ভোটের আগে মামদানি-কুমোর এগিয়ে থাকার লড়াই

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের মেয়র নির্বাচন ঘিরে জোরেশোরে চলছে প্রচার–প্রচারণা। বিভিন্ন জরিপ এবং আগাম ভোট পড়ার হার জোহরান মামদানির জয়ের আভাস দিলেও, হাল ছাড়ছেন না তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো। নির্বাচনে এগিয়ে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দুজনই। মামদানি ও কুমো—দুজনেরই ভাষ্য, শেষ হাসিটা কে হাসবেন, তা বলা যাচ্ছে না এখনই।

মেয়র নির্বাচনে ভোট ৪ নভেম্বর। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এক ভিডিও বার্তায় মামদানি বলেন, ‘মানুষ বলছে, “আমরাই জিতছি”, “খেলা শেষ হয়ে গেছে”, “কুমোর জারিজুরি শেষ”—এসব কথায় বিশ্বাস করবেন না। যেসব ধনকুবের শতকোটিপতি আমাদের অর্থনীতি নিয়ে কারচুপি করেছে আর নির্বাচন কিনে নিতে চেয়েছে, তারা সহজে হাল ছাড়বে না।’

ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী মামদানির এ আশঙ্কা একেবারে অমূলক নয়। বৃহস্পতিবার তাঁর ভিডিও বার্তায় ধনকুবের বিল আকম্যানকে দেখানো হয়। শতকোটিপতি এই ব্যক্তি মামদানির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে ১৫ লাখ ডলার দিয়েছেন। এমনই আরেকজন সাবেক মেয়র ও ধনকুবের মাইকেল ব্লুমাবার্গ। স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমোর পক্ষে প্রচারের জন্য তিনি ঢেলেছেন আরও ১৫ লাখ ডলার।

কুমোর পেছনে অর্থ থাকলেও মামদানির আছে জনসমর্থন। সবশেষ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এমারসন কলেজ, পিআইএক্স–১১ ও দ্য হিল পোলের জরিপ অনুযায়ী, প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে ২৫ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন মামদানি। ভোটারদের ৫০ শতাংশ তাঁর পক্ষে। এরপরই ২৫ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন কুমো। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া আরও পেছনে। তাঁর জনসমর্থন ২১ শতাংশ।

এর আগের বিভিন্ন জরিপের ফলও ছিল অনেকটা একই। সব কটিতেই প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে দুই অঙ্কে এগিয়ে ছিলেন মামদানি। যেমন মারিস্ট ইউনিভার্সিটির জরিপে কুমোর চেয়ে ১৬ পয়েন্টে, কুইনিপিয়্যাক ইউনিভার্সিটির জরিপে ১০ পয়েন্টে এবং ম্যানহাটান ইনস্টিটিউটের জরিপে ১৬ শতাংশ এগিয়ে ছিলেন মামদানি। এসব জরিপ দিয়েই ভোটের দিন পর্যন্ত সমর্থকদের উজ্জীবিত রাখতে চাচ্ছেন তিনি।

এবারের নির্বাচনের আরও বড় একটি বিষয় হলো, আগাম ভোট পড়ার হার। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিউইয়র্কে আগাম ভোট দিয়েছেন প্রায় ৪ লাখ বাসিন্দা। এদিকে ইঙ্গিত করে বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের হারলেম এলাকায় দেওয়া ভাষণে কুমো বলেন, ‘বিভিন্ন জরিপকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কী বলছে, তা তারা নিজেরাও জানে না। কারণ, এর আগে তারা এত বেশি আগাম ভোট পড়ার হার দেখেনি।’

আগাম ভোট দেওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগেরই বয়স ৫৫ বছরের ওপরে। জরিপ অনুযায়ী, বয়স্ক ভোটারদের সমর্থন মামদানি ও কুমো—দুই পক্ষের প্রতিই প্রায় সমান সমান। তবে মামদানির হাতিয়ার তরুণ বা জেন–জিরা। তাঁদের বড় সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। এমনই একজন ২২ বছর বয়সী এলিসা এফ। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, মামদানি জিতলে, আমার জীবন ভালো হবে।’

মারিস্কের জরিপ বলছে, তিন ভাগের দুই ভাগ ভোটার মনে করেন, নিউইয়র্ক শহর ভুল দিকে যাচ্ছে। এই সুযোগ নিতে পারেন রাজনীতিতে নতুন ৩৪ বছর বয়সী মামদানি। বৃহস্পতিবার জ্যাকসন হাইটসসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালানোর কথা ছিল তাঁর। এদিন বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ ও প্রচার চালিয়েছেন কুমোও।

নির্বাচনে যিনিই জিতুন, নিউইয়র্ককে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে বলে মনে করেন নাগরিক অধিকার নেতা আল শার্পটন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে। নিউইয়র্কবাসী যে রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ, তা আমাদের বিভক্তকারী পানির চেয়ে শক্তিশালী।’

ছবি আঁকার একট অনুষ্ঠানে জোহরান মামদানি। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে
ছবি আঁকার একট অনুষ্ঠানে জোহরান মামদানি। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে। ছবি: এএফপি

No comments

Powered by Blogger.