আহমদ শরীফ গবেষণার বিস্তৃত পরিধি by সাইফুজ্জামান

আহমদ শরীফ বিরলপ্রজ লেখক। তাঁর সাহিত্যে পাণ্ডিত্য, মুক্তবুদ্ধি ও চি্ন্তা ও অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদের প্রতিফলন ঘটেছে। যুক্তিবাদী দর্শন, রাজনীতি ও গভীর জীবনবোধ আশ্রিত তাঁর রচনায় মুক্তপথের দিকনির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়।
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ গবেষণায় তিনি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। মধ্যযুগ সাহিত্যের বিশাল ভুবনে যে বিচিত্রতা ও গভীরতা রয়েছে তা ড. আহমদ শরীফ উনিশ শতকের বাঙালী শিতি সমাজের দৃষ্টিগোচর করেন। প্রাচীন পুঁথি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ থেকে তিনি তাঁর গবেষণার রসদ সংগ্রহ করেছেন।
বাংলা সাহিত্যেও আহমদ শরীফের স্থান কাল থেকে মহাকালে পরিব্যাপ্ত। উপমহাদেশের সাহিত্যেও প্রধান ব্যক্তিত্বরূপে তাঁর আবির্ভাব ও পরিচিতি। আহমদ শরীফ রচিত উলেস্নখযোগ্য গ্রন্থ বিচিত্র চিনত্মা (১৯৬৮), চট্টগ্রামের ইতিহাস স্বদেশ অন্বেষা (১৯৭০), জীবনে সমাজে সাহিত্যে (১৯৭০), সৈয়দ সুলতান তার গ্রন্থাবলী ও তার যুগ (১৯৭২), যুগ যন্ত্রণা (১৯৭৪), মধ্যযুগের বাংলা ও বাঙ্গালী সাহিত্য (১৯৭৮), কালের দর্পণে স্বদেশ (১৯৮৫), বাংলা ভাষা সংস্কার আন্দোলন (১৯৮৬), কালিক ভাবনা (১৯৭৪), বাঙ্গালীর চিনত্মা চেতনার বিবর্তন ধারা (১৯৮৭), বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চালচিত্র (১৯৯০), মানবতা ও গণমুক্তি (১৯৯০), বাংলা, বাঙ্গালী ও বাঙ্গালিত্ব (১৯৯২), সংস্কৃতি (১৯৯২), প্রগতির বাধা ও পন্থা (১৯৯৪), সময় সমাজ মানুষ (১৯৯৫), বিশ শতকে বাঙ্গালী (১৯৯৮)।
ড. আহমদ শরীফ ছিলেন যুক্তিবাদী। যুক্তির মাধ্যমে বুদ্ধি ও মুক্তির প্রণোদনা তাঁর রচনায় বিসত্মৃত। তাঁর পিতৃব্য আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ কতর্ৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপহৃত ছয় শ' পুঁথির মধ্য থেকে তিনি তাঁর গবেষণার রসদ সংগ্রহ করেছেন। তিনি পুঁথির শব্দ শনাক্ত করে ও সঠিক অর্থ খুঁজে পুঁথির ব্যাখ্যা, টীকা, ভাষ্য নির্ণয় করেছেন। আহমদ শরীফ সম্পাদিত প্রথম পুঁথি গ্রন্থ বাহরাম খানের লায়লী মজনু কাব্য (১৯৫৭) বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত। আহমদ শরীফ সম্পাদিত পুঁথি সাহিত্যের মধ্যে স্মরণযোগ্য আলাউলের তোহফা (১৯৫৮), সিকান্দারনামা (১৯৭৭), মুহম্মদ খানের সত্যকলি বিবাদ সংবাদ (১৯৫৯), মুহম্মদ কবীরের মধু মালতী (১৯৫৮), জয়েনউদ্দীনের রসুল বিজয় (১৯৬৪), মুজাম্মিলের নীতিশাস্ত্র বার্তা (১৯৬৫), শারারিদ খানের গ্রন্থাবলী (১৯৬৬), আফজল আলীর নসিহতনামা (১৯৬৯), দোনা গাজীর সয়ফূলমুলক বদিউজ্জামাল (১৯৭৫), সৈয়দ সুলতানের নবী বংশ (১৯৭৮), রসুলচরিত (১৯৭৮), শেখ মুতালিবের বিফায়তুল মুসলিস্নন (১৯৭৮)।
