পণ্যমূল্য by আলম শাইন

ষুধ কিংবা কিছু কিছু ভোগ্যপণ্য কিনতে গেলে হরহামেশা যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় আমাদের ছোট হলেও অনেক সময় এ নিয়ে বেশ বেগ পোহাতে হয়। বিষয়টি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে নয়। অতিসূক্ষ্ম একটি বিষয়, যা প্রতিনিয়ত ঘটছে এ দেশে। যার জন্য কোটি কোটি মানুষকে ঠকতে হচ্ছে দিনের পর দিন। আর সেটি হচ্ছে পণ্য বা ওষুধের মোড়কের গায়ের মূল্যতালিকা সংযোজন। বিশেষ করে ওষুধের প্যাকেটের গায়ে এক ধরনের হাস্যকর মূল্য


লেখা থাকে। যেমন_ ২০.০৭ টাকা অথবা ১২.৬৫ টাকা (ভ্যাটসহ) ইত্যাদি। মূল্যটা আমাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে যথাক্রমে ২১ টাকা, ১৩ টাকা হারে। এ হারে প্রতিটির খুচরা মূল্যই আমাদের টাকার অঙ্কে পরিশোধ করতে হচ্ছে। সচেতন ক্রেতাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। তাদের কাছ থেকে হয়তো দোকানি খুচরা পয়সাটা নেন না ঠিকই, তবে অধিকাংশ ক্রেতার ক্ষেত্রে খুচরা পয়সার পরিবর্তে এক টাকা হাতিয়ে নেন দোকানি। যদি দোকানি তেঁদড় প্রকৃতির হন তাহলে তো ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। উল্টো নিজেদের ছাড় দিয়ে আসতে হয় দোকান থেকে। অর্থাৎ নীরবে-নিভৃতে তা মেনে নিতে হচ্ছে। ইচ্ছা থাকলেও এটি নিয়ে টুঁ শব্দটি করার সুযোগ থাকে না কারও।
সাধারণত এ ধরনের ধোঁকাবাজি বা জালিয়াতি মানতে আমরা বাধ্য হচ্ছি খুচরা পয়সার সংকটের কারণে। উল্লেখ্য, এখানে খুচরা পয়সার সংকট বলা সমীচীন নয়। বলতে হচ্ছে খুচরা পয়সার প্রচলন দেশে নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক এক পয়সা থেকে দশ পয়সার কয়েন কিংবা সিকি-আধুলি এখন আর তৈরি করছে না (তৈরি করলেও সর্বসাধারণের কাছে তা পেঁৗছে না)। ধাতব মুদ্রা তৈরি না করার কারণও যে নেই তা কিন্তু নয়। এর প্রধান কারণ দেশে বর্তমানে পাঁচ, দশ, পঁচিশ, পঞ্চাশ কিংবা পঁচাত্তর পয়সার কোনো পণ্য নেই। যা এক যুগ আগেও ছিল। অবশ্য এক টাকার পণ্যও খুব একটা নেই। অন্যসব অঙ্কের সঙ্গে যোগ করে নিতে হয় এক টাকাকে। তবু বলা চলে এটার প্রচলন আছে। যার জন্য মুদ্রণও হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে দেশে এক টাকার নিচের ধাতব মুদ্রার প্রচলন নেই সেখানে ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের ওষুধের মোড়কের গায়ে কী করে টাকার অঙ্কের সঙ্গে পয়সা জুড়ে দেয়! তারা কি একবারও ভেবে দেখেছে যে, ভোক্তারা কীভাবে এ খুচরা পয়সা পরিশোধ করবেন? এটাকে আমরা কী বলব, অসাধুতা নাকি অসাবধানতা? হয়তো একটা জবাব আসতে পারে, এটি মূল্য সংযোজন কর। সে ক্ষেত্রে বলতে হয়, মূল্য সংযোজন কর পরিশোধ করার জন্য ভোক্তা কি নিজে মুদ্রা তৈরি করে নেবেন ? নাকি তিনি 'এক টাকা' পুরিয়ে দেবেন? কোনটি করলে ভালো হয় তা আমাদের জানা প্রয়োজন। যদি শেষের কাজটি করতে হয় সে সুবাদে বলতে হয়, এমনিতেই তো দুর্মূল্যের বাজারে প্রাণ ওষ্ঠাগত, তার ওপর বাড়তি পয়সার খেসারত হিসেবে এক টাকা যোগ করে নেওয়া 'বোঝার ওপর শাকের আঁটি' চাপিয়ে দেওয়ার মতো নয় কি ? না হয় এক টাকা একবার দিলেই তাতে ল্যাঠা চুকে যেত, কিন্তু সেটি হচ্ছে না এ ক্ষেত্রে। বোঝাটি থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর। টেনে যেতে হচ্ছে দেশের গরিব-দুঃখী মানুষকে। এ নীরব দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার সময় কি এখনও আমাদের হয়নি? এই তোগলকি কাণ্ড থেকে কি আমাদের উদ্ধার করার কেউ নেই?
alamshine@ymail.com

No comments

Powered by Blogger.