সেরিব্রাল পালসি ও কিছু কথা by ডা. এম এ হক

সেরিব্রাল পালসি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারের একটি, যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক উভয় সমস্যাই দেখা দেয়। এই রোগে স্থায়ীভাবে শিশুর পেশির নড়াচড়া এবং অঙ্গবিন্যাসকে প্রভাবিত করে, যা শিশুকে আজীবন অক্ষম করে রাখে।

সেরিব্রাল পালসি হলো গর্ভাবস্থায়, জন্মের সময় বা জন্মের পরপরই মস্তিষ্কের ক্ষতি বা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ না ঘটার ফলে সৃষ্ট  রোগসমূহের একটি। এই রোগে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, শেখার সমস্যা, বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা, মৃগীরোগ এবং অনিচ্ছাকৃত বিভিন্ন পেশি নড়াচড়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

কারণ: জিনগত সমস্যা; মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহের অভাব; শিশুর মস্তিষ্কে আঘাত ইত্যাদি কারণে এই রোগ হতে পারে।
লক্ষণ: ঘাড় শক্ত না হওয়া, বধিরতা, ঝাপসা দৃষ্টি, চলাচলের সমস্যা, বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা, শক্ত পেশি, খুব শক্ত বা খুব ফ্লপি পেশি টান, পেশির সমন্বয় এবং ভারসাম্যর অভাব, কম্পন, অনিচ্ছাকৃত ঝাঁকুনি, ধীরে নড়াচড়া, হাঁটতে অসুবিধা, শরীরের বিভিন্ন নার্ভের সমস্যা, কথা বলতে অসুবিধা, মস্তিষ্ক বিকাশে বিলম্ব, চিবানো-খাওয়া বা চুষতে অসুবিধা, গিলতে অসুবিধা, নতুন কিছু শিখতে অসুবিধা, হামাগুঁড়ি দেয়া বা উঠে বসাতে অসুবিধা হওয়া, শুনতে অসুবিধা হওয়া, খিঁচুনি (মৃগীরোগ), চোখের অস্বাভাবিক নড়াচড়া, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, অস্বাভাবিক স্পর্শকাতরতা, মূত্রাশয়ের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো অন্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি।

প্রতিকার: নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারের কারণে যেহেতু সেরিব্রাল পালসি ঘটে সেহেতু আমাদেরকে আগে শিশুর পিতা-মাতার পরিবারের জেনেটিক হিস্ট্রি সংগ্রহ করতে হবে। উভয় পরিবারের জেনেটিক হিস্ট্রি থেকে শিশুর নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তখন সে অনুযায়ী ওষুধের মাধ্যমে শিশুর ইমিউনিটি সিস্টেমকে নেগেটিভ প্রভাব মুক্ত করতে হবে। অতঃপর ওষুধের মাধ্যমে ইমিউনিটি সিস্টেমকে সক্রিয় করে তুলতে হবে। এর সঙ্গে কার্যকরী খাবার এবং প্রয়োজনীয় ব্যায়ামের সহযোগিতা নিতে হবে। কোনো অঙ্গের বাহ্যিক সমস্যা থাকলে প্রয়োজনীয় থেরাপির সহযোগিতা নিতে হবে। এভাবে সমন্বিত চিকিৎসার ফলে ধীরে ধীরে শিশুর নিউরোডেভেলপমেন্ট ঘটবে এবং শিশু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ পাবে।
অতএব, আমরা যেন এ সকল শিশুকে অযতœ অবহেলায় না রেখে সঠিকভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদান করলে এ সকল শিশু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। ফিরে আসতে পারে সমাজের মূলস্রোতে।

লেখক:  ডা. এমএ হক, পিএইচ. ডি, এম. ফিল, ডিএইচএমএস। গবেষক ও চিকিৎসক (ক্রনিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার)।
চেম্বার: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট এন্ড রিসার্চ সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রিন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭১২-৪৫০ ৩১০


No comments

Powered by Blogger.