ড. আহমদ শরীফ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সীমানা চিহ্নিত করেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থ বিচিত্র চিনত্মায় অনত্মর্ভুক্ত বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের খসড়া চিত্র মধ্যযুগের ইতিহাস চিত্র প্রবন্ধে মধ্যযুগের বাংলা ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য (১৯৮৫)-এ সাহিত্যের বিপুল ঐশ্বর্য উন্মোচিত হয়েছে। বাঙ্গালী ও বাঙ্গলা সাহিত্য (১৯৭৮, ১৯৮৩)তে হিন্দু মুসলমান সাহিত্যিকদের মিলিত প্রয়াস কীভাবে আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে তার যথাযথ মূল্যায়ন ও গভীর অনুসন্ধান করেছেন আহমদ শরীফ। নৃতাত্তি্বক, ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সামাজিক বৈশিষ্ট্য অনুদঘাটন করার দুরূহ কর্ম ড. শরীফ সম্পাদন করেছেন।
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে যে বিবর্তন সূচিত হয় তা ড. আহমদ শরীফ চিত্রিত করেছেন। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে চিনত্মা-চেতনার ধারা অংশে তিনি দরিদ্র মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। সুপ্রাচীনকাল থেকেই দেখা যায় দেশে বা সমাজে নিঃস্ব, মজুর, প্রানত্মিক চাষী, চিরদরিদ্র, বৃত্তিজীবী ছিল হাজারে নয় শ' নিরানব্বই জন। শাহ সাম ও চিল বিসত্মৃত অনত্মরাল কচিত কেউ, আর ছিল বেনে মুৎসুদ্দী গোষ্ঠী পতি গ্রাম্য সর্দার, টাউট এবং শিক। পুরোহিত ও সার কিছু ধূর্ত শ্রেণীর লোক ছিল যারা এ যুগের সংজ্ঞায় মধ্য শ্রেণী। কাজেই প্রাচীনকাল থেকেই সমাজে ঐশ্বর্যমান মানুষ ছিল, ছিলেন রাজা, অমাত্য ও উচ্চ পদের রাজ কর্মচারীরাই। এরাই ছিলেন মানুষের জানমাল গর্দানের মালিক দ-মু-ের অধিকারী (বাঙ্গালীর চিনত্মা চেতনার বিবর্তন ধারা পৃ-১১)
মানুষের অন্ধবিশ্বাস, ভাগ্যনির্ভরতা ও নিয়তিবিদ্ধতা আহমদ শরীফ প্রত্য করেছেন। মানুষের কর্মেই যে মুক্তির পথ খোলা আছে, মতামত প্রকাশ করতে তিনি তাঁর রচনায় সাধারণ মানুষকে প্রণোদনা যুগিয়েছেন। সত্যকে আবিষ্কার ও কর্মে উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়াসী ছিলেন ড. আহমদ শরীফ। কর্মের মাধ্যমে মানুষ বেঁচে থাকে, বাঁচার শক্তি ও উপাদান আহরণ করে। এ বিষয়টি তিনি সঞ্চারিত করেছেন পাঠকের মধ্যে। বাঁচার লড়াই ও মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সাধারণ মানুষকে তিনি গ্রথিত করেছেন। তদবীরে তকদীর বদলানো যায়_ এ বিশ্বাস মানুষ কখনও হারায়নি। তাই ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মানুষ জ্ঞান, বিশ্বাস ও শক্তি অনুসারে চিরকাল প্রয়াস চালিয়েছে এবং তা করেছে অদৃষ্ট বিধিলিপি বা কপালের লিখন অমোঘ, অখ-নীয় বিশ্বাস করে। মানুষ যে কেবল প্রকৃতির ও প্রাকৃত শক্তির কাছে অসহায় তা নয়, প্রবল দুর্জন মানুষের পীড়ন পাত্র সে। (মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিবর্তন ধারা পৃ: ১১১)।
