর অবস্থা নিয়ে আমাদের সমবায় কার্যক্রম শুরু হয়। সব কিছু ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত। ওই সরকারের মূল মন্ত্র ছিল লুটপাট আর লুটপাট।' তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় নরসিংদীতে একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণকেন্দ্র করা হয় কিন্তু সেখানে গাভী বা দুধ কোনোটাই ছিল না।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মিহির কান্তি মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক মুশফেকা ইফফাৎ এবং জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি শেখ নাদির হোসেন লিপু। সমবায়ের মাধ্যমে উপকৃত নারী রহিমা বেগম অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে ২০০৯ ও ২০১০ সালের ১৮ জন ব্যক্তি এবং ২০টি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় সমবায় পুরস্কার দেওয়া হয়।
সমবায় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা মহানগর পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মেলায় অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন এবং সারা দেশে সমবায় মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

No comments

Powered by Blogger.