বিআরটিসি-গণপরিবহনের চরিত্র ফিরিয়ে দেওয়া হোক

ণপরিবহন খাতে বিরাজ করছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। একদিকে পরিবহন সংকট, ত্রুটিপূর্ণ পরিবহন চলাচল, অন্যদিকে পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিজেদের মর্জিমাফিক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের জন্য বড় বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্যে স্বাধীন বাংলাদেশে বিআরটিসির জন্ম দেওয়া হয়েছিল, তা জনকল্যাণে ইতিপূর্বে ব্যাপক ভূমিকা রাখলেও কয়েক বছর ধরে বিআরটিসি গণপরিবহনের চরিত্র হারাতে বসেছে।
শুধু যাত্রী পরিবহন নয়, পণ্য পরিবহনেও বিআরটিসির ট্রাক ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। বিআরটিসিকে আবার চাঙ্গা করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও তা যেন হোঁচট খাচ্ছে এবং কেন খাচ্ছে তা দৃশ্যমান হওয়া সত্ত্বেও প্রতিকারের ব্যবস্থা জোরদার নয়। গত ১৯ নভেম্বর সহযোগী একটি দৈনিকে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দফায় দফায় বিআরটিসির বাস আসছে বটে, কিন্তু সেসবের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাড়া খাটতে। এর ফলে গণপরিবহনের চরিত্র হারাচ্ছে বিআরটিসি এবং এর জন্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে।
মহাজোট ক্ষমতা গ্রহণের পর বিআরটিসির দায়িত্ব পেয়েছেন মেজর (অব.) এস এম ইকবাল। তাঁর আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও বিআরটিসি কাঙ্ক্ষিত জনসেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, এটাই সত্য। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সরকারি এই প্রতিষ্ঠানকে গণপরিবহনে ভূমিকা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহর থেকে বিআরটিসি বাস সার্ভিস পর্যায়ক্রমে আবার চালু করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বেসরকারি বিভিন্ন পরিবহন সংস্থা কিংবা চক্র সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, বেসরকারি পরিবহন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শক্তিশালী একটি চক্রের কথায় কথায় ধর্মঘট, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের ফলে জনভোগান্তি বাড়ছে। জেলায় জেলায় বিআরটিসি বাস বন্ধে কিংবা নতুন করে যাতে এই সংস্থার কার্যক্রম শুরু হতে না পারে, সে জন্য নানামুখী চাপ অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে বিআরটিসির এক হাজারের বেশি গাড়ির বহর থেকে গণপরিবহনে যুক্ত বিআরটিসি বাসের সংখ্যা অর্ধেকেরও কম। গত বছর চীন ও কোরিয়া থেকে আনা ১৮০টি বাসের বেশির ভাগ ঢাকা কিংবা এর পার্শ্ববর্তী এলাকার গণপরিবহনে যুক্ত হলেও প্রাতিষ্ঠানিক ভাড়া খাটা বন্ধ হয়নি বিআরটিসির। বিআরটিসির বহরে আরো বাস যুক্ত হবে_এমন আভাস মিলেছে বটে, কিন্তু তা সাধারণ মানুষের উপকারে কতটা লাগবে_এ নিয়ে সন্দেহযুক্ত প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সব রকম চাপ উপেক্ষা করে বিআরটিসির গণপরিবহনের চরিত্র ফিরিয়ে দিতে হবে। এর সঙ্গে সেবার মান বৃদ্ধিসহ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে বিআরটিসিতে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, যার বিরূপ প্রভাব সংস্থাটির জন্য অভিশাপ হয়ে আছে। অনুসন্ধানক্রমে এর যথাযথ প্রতিকার জরুরি। বিআরটিসির ব্যবস্থাপনাগত সব রকম ত্রুটি সারিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার আওতায় আনতে হবে। গণপরিবহন সংস্থা বিআরটিসি তার হৃত চিত্র ফিরে পাক_এটাই প্রত্যাশা। সরকারি একটি সংস্থার সেবা দেশের সাধারণ মানুষ পাবে না, এর সুফল ভোগ করবে কোনো কোনো মহল, তা হতে পারে না। এই সংস্থাকে কার্যকর, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে আনতে পারলে জনদুর্ভোগ অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সব কিছুর ঊধর্ে্ব উঠে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.