তাঁর রচনার সিহংভাগ দেশ চিনত্মা, জাতিসত্তার স্বকীয় সীমানা চিহ্নিত। উনিশ ও বিশ শতকের সাহিত্যিকদের সাহিত্য ভাবনা, দর্শন ও ইতিহাস কেন্দ্র করে ও বাংলা সাহিত্যের অর্জন ও উপলব্ধি ধারণ করেও আহমদ শরীফ অগ্রসর হয়েছেন। বঙ্কিম ভাবনার মূল জায়গা থেকে আহৃত জ্ঞান ও বিষয়কে ধারণ করেও আহমদ শরীফ রচনা করেছেন বঙ্কিম মানস ও বঙ্কিম বীৰা, অন্য নিরিখে। বঙ্কিমের বক্তব্যের সাথে তিনি একাত্ম হতে পারেননি। হিন্দুত্ববাদ ও মুসলিমবিদ্বেষী বঙ্কিমের ভাবনা নিয়ে ড. আহমদ শরীফ দ্বিমত পোষণ করেছেন। উদ্ধৃতি :
১. বঙ্কিম চন্দ্র যা লিখেছেন তা কেবল হিন্দু ও হিন্দু মানীর উন্নতির জন্যই (বিচিত্র চিনত্মা পৃ. ৩১২)। অন্য প্রবন্ধে বঙ্কিম সাহিত্যের যথাযথ মূল্যায়ন উঠে এসেছে। বঙ্কিম মানস (১৯৬০) ও বঙ্কিম বীৰা অন্য নিরিখে (১৮৭৫) প্রবন্ধে তিনি বঙ্কিম সাহিত্যের মৌল প্রতিপাদ্য বিশেস্নষণ করেছেন। বঙ্কিম মানস-এ বঙ্কিমের নেতিবাচক ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুত্ববাদ ও মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য বঙ্কিমকে কীভাবে সাম্প্রদায়িক লেখক হিসেবে চিহ্নিত করে তা প্রবন্ধে বিশেস্নষায়িত হয়েছে। ড. আহমদ শরীফ উদার ভাবনা ও মানবকল্যাণ থেকে বিচ্ছিন্ন বঙ্কিমকে মূল্যায়ন করতে লিখেছেন : 'বঙ্কিম ছিলেন যুরোপীয় জীবন মহিমায় মুগ্ধ'। কিন্তু তনি সম্বিৎ হারাননি। তাই তিনি জীবনের সাধনা ও আবাহন করেছেন জীবনব্যাপী নিজের জন্য নয়, বাঙালী হিন্দুর জন্য... তাই তিনি খিড়কি পথেই যুরোপের অবদান, অঞ্জলি ভরে গ্রহণ করলেন... তাই শাড়ি সিঁদুর পরা মেম সাহেবই তার আদর্শ নারী। তেমনি মর্যাদায়, সাহসে ও পৌরম্নষে দৃপ্ত ইংরেজ সিভিলিয়ানই তার আদর্শ (বিচিত্র চিনত্মা পৃ. ৩১১)।
তিনি বঙ্কিম সাহিত্যের সামগ্রিকতা অস্বীকার করেননি। বঙ্কিম প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেও ড. শরীফ প্রতিভা অন্বেষা, বঙ্কিম সাহিত্য ভাবনা, একীভূত হয়েছেন। তিনি বঙ্কিম বীৰা অন্য নিরিখে তে বঙ্কিমকে ইতিবাচক ভাবনায় উপস্থাপন করেন। বিধবা বিবাহ ও হিন্দুত্ববাদ এড়িয়ে বঙ্কিম যেখানে অগ্রসর হয়েছেন সে স্থানটুকু এড়িয়ে য়ুরোপীয় সাহিত্যের প্রভাবে তার সমৃদ্ধি লাভকে অস্বীকার করেননি ড. শরীফ। উদ্ধৃত করা যেতে পারে :
স্বদেশের ও স্বজাতির প্রেমিক ও সেবক বঙ্কিম প্রতীচ্য আমলে জাতি গঠনের দায়িত্ব স্বেচ্ছায়, সানন্দে ও সাগ্রহে নিজের হাতে গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্কিমের লেখনী তাই স্বজাতির চিত্তবোধন, হিতসাধন, ল্য চিনত্মন ও গৌরব কথন কর্মে উৎসর্গিত হয়েছিল। (প্রত্যয় ও প্রত্যাশা পৃ. ১৭৪)। