শপথ– ওদের মৃত্যুদ- না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকব

‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নাগরিকত্ব বাতিল না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে সোচ্চার থাকব/ রাজাকার আলবদরদের সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাব সবাই’ এভাবেই শপথ নিল মহাসমাবেশে যোগ দেয়া লাখ-লাখ দেশপ্রেমিক মানুষ।
হাত তুলে শপথে বলা হয়, ‘আমরা শপথ করছি ’৭১এ যে সকল ঘৃণ্য রাজাকার, আলবদর, গণহত্যা ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের মৃত্যুদ- না হওয়া পর্যন্ত গণমানুষের নেতৃত্বে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। জামায়াত-শিবিরসহ ধর্মভিত্তিক সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার-আলবদর-আলশামসসহ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নাগরিকত্ব বাতিল না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে সোচ্চার থাকব। ’৭৫এর পর যেসব যুদ্ধাপরাধী, আলবদর, রাজাকারদের জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হয় তাদের ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের দাবিতে কাজ করব। ইসলামী ব্যাংক, ইবনেসিনা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফোকাস ও রেটিনা কোচিং সেন্টার বয়কট করব। ওদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের সন্তানদের পড়াশোনা করতে পাঠাব না। মনে রাখতে হবে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আয় দিয়ে আমাদের দেশে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। শিশুদের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী বৃষবৃক্ষ রোপণ করছে। তাই তাদের বয়কট করতে হবে।
রাজাকার আলবদরদের সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করব। জামায়াত শিবিরের পক্ষ থেকে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার আহ্বান মানেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এ রকম রাষ্ট্রদ্রোহিতার সঙ্গে যারা যুক্ত ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানাব। যুদ্ধাপরাধী-জামায়াতের পরিচালিত নয়াদিগন্ত, আমারদেশ, সংগ্রাম, সোনার বাংলা ব্লগ বয়কট করব। অফিস কিংবা বাসায় যুদ্ধাপরাধীদের দ্বারা পরিচালিত পত্রিকা রাখব না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণমাধ্যমগুলোতে যথাযথ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী, তাবেদারদের বয়কট করতে হবে। জামায়াত-শিবিরকে বাসা ভাড়া না দেয়ার জন্যও সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।’
যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত গণমঞ্চ তৈরি করে দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে মহাসমাবেশের ঘোষণাপত্রে। প্রজন্ম চত্বর থেকে সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবি জানিয়ে বলা হয়, ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে আমাদের দৃপ্ত শপথ ধরে রাখতে। সেই সঙ্গে সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। সন্ধ্যা ছয়টায় শাহবাগের মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে হলুদ হেডব্যান্ড পরা ব্লগার ও অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট-এর ব্যানারে মূল আয়োজকরা এ ঘোষণা দেন। শপথবাক্য পাঠ করান ব্লগার ও মহাসমাবেশের সভাপতি ইমরান চৌধুরী।
কাদের মোল্লার বিচারের রায় প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়, কাদের মোল্লার অপরাধে মৃত্যুদ- হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও আদালত তাকে প্রাপ্য শাস্তি না দিয়ে দেশবাসীকে হতাশাগ্রস্ত করেছে। এ রায় ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দেশরক্ষায় সবাইকে অবিচল থাকারও আহ্বান জানানো হয়। জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়- যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া ঘোষণা থেকে জামায়াত-শিবির ও রাজাকারদের দেয়া হুমকিকে প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়; যারা এ হুমকি দিয়েছে তাদের গ্রেফতার করতে হবে। এ জন্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত আলোকচিত্র এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি করেন আন্দোলনকারীরা।
জামায়াতের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহযোগিতা, আশ্রয়দাতা ও বিচার বানচালকারীদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, আমাদের এই জাগরণ গণজাগরণে পরিণত করতে হবে। চলমান আন্দোলন বেগবান ও সুসংগঠিত করারও আহ্বান জানানো হয় সকলের প্রতি। ঘোষণাপত্রে বলা হয়- ‘আপনারা নিজ নিজ এলাকায় আন্দোলন ছড়িয়ে দিন। রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে সকলেই সোচ্চার হোন।’

No comments

Powered by Blogger.