'শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো': ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে প্রতিক্রিয়া চীনের
বিশ্লেষক এবং ব্যবসায়ীরা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে উদ্বিগ্নঃ
চীনের উপর ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি আর্থিকভাবে ধ্বংসাত্মক বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও তীব্রতর করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।শুল্ক যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার সাথে সাথে টোকিও থেকে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত শেয়ার বাজারগুলো আরও অস্থির হয়ে উঠেছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্পের ঘোষণা করা মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে চীন প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলার পর ট্রাম্পের নতুন এই হুমকি সামনে এলো। ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন- 'চীন যদি ২০২৫ এর ৮ই এপ্রিলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করে , তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৯ই এপ্রিল থেকে কার্যকরভাবে চীনের উপর ৫০% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে। উপরন্তু, আমাদের সাথে চীনের অনুরোধকৃত সমস্ত আলোচনা বাতিল করা হবে।' যদি ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর তার নতুন শুল্ক কার্যকর করেন, তাহলে চীনা পণ্যের উপর মার্কিন শুল্ক সম্মিলিতভাবে ১০৪% এ পৌঁছাবে। এতে কেবল আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য দামই বাড়বে না, বরং চীনকে অন্যান্য দেশে সস্তা পণ্য সরবরাহ করতে এবং বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে আরও গভীর সম্পর্ক স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করতে পারে।
চীনা জনগণ চিন্তিত, কিন্তু তাদের দেশের প্রতি আস্থা আছেঃ
বেইজিংয়ের মানুষ বলছে , তাদের কাছে এতো শুল্কের হিসেবে রাখা কঠিন। তবে ঝড় মোকাবেলা করার জন্য নিজের দেশের সরকারের উপর আস্থা রাখছে তারা। ৩৭ বছর বয়সী চীনা নির্মাণকর্মী উ কি মনে করেন - 'ট্রাম্প আজ এক কথা বলেন, কাল আরেক কথা বলেন। যাই হোক, তিনি কেবল সুবিধা চান, তাই তিনি যা খুশি বলতে পারেন। '৩০ বছর বয়সী পল ওয়াং, যিনি ইউরোপে নেকলেস, ব্রেসলেট এবং টাং স্টাডসহ আনুষাঙ্গিক গহনা বিক্রি করেন, তিনি বলছেন -অতিরিক্ত ৫০% মার্কিন শুল্কের পরে ইউরোপীয় বাজার এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিযোগিতার বাজার কোন দিকে যায় সেদিকে তিনি নজর রাখবেন। জেসি হুয়াং এবং ইয়াং আইজিয়া, যাদের কোম্পানিগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাসায়নিক আমদানি করে, তারা বলেছেন যে এই শুল্ক যুদ্ধের জেরে তাদের হয়তো দোকান বন্ধ করতে হতে পারে। হুয়াং উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছেন , " কোম্পানি থেকে ছাঁটাই হলে আমি হয়তো আর কোনও চাকরিও খুঁজে পাব না।"
চীনের সামনে একাধিক বিকল্প রয়েছেঃ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াশিংটনকে পাল্টা আক্রমণ করার জন্য চীনের কাছে এখনও বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ফেন্টানাইলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা স্থগিত করা, কৃষি পণ্যের উপর উচ্চ কোটা স্থাপন করা। ২০২৪ সালে চীনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট পণ্য বাণিজ্য ছিল আনুমানিক ৫৮২ বিলিয়ন ডলারের , যা এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পণ্যের শীর্ষ বাণিজ্যকারী করে তুলেছে।