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও পর্যটকের চোখে বাঙালী চরিত্রের নেতিবাচক ধারণার প্রতিভাস ল্য করা যায়। চোর, মিথ্যেবাদী, ভীরম্ন, পরশ্রীকাতর ও ঈর্ষাপরায়ই বাঙালীকে আহমদ শরীফ সমতায় ধারণ করেছেন। বাঙালী চরিত্রের বহুমাত্রিকতা আহমদ শরীফ তাঁর রচিত গ্রন্থ বাঙালী ও বাঙলা সাহিত্য (১ম ও ২য় খ-), বাঙলা, বাঙালী ও বাঙালিত্ব, সংস্কৃতি ও নির্বাচিত প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন। এদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে ব্রিটিশ ও পাকিসত্মান শাসকের শোষণের বিরম্নদ্ধে সংঘটিত সব আন্দোলনে বাঙালীর অভূতপূর্ব সংগ্রাম ইতিহাসে অনন্য মহিমায় উৎকীর্ণ। তাই বাঙালীর আবেগ ও চরিত্রের দৃঢ়তা সব ছাপিয়ে বাঙালীকে দ্রোহী হিসেবে শুধু চিহ্নিত করেছে তাই নয়, সত্য ও ন্যায়ের পথে তার অগ্রসরমানতার দীর্ঘ যাত্রা ইতিহাসে গৌরবের আসনে সমাসীন করেছে। বাঙালী চরিত্রের বৈপরীত্যে, দ্বান্দি্বকতায় ও বৈচিত্র্যে আহমদ শরীফ এমন এক মত বাঙালীকে খুঁজে পান যে বাঙালী আমাদেরও চেনা।
বাঙালী ভাবপ্রবণ ও কাল্পনাপ্রিয়। উচ্ছ্বাস ও উত্তেজনাতেই এর প্রকাশ। তাই বাঙালী যখন কাঁদে তখন কেঁদে ভাসায়। আর যখন হাসে তখন সে দাঁত বের করেই হাসে। যখন উত্তেজিত হয়, তখন আগুন জ্বালায়। তার সবকিছুই মাত্রারিক্ত। তার অনুভূতি ফলে অভিভূতি গভীর। কেঁদে ভাসানো, হেসে লুটানো আর আগুন জ্বালানো আছে বটে, কিন্তু কোনটা দীর্ঘস্থায়ী নয়। সেহেতু উচ্ছ্বাস উত্তেজনামাত্রেই তাৎণিক ও ণজীবী, তাই বাঙালীর গীতিপ্রবণতার উৎস এখানেই (নির্বাচিত প্রবন্ধ পৃ. ৪১-৪২)।
সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিপ েআহমদ শরীফ দাঁড়িয়েছেন। ধর্মবুদ্ধির গোড়ার কথা সমাজে দর্শন শাস্ত্রের প্রভাব ও স্বরূপ প্রবন্ধে অন্ধ ধর্মবিশ্বাস উন্নয়নের অনত্মরায় হিসেবে উলেস্নখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, আমাদের সমাজে রিও অশিতি মানুষেরা ধর্মব্যবসায়ীদের ভুল ব্যাখ্যা ও ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হয়।
আহমদ শরীফ আসত্মক্য চেতনা থেকে বেরিয়ে এসে উদার মানবতাবাদ, নাসত্মিক্য বিশ্বাস ও কর্মে মুক্তির পথকে মানবমুক্তির অবলম্বন হিসেবে প্রচার করেন। আহমদ শরীফের গবেষণার ত্রে বিসত্মৃত। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ও অমূল্য সম্পদকে বিদ্বৎসমাজে পরিচিত করার প্রচেষ্টার তিনি পথিকৃৎ। মানুষের বিশ্বাস, জীবনযাপন ও করণীয় তিনি নিরনত্মর ভেবেছেন। বাঙালী শেকড়বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধুমাত্র অর্থের প্রয়োজনে বিদেশ ছুটছে_ তা তিনি মেনে নিতে পারেননি। আহমদ শরীফ তাঁর দিনলিপি ভাবের বুদ্বুদে অকপটে তাঁর বিশ্বাস, সমাজ অভ্যনত্মরের রণ মুখ ও মুখোশের দ্বন্দ্ব ও আড়াল চিত্র বন্দী করেছেন।
ড. আহমদ শরীফ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের স্বনামখ্যাত অধ্যাপক। মুক্তচিনত্মার বুদ্ধিজীবী হিসেবেও তাঁর পরিচিতি গড়ে উঠেছিল। তিনি সরকারী দলের লেজুড়বৃত্তি করেননি। সমাজের ডামাডোলের মধ্যে বাস করেও তিনি উদার, নির্লোভ ও অধ্যবসায়ী বিবেকী কণ্ঠস্বর হিসেবে সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলেছেন। আলো ও অন্ধকারের পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন। ঊনসত্তর ও সত্তরের বক্তৃতা-বিবