ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদানের বিরুদ্ধে জেরুজালেমে রক্ষণশীল ইহুদিদের ব্যাপক বিক্ষোভ
‘ডেমোনেস্ট্রেশন অব দ্য মিলিয়ন’ নাম পাওয়া এ বিক্ষোভে ইসরায়েলের সব আলট্রা–অর্থোডক্স পক্ষের মধ্যে বিরল এক ঐক্য দেখা গেছে।
গতকাল চাবাদ নামের একটি আলট্রা–অর্থোডক্স গোষ্ঠীর র্যাবাইরা (ইহুদি ধর্মীয় নেতা) ওই বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন। চাবাদের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক পরিচয় নেই।
গতকাল বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২০ বছর বয়সী তরুণ ইয়েহুদা হির্শ বলেন, ‘আজ সব আলট্রা–অর্থোডক্স গোষ্ঠী একত্র হয়েছে। আমরা কোনো পরিস্থিতিতেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেব না।’
ইয়েহুদা আরও বলেন, ‘আমরা দুই বিপরীত পক্ষ।’ এর মধ্য দিয়ে হির্শ মূলত বুঝিয়েছেন, আলট্রা–অর্থোডক্স পক্ষ একদিকে আর অন্যদিকে সেনা ও রাষ্ট্রপক্ষ।
ইয়েহুদা বলতে থাকেন, ‘সর্বশেষ লড়াইয়ের ১০ বছর পর প্রথমবারের মতো সবাই একত্র হয়েছেন। আমরা যেমন হামাসে যোগ দেব না, তেমনি আমরা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতেও যোগ দেব না।’
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম বলেছে, গতকাল আলট্রা–অর্থোডক্সদের অনেকে ট্রেনে বিক্ষোভস্থলে গেছেন। এ জন্য রেলস্টেশনগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় ছিল।
পুলিশ জেরুজালেম যাওয়ার প্রধান সড়ক হাইওয়ে এক এবং শহরের অন্যান্য সড়ক বন্ধ করে দেয়। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যা যেন বেশি না হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। বিক্ষোভকারীদের অনেকে পায়ে হেঁটে শহরের উদ্দেশে রওনা হন।
ইসরায়েলে বহু বছর ধরে আলট্রা–অর্থোডক্স ইহুদিদের সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগ দেওয়ার আদেশ নিয়ে জটিলতা চলছে।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন তাঁদের সেনাবাহিনীতে আলট্রা–অর্থোডক্সদের বাধ্যতামূলক যোগদান থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন, তবে তা নিয়ে কোনো আইন হয়নি।
সত্তরের দশক থেকে আলট্রা–অর্থোডক্স ইহুদিদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। তখনো তাদের অন্তর্ভুক্ত করার কয়েকটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
পরে গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধন শুরু হলে এতে অংশ নেওয়ার জন্য লাখ লাখ ইসরায়েলি নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয়। এমন অবস্থায় আলট্রা–অর্থোডক্স ইহুদিদের সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদানের বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়।
গত সপ্তাহে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি না হওয়া কয়েকজন আলট্রা–অর্থোডক্স শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে সামরিক পুলিশ। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
গতকাল ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল টুয়েলভ নিউজের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক নতুন কমিটির চেয়ারম্যান বোয়াজ বিসমুথ একটি নতুন খসড়া আইন প্রস্তুত করেছেন।
নতুন পরিকল্পনাটি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। কারণ, এটিকে চলতি বছরের শুরুতে সরকার থেকে পদত্যাগকারী আলট্রা–অর্থোডক্স পক্ষগুলোকে শান্ত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কমিটির–পূর্ববর্তী চেয়ারম্যান ইউলি এডেলস্টেইন জটিলতা তৈরি করায় তাঁকে সরিয়ে দিয়ে বিসমুথকে কমিটির প্রধান করা হয়। লিকুদ পার্টির দলের আরেকজন নেতা এবং আলট্রা–অর্থোডক্স ইহুদিদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিষয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি করেছিলেন।
![]() |
| জেরুজালেমে আলট্রা-অর্থোডক্স ইহুদিরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: রয়টার্স |

No comments