আসামি গ্রেপ্তার নিয়ে ধূম্রজাল-পুলিশ বলছে, লোকমান হত্যাকাণ্ড অরাজনৈতিক!

রসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যা মামলায় মাহফুজ, সবুজ ও ফারুক নামের আরো তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বিভিন্ন সূত্র গ্রেপ্তারের বিষয় নিশ্চিত করেছে। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে দাবি করেন। পুলিশ সূত্র আরো দাবি করছে, তদন্তে একটি বিষয় ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, আর তা হচ্ছে_ এটি একটি অরাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, একক কোনো পরিকল্পনা এর পেছনে কাজ করেনি।


পুলিশ আরো বলছে, লোকমানের একাধিক প্রতিপক্ষ সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়েই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আর এই যৌথ চক্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় রাজনৈতিক দলের লোকই রয়েছে।
এদিকে তদন্তে অগ্রগতির দাবি জানিয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা এখন পর্যন্ত যেটা জানতে পেরেছে তা হচ্ছে, এই হত্যাকাণ্ড বা কিলিং মিশনে সরাসরি মোট ৯ জন ভাড়াটে খুনি অংশ নেয়। এর মধ্যে পাঁচজন ঢাকার ডাকাত শহীদ গ্রুপের সদস্য। এ ছাড়া ঘাতকদের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করে মামলার অন্যতম আসামি নূরুল ইসলাম। নরসিংদীর নূরুল ইসলাম ডিশ ও ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও মূলত অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। লোকমান হত্যাকাণ্ডে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহৃত হয়েছে।
তবে বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদের বরাত দিয়ে জানায়, গোয়েন্দা পুলিশ শুক্রবার গভীর রাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে মাহফুজ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সবুজ নামের আরেকজনকে একটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় এর আগে গ্রেপ্তার করা আশরাফুল সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মাহফুজের তথ্য পাওয়া যায়। আশরাফুল বলেছে, মাহফুজের গুলিতেই নিহত হয়েছেন লোকমান। তার বক্তব্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের সাতজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় কালের কণ্ঠের এ প্রতিবেদকের। ঢাকা থেকে তিন আসামির গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়ে তাঁরা বলেন, লোকমান হত্যা মামলার কোনো আসামি ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে কি না তাঁদের জানা নেই। বিষয়টি ডিএমপি কমিশনার ভালো বলতে পারবেন।
শনিবারের গ্রেপ্তার অভিযান সম্পর্কে জানতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদকে কালের কণ্ঠ থেকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ডিএমপি কমিশনারের মুখপাত্র ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, 'লোকমান হত্যাকাণ্ডের কোনো আসামি ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে অবগত নই।'
ডিএমপি সদর দপ্তরের উপকমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, লোকমান হত্যাকারীদের বিষয়টি ডিবি পুলিশ জানে। এ ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই।
ডিএমপির জয়েন্ট কমিশনার (ক্রাইম) ইব্রাহিম ফাতেমী জানান, লোকমান হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই। ডিএমপি কমিশনার অন্য একটি মিডিয়াকে ঢাকার খিলগাঁও এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন_এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, 'এটি সম্পূর্ণ ডিএমপি কমিশনারের এখতিয়ার। আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।'
এক প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, লোকমান হত্যার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাই বিষয়টি জানেন। তবে তাঁরা কৌশলগত কারণে তা স্বীকার করছেন না। সরকারের উচ্চ মহল থেকে এ ব্যাপারে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। এ কারণে কেউই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
গত ১ নভেম্বর রাতে নরসিংদীর পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর তাঁর ভাই কামরুজ্জামান এ ঘটনায় ১৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন, যাঁদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে নরসিংদী শহর যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল সরকার ছাড়াও সেলিম ও মাসুদুর রহমান টিপনসহ আরো অনেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার দুই নম্বর আসামি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মতিন সরকারকে বৃহস্পতিবার নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করার কথা শোনা গেলেও পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।

No comments

Powered by Blogger.