ইয়াঙ্গুন নিয়ে কূটনৈতিক চাল ওবামার

মিয়ানমার নিয়ে বড় ধরনের জুয়া খেলায় নেমেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তাঁর ধারণা, মিয়ানমারকে সত্যিকারের রাজনৈতিক সংস্কারের পথে ফেরাতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। এ ধারণা সত্য হলে ৫০ বছরের বিচ্ছিন্নতার পর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দারুণভাবে লাভবান হবে দেশ দুটি। মিয়ানমার সম্প্রতি কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত দিলেও দেশের সামরিক জান্তার ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা।
সে ক্ষেত্রে ইরান, সিরিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার মত এবারও ব্যর্থ হতে পারেন ওবামা।
গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে চাপ দিতে হিলারি ক্লিনটনকে মিয়ানমারে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের অর্থ হচ্ছে প্রতিশ্রুতিশীল বৃহৎ বাজারের দরজা খুলে যাওয়া। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রকল্পের পরিচালক আর্নেস্ট বাওয়ার বলেন, 'এটা দুর্দান্ত সুযোগ। এমন একটি অর্থনীতির দ্বার খুলতে যাচ্ছে, যেখানে ৪০ বছর ধরে উন্নত দেশগুলোর হাত পড়েনি।' প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ ও কাঠের সমৃদ্ধ উৎস মিয়ানমার। একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও মিয়ানমারের গুরুত্ব অপরিসীম। দীর্ঘ দিন থেকে মিয়ানমার চীনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগী।
মিয়ানমারের জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেশটির বেসামরিক নেতারা হিলারির সফরকে দেখছেন বৃহত্তর রাজনৈতিক পুনর্বাসন সূচনার সুযোগ হিসেবে, যার ফল হিসেবে তাঁদের ওপর জারি করা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার বা শিথিল করা হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের মতো অর্থনৈতিকভাবে ফুলে-ফেঁপে ওঠার সুযোগ পাবে দরিদ্র এ দেশটি।
তবে দুই পক্ষের জন্যই এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া অনেকটা জুয়া খেলার মতোই। মার্কিন চাপে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংস্কার কয়েক দশক ধরে চলা সামরিক নিয়ন্ত্রণের স্বভাবকে কতটা পাল্টাতে পারবে, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডেভিড স্টেইনবার্গ বলেন, 'সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে ধনী দেশ হওয়ার কথা ছিল মিয়ানমারের। সামরিক বাহিনী সে সম্ভাবনা ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমানে সংস্কারের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সত্যিকারের চেষ্টা চলছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভব সব কিছুই করা উচিত।'
মিয়ানমারের সাবেক এক রাজনৈতিক বন্দি এবং বর্তমানে ইউএস ক্যাম্পেইন ফর বার্মা অ্যাডভোকেসি গ্রুপের প্রধান অং দিন হিলারির সফরকে স্বাগত জানালেও আশঙ্কা করছেন, ঘোষিত সংস্কারগুলো হয়তো অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তিনি বলেন, 'আমি আশা করি প্রশাসন একে (সফর) গুরুত্বের সঙ্গে নেবে এবং অন্য রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে ইতিবাচক সাড়া দেবে। তারা সংস্কার অব্যাহত রাখবে না_এমন আশঙ্কাও রয়েছে।' তবে মিয়ানমারে মার্কিন মিশনের সাবেক প্রধান অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক প্রিসিলা ক্ল্যাপ বলেন, এ সফরের মধ্যে দিয়ে স্পষ্টভাবেই (মিয়ানমারকে) অনুমোদনের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হলো। ২০ বছর ধরে সংস্কারের যেসব দাবি জানানো হচ্ছিল, তা হঠাৎ করেই ঘটতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে যথাযথ সাড়া দিতে হবে। তবে এখনই অবরোধ তুলে নেওয়া ঠিক হবে না।
এর আগেও মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে সংস্কারের দিকে ফেরানোর চেষ্টা চালানো হয়। ১৯৯৮ সালে সংস্কারের বিনিময়ে সহায়তার উদ্যোগ নেয় বিশ্বব্যাংক। তবে ব্যর্থ হয় সে উদ্যোগ। একই বছর প্রথম অবরোধ আরোপ এবং পরে দফায় দফায় এর আওতা বাড়িয়ে এ চেষ্টা চালায় যুক্তরাষ্ট্রও। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাও অবরোধ দেয়। তবে সেগুলো ফলপ্রসূ হয়নি।
মিয়ানমারের সঙ্গে ওবামা প্রশাসন নতুন করে যোগাযোগ শুরু করে ২০০৯ সালে। সম্প্রতি সেনা সমর্থিত বেসামরিক সরকার রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নেওয়ার পর এ যোগাযোগ আরো জোরদার হয়। সূত্র : রয়টার্স, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.