ঠোঁটকাটা বদনাম ঘোচাতে

ঠোঁটকাটা বদনাম অনেক মেয়েরই রয়েছে। তারা নাকি কথা শোনাতে কাউকে ছাড়ে না। কিন্তু জন্মগতভাবে যাদের ঠোঁটকাটার মতো অঙ্গবিকৃতি রয়েছে, তাদের দুর্গতি সমাজে আরও বেশি। সামাজিক সমস্যা, সৌন্দর্যহানি ছাড়াও এ ধরনের অঙ্গবিকৃতির কারণে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিকৃত চেহারা নিয়ে সমাজে এক প্রকার কৃপার পাত্র হয়েই তাদের দিন কাটাতে হয়।


অথচ এ ধরনের অঙ্গবিকৃতি কোনো ধরনের অভিশাপ বা কর্মফল নয়, জন্মগতভাবে। এটি উপরের ঠোঁটের ডান বা বামদিকে হয়ে থাকে। তবে কখনও কখনও ঠোঁটের উভয় পাশে কাটা থাকতে পারে। এগুলো যে কোনোটার সঙ্গে তালুকাটাও থাকতে পারে। যেমন_ শিশু মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে পারে না। টানার সময় দুধ উপরের দিকে উঠে নাক দিয়ে বেরিয়ে আসে। যখন কথা বলতে শেখে, কথা নাকে নাকে উচ্চারিত হয়। কানের সংযোগকারী নালি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না বলে এসব রোগীর কানে ইনফেকশন বা কানপাকা রোগ দেখা যায়। পরে শ্রবণশক্তি কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে এরা সামাজিক লাঞ্ছনার শিকার হয়ে ধীরে ধীরে আত্মকেন্দ্রিক ও অসামাজিক হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসার পূর্বশর্ত : ঠোঁটকাটা রোগীদের দাঁতের গঠনশৈলীতেও বেশ ত্রুটি থাকে। এসব রোগীর ঠোঁটের পাশাপাশি তালুকাটাসহ অন্য কোনো জন্মগত ত্রুটি আছে কি-না যেমন_ মলদ্বার, নাভি আঙুল, হৃৎপিণ্ড ইত্যাদি ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এসব রোগীর চিকিৎসায় 'রুল অব টেন' নামে একটি সূত্রের কথা প্লাস্টিক সার্জনরা বলে থাকেন। সূত্রমতে, রোগীর বয়স ১০ সপ্তাহ, ওজন ১০ পাউন্ড এবং রক্তে হিমোগ্গ্নোবিন ১০ গ্রাম হলে অপারেশন করার উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ জন্মের ঠিক পরমুহূর্তেই অপারেশন করার প্রয়োজন নেই।
চিকিৎসা : এক ধরনের শল্যচিকিৎসা জেড প্লাস্টি প্রয়োগ করে ঠোঁটের ত্বকে জোড়া দেওয়া বা সেলাই করা হয়। এখানে মুখমণ্ডলের মাংসপেশি পুনর্গঠন করা হয় এবং মুখগহ্বরের ভেতরের ত্বকেও সেলাই দেওয়া হয়। অপারেশনের মাত্র পাঁচ বা ছয় দিন পরই সেলাই কেটে দেওয়া হয়। যদি ওই রোগীর তালুকাটা থাকে তাহলে সাধারণত ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সে অপারেশন করা হয়ে থাকে। এসব রোগী মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে পারে না। ফলে প্রথম থেকেই চামচ দিয়ে খাওয়াতে হয়। এ ক্ষেত্রে অর্থোডেন্টিস্ট সার্জন তালুকাটা চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে একটা অস্থায়ী প্লেট বসিয়ে কাটা অংশ পূরণ করে থাকেন, যা দিয়ে অপারেশনের আগপর্যন্ত সাময়িকভাবে কাজ চলে। এসব রোগীর কানপাকা রোগ থাকলে চিকিৎসা করাতে হবে।
এসব রোগীর বেশি দেরিতে অপারেশন করালে নাকে নাকে উচ্চারণের প্রবণতা স্থায়ী হয়ে যায়। তাই সব কুসংস্কার আর ভয়ভীতি কাটিয়ে উপযুক্ত সময়ে ঠোঁটকাটা, তালুকাটা রোগীদের চিকিৎসা করানো উচিত।

অেধ্যাপক ডা. সাঈদ আহমেদ সিদ্দিকী

No comments

Powered by Blogger.