বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় ॥ থেমে নেই ওদের পাকিস্তানী প্রভুরা by শাহজাহান মিয়া

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে দেশী-বিদেশী নানা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টির সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নস্যাত করে অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম রায় গত ২১ জানুয়ারি ঘোষণা করা হলো।
স্বাধীনতার ৪১ বছর পর এই ঐতিহাসিক রায় বাঙালী জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের। একটি বিরাট মাইলফলক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে শূরার সাবেক সদস্য বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই রায় ঘোষণা করেন। হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো আটটি অপরাধের সাতটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল মাওলানা আবুল কালামকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন। বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ১৪ জনকে হত্যা, ৩ নারীকে ধর্ষণ, ৯ জনকে অপহরণ, ১০ জনকে আটক, ৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ১৫টি বাড়িতে লুটপাট, ৯ জনকে ধর্মান্তরকরণ, অনেক মানুষকে দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ অজ্ঞাত অনেক লোকের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এই রায় দেশব্যাপী স্বাধীনতার চেতনা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও দেশের শহর-নগর-বন্দরসহ সর্বত্র সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে এসে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করে। আনন্দে উদ্বেলিত মানুষ একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ানোর ছবি প্রায় সকল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও এই দৃশ্য আন্তরিকভাবে পরিবেশন করে। নিঃসন্দেহে, এই যুগান্তকারী রায় জাতিকে একটি অতি ঘৃণ্য কলঙ্কজনক অধ্যায় থেকে মুক্তির পথে একধাপ অগ্রসর করল। রায়টি নতুন প্রজন্মের সদস্যদের মন অনাবিল আনন্দে ভরে দিয়েছে। তাদের মধ্যে আশার আলো ছড়িয়েছে। একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধীদের নানাবিধ লোমহর্ষক অপকর্মের কাহিনী সম্পর্কে নিজেদের আত্মীয়স্বজনের কাছে শুনে এবং বিভিন্ন পত্রিকায় বা মিডিয়ার মাধ্যমে এই মানুষ নামের অমানুষগুলোর নারকীয় কর্মকা-ের বিবরণ জেনে তাদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল। তাই সঙ্গতকারণেই এই রায় তাদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীন-সার্বভৌম সত্তাকে শক্তিশালী করে তা নতুন আলোর ছটায় আরো উদ্ভাসিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন উজ্জীবিত করে তুলতে পারে পুরো জাতিকে। নতুন প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে সে ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে একথা বলা মোটেই বাহুল্য নয় যে, তাদের প্রত্যয় বাঙালীর মুক্তির পতাকাকে চিরদিন রাখবে অনেক উচ্চতায় দেদীপ্যমান। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের দৃঢ়তারও প্রকাশ ঘটেছে। প্রচ- প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও দেশের তরুণ সমাজসহ আপামর জনসাধারণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যে কঠোর ও কঠিন তাও প্রমাণ হয়েছে এই রায়ের মাধ্যমে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। গত নির্বাচনে দেশের তরুণরা ব্যাপকভাবে আওয়ামী লীগে ভোট দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে তাদের রায় প্রদান করে। সর্বোপরি শত বাধা ও হুমকিধমকির মুখেও মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা জেগেছে এবং তাদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে।
একাত্তর সালে ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের সাবেক রুকন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ হওয়ায় তার নিজ জেলা ফরিদপুরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী রায় ঘোষণার পর পরই মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ ফরিদপুরের সর্বস্তরের মানুষ আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাচ্চু রাজাকারের হাতে নিহত ও নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, পলাতক এই ঘৃণ্য খুনি ও ধর্ষককে ধরে এনে এ সরকারের মেয়াদেই তার ফাঁসির অদেশ কার্যকর করলে তারা শান্তি পাবেন।
একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারের দাবিতে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠিত হয়। এই মহীয়সী নারীর সাহসিকতা নতুন প্রজন্মকে নতুন করে সত্য জানতে উন্মুখ করে তুলেছিল। ঐ বছরের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচার অনুষ্ঠানের জন্য গণআদালতের আয়োজন করা হয়েছিল। ১৯৯২ সালের ঐ ঐতিহাসিক দিনটিতে আনন্দ-উল্লাসে উদ্বেলিত তরুণ প্রজন্মের হাজার হাজার সদস্যসহ লাখ লাখ মানুষ স্বতঃফূর্তভাবে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচার প্রত্যক্ষ করার জন্য সোহরাওয়ার্দী ময়দানে জমায়েত হয়েছিল। গত ২১ জানুয়ারি বাচ্চু রাজাকারের প্রাণদন্ডের রায় ঘোষণার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গণমানুষের দাবির প্রকাশ ঘটাতে ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ অনুষ্ঠিত ঐ প্রতীকী বিচারের পরিপূর্ণতা লাভের পথ সুগম হলো। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি একটি গণদাবিতে পরিণত হয়েছিল।এই রায়ের পর শিশু-নারী ও এদেশের গর্ব বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখ মানুষের আত্মা এবং সম্ভ্রমহারানো দুই লক্ষাধিক অসহায় মা-বোনের মনও কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। মানুষকে অল্প সময়ের জন্য হয়ত বিভ্রান্ত করা যায়। ক্ষণিকের জন্য মিথ্যা প্রতিষ্ঠার প্রয়াসও নেয়া যায়। কিন্তু সত্য ও ন্যায়কে কখনই স্তব্ধ করা যায় না। উড়িয়ে দেয়া যায় না। সত্য তার আপন মহিমায় চিরভাস্বর হয়ে থাকবেই।
তাই দেরিতে হলেও এই ঐতিহাসিক রায় জাতির জন্য দায়মুক্তির প্রয়াস। প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশের নামী-দামী পত্র-পত্রিকা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারকে তারা সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র আরো বলেছে, তবে এ ধরনের বিচার হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। যুক্তরাজ্যও বিচার কাজকে সমর্থন করার কথা জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। রায়ের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেন, মিডিয়াতে প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদ দেখে মনে হয়েছে এদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাশিত রায় পেয়েছে। জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. আলব্রেক্ট কোঞ্জ বলেন, প্রত্যেক দেশের একটি বেদনাময় ইতিহাস থাকে। জার্মান নাগরিক হিসেবে ট্রাইব্যুনাল নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। কারণ, এ রায় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ফরাসী রাষ্ট্রদূত মাইকেল ত্রিনক্যুইয়ার বলেন, জাতির দীর্ঘদিনের কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সমাপ্তি জরুরী ছিল। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে বলে তারা মনে করেন।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির বিজয় ছিল অত্যন্ত গৌরবের। কিন্তু পাকিস্তানীদের এদেশীয় কিছু দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠন করে। হায়েনারূপী পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে বাঙালী নিধনযজ্ঞ শুরু“ করে। ২৫ মার্চ কালরাতে একমাত্র ঢাকা শহরেই ৪০ সহস্রাধিক নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। এভাবে তাদের ঘৃণ্য হত্যাকা- চলতেই থাকে। নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ, আওয়ামী লীগের সমর্থক ও বুদ্ধিজীবী কেউ রক্ষা পায়নি তাদের হিংস্র নখরের থাবা থেকে। জামায়াতের গড়া রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের সদস্যরা পাকিস্তানীদের সঙ্গে তাদের অপকর্মের ঘনিষ্ঠ দোসর হয়। নানা কারণে দীর্ঘদিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু“ করা যায়নি। এ বেদনা জনগণকে সহ্য করতে হয়েছে। পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচার কাজ শুরু“ হলেও স্বার্থান্বেষী মহল নানা প্রশ্ন তুলতে থাকে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম বানচাল করতে তারা ইউরোপ ও আমেরিকায় তাদের পক্ষে অপতৎপরতা চালানোর জন্য বিপুল টাকা ব্যয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টসহ কিছু পশ্চিমা নামী-দামী পত্রিকায় প্রভাব বিস্তার করে বিচারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রকাশে সমর্থ হয়। এদিকে দেশের অভ্যন্তরে তলে তলে বিএনপির সমর্থন পেয়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা পুলিশ ও পথচারীদের ওপর চালাতে থাকে অকস্মাৎ চোরাগুপ্তা হামলা। অন্যদিকে, জামায়াত এবং বিএনপির পরীক্ষিত বন্ধু পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা (আইএসআই)-র লোকজন চালাতে থাকে তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত ধারায়। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের বিরোধীদলের নেতারা গোলাম আযমসহ জামায়াতের অন্য যেসব নেতা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারাধীন তাদের বাঁচাতে এখনও তৎপর। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে পাকিস্তানের বিরোধীদলের নেতাদের বক্তব্য হলো, গোলাম আযম এবং তার দলের অন্য নেতারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করে পাকিস্তানের অখ-তা রক্ষার কাজ করতে গিয়ে তারা আজ বিচারের মুখোমুখি। বাংলাদেশে তাদের বিরুদ্ধে বিচার চলার সময় পাকিস্তান সরকারের নীরবতাকে ‘অপরাধ’ বলে আখ্যায়িত করেছে তারা। পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ)-এর চেয়ারম্যান এবং মোতামীর আলম-এ-ইসলামীর মহাসচিব সিনেটর রাজা জাফর উল হক এ মাসের প্রথমদিকে একটি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, “দেশের (পাকিস্তানের) অখ-তা রক্ষায় যারা নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিলেন, তাদের সাহায্য করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বাংলাদেশে আটক নেতাদের মুক্তি কেবল করুণার ওপর নির্ভর করতে পারে না। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রভাব খাটিয়ে গোলাম আযমদের মুক্ত করা। এটিই পাকিস্তানের জনগণের দাবি।” রাজা জাফর দাবি করেন, রাজনীতিতে ভিন্নমতাবলম্বী হওয়ার কারণেই বাংলাদেশে গোলাম আযমদের গ্রেফতার করা হয়েছে। জাতিসংঘকে এ বিষয়টি দেখা উচিত। জাফর আটক ব্যক্তিদের ধর্মীয় দলের নেতা দাবি করে বলেন, “ওআইসিও তাদের মুক্তির প্রয়াস চালাতে পারে।” বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভারতের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করার ধৃষ্টতা দেখিয়ে ঐ পাকি (নাকি পাপি) নেতা বলেন, যেসব বাংলাদেশী নেতা ওই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের (নাকি পাপিস্তানের) পক্ষে কাজ করেছিলেন তাদের মুক্ত করা আমাদের পাকিস্তান সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের আমির সাঈদ মুনওয়ার হাসানও সংবাদ সংস্থাটিকে গোলাম আযমদের একাত্তরের ভূমিকাকে অখ- পাকিস্তানের পক্ষে দেশপ্রেমমূলক দায়িত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি দাবি করেন, আটক নেতাদের ইসলামের প্রতি ভালবাসার জন্য শাস্তি পেতে হচ্ছে। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদ গুল দাবি করেন, বাংলাদেশের ওপর ভারতের প্রভাবের জন্যই গোলাম আযম এবং অন্য নেতারা আজ কারাগারে। তাদের মুক্তির ব্যাপারে পাকিস্তানের সব প্রভাবশালী মহলের সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো উচিত। তাই অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়েই বলতে হচ্ছে যে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ঘৃণ্য পাকিস্তানীরা এখনও কিভাবে চিত্রিত করার দুঃসাহস দেখায়! তাই বিচারাধীন জামায়াত নেতাদের মধ্যেও কেউ কেউ বলতে সাহস পেয়েছিল যে, বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই।
এরিমধ্যে, পর্যটকের ছদ্মাবরণে তুরস্কের ১৪-সদস্য বিশিষ্ট একটি আইনজীবী প্রতিনিধিদল গত ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ঢুকে পড়েছিল। আমাদের গোয়েন্দাদের গোলক ধাঁধায় ফেলে তুরস্কের প্রতিনিধিদল ঢাকায় চারদিন অবস্থান করে প্রকারান্তরে গুপ্তচরবৃত্তি করে গেছে বলে অনেকের ধারণা। তাদের কীর্তিকলাপ ছিল অবিশ্বাস্য। বিএনপি-জামায়াতের কয়েক বুদ্ধিজীবী ও একজন আইনজীবী তাদের সঙ্গে দেখা করেন। তারা নিজেদের মানবাধিকার কর্মী বলে পরিচয় দিলেও তারা আসলে ছিল তুরস্কের আইনজীবী। একজন ছিল বেলজিয়ামের। তবে তারা আসলে ছিল তুর্কী মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য। এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুলাহ গুল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের কাছে এক চিঠি দিয়ে গোলাম আযমকে ফাঁসি না দেয়ার দাবি করেছিলেন। সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবীসহ দেশের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ এটাকে শুধু কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী নয়, এটিকে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বলে মন্তব্য করেছিলেন। জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের বন্ধুরা যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তৃর্কী প্রেসিডেন্টের চিঠি তারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ। গত শতব্দীতে বিশ্বের প্রথম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল তুরস্কে। ১৯১৯ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত তুরস্কে ১৫ লাখ অর্মেনীয়কে হত্যা করা হয়। এখন তারাই বাংলাদেশের গণহত্যাকারীদের বিচার বন্ধের দাবি জানাচ্ছে। গূঢ় রহস্য হচ্ছে, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সফলভাবে সম্পন্ন হলে আর্মেনীয়রাও গণহত্যার বিচার দাবি করবে; আর এটাই এখন তুরস্কের প্রয়াত মহান বীর কামাল আতাতুর্কের উত্তরাধীকারীদের মাথা ব্যথার কারণ।
বাচ্চু রাজাকার পলাতক বলে তার ফাঁসির রায় ঘোষিত হওয়ার পরও জামায়াত-শিবির এবং তাদের দোসররা তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে তারা নিশ্চয়ই বসে থাকবে না। সুযোগ বুঝে তারা যেকোন সময় যেকোন ধরনের মারাত্মক আঘাত হানতে পারে। তাই সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন জরুরী।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.