ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে জাতিসংঘের গভীর উদ্বেগ

রানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ। শুক্রবার এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে তারা। ওই প্রস্তাবনায় ইরানের পরমাণু সক্ষমতার বিষয়ে উত্থাপিত প্রসঙ্গগুলো স্পষ্ট করতে বলা হয়েছে। ইরান এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে বলেছে, আগের মতোই তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে।
এদিকে ইরান আন্তর্জাতিক মহল থেকে একঘরে হয়ে পড়েছে বলে দাবি করে একে 'নজিরবিহীনভাবে' হিসেবে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর : বিবিসি, এএফপির।
পাস হওয়া প্রস্তাবে ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপনের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এ ছাড়া পাস করা প্রস্তাব অনুযায়ী দেশটির পরমাণু সক্ষমতার বর্তমান অবস্থা পরিষ্কার করার ব্যাপারেও কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়নি আইএইএ।
সম্প্রতি আইএইএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান পরমাণু বোমার নকশা তৈরির ব্যাপারে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা চালিয়েছে। সংস্থাটির এ প্রতিবেদনের পর দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েই চলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইএইএ উদ্বেগ প্রকাশ করে এ প্রস্তাব পাস করল। ইরানের রাষ্ট্রদূত আইএইএর ওই প্রস্তাব দুঃখজনক, হতাশাব্যঞ্জক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। সংস্থাটিতে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আলি আসগর সোলতানিহে বলেন, আইএইএর ওই প্রস্তাব কেবল ইরানের অবস্থানই সুসংহত করবে। তিনি বলেন, 'আমরা আগের মতোই কর্মসূচি অব্যাহত রাখব।' বিশ্লেষকরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা তেহরানের বিরুদ্ধে আইএইএর কাছ থেকে যে ধরনের পদক্ষেপ আশা করেছিল তা পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, আইএইএর ওই পদক্ষেপে তারা খুশি, এমনকি হোয়াইট হাউস এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। ইরান প্রথম থেকেই বলে আসছে, তারা জ্বালানির জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা দাবি করছে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে নিন্দা জানানোর পর তারা আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিরক্ষা মহড়া শুরু ইরানের :পরমাণু স্থাপনায় আকাশপথে সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধের লক্ষ্যে চার দিনব্যাপী প্রতিরক্ষা মহড়া শুরু করেছে ইরান। গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এ মহড়া শুরু হয়েছে। দেশটির পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে জাতিসংঘ সংস্থার উদ্যোগের মধ্যে এ মহড়া শুরু হলো। রাজধানী তেহরানের কাছে একটি সামরিক ঘাঁটিতে বিস্ফোরণে প্রায় ১৭ সেনা নিহত হওয়ার ছয় দিন পরই এই সামরিক মহড়া শুরু করল ইরান।
ওই দুর্ঘটনায় ইরানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ কয়েকজন রেভলিউশনারি গার্ড সদস্য নিহত হন। ওই কর্মকর্তা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন।
জানা গেছে, সামরিক মহড়ায় ক্ষেপণাস্ত্র, উন্নত প্রযুক্তির বিমান বিধ্বংসী কামান এবং বিভিন্ন ধরনের রাডার ব্যবস্থার ব্যবহার পরখ করা হচ্ছে। মহড়ার মূল উদ্দেশ্য দেশের আকাশসীমায় বিশেষ করে পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে সম্ভাব্য হামলা ঠেকানো।
সর্বশেষ গত জুনে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভূমি থেকে ভূমিতে ক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র বানানোর কাজ এগিয়ে নিচ্ছে_ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) সম্প্রতি এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ২০০৩ সাল থেকেই ইরান এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
এরপরই ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলার ঘোষণা দেয়।
সম্প্রতি ইসরায়েলও একটি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। ইতালির সঙ্গে যৌথভাবে আকাশপথে সামরিক মহড়া দিয়েছে তারা। একই সময় নিজেদের দেশেও মহড়া দিয়েছে ইসলায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

No comments

Powered by Blogger.