চট্টগ্রামে হারুন বাহিনীর তাণ্ডব-তিন দিনে আহত অর্ধশত বাহিনী প্রধানসহ আটক ৮ by মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন,

ট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলায় 'হারুন বাহিনী'র দৌরাত্ম্য বেড়েছে। প্রায় ২০০ সদস্যের এ বাহিনীর হাতে নাকাল হচ্ছে দুই উপজেলার কয়েকটি এলাকা ও বাজারের মানুষ। এদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি, অপহরণ, জায়গা দখলসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে সর্বশেষ একটি হামলার ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে গত শুক্রবার রাতে বাহিনীর প্রধান হারুনুর রশিদসহ আটজনকে আটক করেছে। গ্রেপ্তারের খবরে এলাকায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।


সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত তিন দিনে এ বাহিনীর হামলায় আহত হয়েছে কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তি। এদের মধ্যে সর্বশেষ হামলায় আহত আলী আকবর চৌধুরীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আলী আকবর মিরসরাইয়ের ১৪ নম্বর হাইতকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর ছোট ভাই। হারুন বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে গত শুক্রবার রাতে তিনি হামলার শিকার হন।
গতকাল শনিবার মিরসরাই-সীতাকুণ্ডের সীমানাবাজার বড়দারোগারহাটে সরেজমিনে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাহিনীর প্রধানসহ আটজনের গ্রেপ্তারের খবরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, এ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি মাসে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়।
হারুন বাহিনীর সর্বশেষ তাণ্ডব : সর্বশেষ গত শুক্রবার রাত ৮টায় মিরসরাইয়ের কমর আলী বাজারে এ বাহিনীর প্রায় অর্ধশত সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালায়। তারা আলী আকবর চৌধুরীকে উপর্যুপরি কুপিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় ড্রেনে ফেলে চলে যায়। আলী আকবর চৌধুরীকে শুক্রবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে অবস্থার অবনতি হওয়ায় গতকাল তাঁকে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি ট্রমা সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওই হামলায় শাহ আলম ও আনোয়ার হোসেনসহ আরো অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছে। তারা বাজারের একটি ওষুধের দোকান, একটি সারের দোকান ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত ব্যবসায়ী ও হাটুরেরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে।
মিরসরাই থানা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতেই পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাহিনীর প্রধান হারুনুর রশিদসহ আটজনকে আটক করে। আটককৃত অন্যরা হলো আবদুল মাবুদ খোকন, এমরান হোসেন রনি ওরফে ছোট রনি, সোহেল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, মো. সুমন, আবুল কালাম ও মো. শাহাবুদ্দীন।
অভিযোগে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে হারুন বাহিনীর সন্ত্রাসী দল বড়দারোগারহাট ও কমর আলী বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিল। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে হারুন বাহিনীর সদস্য সুমনের নেতৃত্বে বেলাল হোসেন, সাহাবউদ্দিন, ফিরোজ ও সোহেলসহ ১৫-২০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল আগ্নেয়াস্ত্র, রাম দা, চাইনিজ কুড়াল, হকিস্টিক নিয়ে কমর আলী বাজারে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় আহত হন প্রবাসী গোলাম নুর সুমন, বাজারের ব্যবসায়ী সেলিম উদ্দিন, মাসুদসহ আটজন।
এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দা ও হামলায় আহত গোলাম নুর সুমন বাদী হয়ে মিরসরাই থানায় একটি মামলা (নম্বর ১৫) করেন। থানায় মামলা দায়েরের খবরে ক্ষিপ্ত হয়ে শুক্রবার রাতেই ফের হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ হামলায় আহত আলী আকবর চৌধুরীর ভাই আজগর কবির চৌধুরী বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে মিরসরাই থানায় আরো একটি মামলা (নম্বর ১৮) করেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হারুন একটি সন্ত্রাসী দল গঠন করে কয়েকটি এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। গত তিন দিনে ওই বাহিনীর সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে। তাদের বাধা দেওয়ায় শুক্রবার রাতে তারা আমার ভাইকে কুপিয়ে ড্রেনে ফেলে যায়।'
হারুন বাহিনীর উত্থান : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে একজন ক্ষুদ্র পান দোকানি ছিলেন হারুন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে সরকারদলীয়দের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে তিনি গড়ে তোলেন একটি বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী।
কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রথম দিকে হারুন বাহিনীর আধিপত্য ছিল সীতাকুণ্ডের দারোগারহাট থেকে মহালঙ্কা বাজার পর্যন্ত। ক্রমেই বাড়তে থাকে তার দলের পরিধি। পরে মিরসরাইয়ের কমর আলী, দমদমা, নিজামপুর ও কমলদহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে তার বাহিনী।
মিরসরাই থানা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সন্ত্রাসী দলটির তৎপরতা বেড়ে যায়। দলের প্রধান হারুনের বিরুদ্ধে মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিজামপুর পুলিশ ফাঁড়ির একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, আতঙ্কে এলাকাবাসী এ বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে রাজি হয় না। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ, গাছ লুট, জায়গা দখলসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এ বাহিনীর সদস্যরা জড়িত।

No comments

Powered by Blogger.