২০২৪ সালে চীনের সাথে পণ্য ও পরিষেবা বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ২৬৩ বিলিয়ন থেকে ২৯৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সংলাপের সম্ভাবনা এড়িয়ে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। লিন বলেছেন- ' আমি মনে করি না যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তা আন্তরিক সংলাপের জন্য আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ । যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই সংলাপে অংশগ্রহণ করতে চায়, তাহলে তাদের সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক সুবিধার মনোভাব গ্রহণ করা উচিত। 'মঙ্গলবার হংকংয়ে, যেখানে স্টক মার্কেট অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা বেশি ছিল, প্রধান নির্বাহী জন লি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ শুল্ক আরোপকে "গুন্ডামি" বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে এই "কঠোর আচরণ" বিশ্বব্যাপী এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং বিরাট অনিশ্চয়তা ডেকে এনেছে। লি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় হংকং তার অর্থনীতিকে চীনের উন্নয়নের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করবে, আরও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করবে। শুল্কের প্রভাব মোকাবেলায় হংকং আরও বিদেশি কোম্পানি এবং মূলধন আকর্ষণ করবে , সেইসাথে স্থানীয় উদ্যোগগুলিকে সহায়তা করবে।
সূত্র : এপি নিউজ
চীনের ওপর ট্রাম্পের অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকি
বেইজিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এই নতুন সিদ্ধান্তের ফলে চীনা পণ্যের ওপর আমেরিকার শুল্ক বেড়ে দাঁড়াল ৮৪ শতাংশে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ। এর বাইরে আছে একটি ১০ শতাংশের ‘গ্লোবাল ট্যারিফ’, যা বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। এর ফলে চীনের জন্য আমেরিকার মোট শুল্ক দাঁড়াল ৯৪ শতাংশে।
ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যান্ডেলে এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট করে লেখেন, ‘চীন আমাদের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এর আগে থেকেই তারা রেকর্ড পরিমাণ শুল্ক, অ-আর্থিক প্রতিবন্ধকতা, বেআইনি কোম্পানি ভর্তুকি এবং দীর্ঘমেয়াদি মুদ্রা কারসাজির মাধ্যমে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতা ও অন্যায় করে এসেছে। আমি আগেই সতর্ক করেছিলাম, যেকোনো দেশ যদি আমাদের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তার জবাবে আমরা আরও বেশি পরিমাণ শুল্ক আরোপ করব।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে আরও বলেন, ‘যদি চীন ৮ এপ্রিল-এর মধ্যে তাদের অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে ৯ এপ্রিল থেকে ৫০ শতাংশ নতুন শুল্ক কার্যকর হবে।’ বিশ্বব্যাপী শুল্ক যুদ্ধের মধ্যে বেইজিংয়ের সংলাপের অনুরোধের বিষয়ে চীনের সঙ্গে সমস্ত আলোচনা বন্ধ করার হুমকিও দিয়েছেন ক্ষুব্ধ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি আরও বলেন, ‘যেসব দেশ মার্কিন আমদানি শুল্কের প্রেক্ষিতে প্রতিশোধমূলক শুল্ক চাপায়নি, তাদের আলোচনার সুযোগ দেয়া হবে। এছাড়াও, আমাদের সঙ্গে চীনের সমস্ত আলোচনা বাতিল করা হবে!’
আমেরিকার ওপর শুল্ক আরোপকারী দেশগুলোর ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক আরোপের নির্দেশের পর গত ৭২ ঘণ্টা ধরে বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজার এবং তেলের দামে অনবরত পতন দেখা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘এই শুল্ক শুধুই পারস্পরিক ভিত্তিতে—যারা আমাদের সঙ্গে যেমন করবে, আমরাও তাদের সঙ্গে তেমন করব।’
ট্রাম্প আক্রমণাত্মক সুরে বলেন, ‘চীন কয়েক দশক ধরে আমেরিকার বিরুদ্ধে শুল্কের নামে চরম অন্যায় করে আসছে।’ চীনের পাল্টা পদক্ষেপে তারা অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের সমান। তবে এই ঘটনার আগেই বেইজিং সতর্ক করেছিল, এই পারস্পরিক শুল্ক যুদ্ধে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির সংঘাত শুরু হতে পারে, যা হবে ‘বেদনাদায়ক’ এবং ‘কারও লাভ হবে না’। সূত্র: এনডিটিভি

No comments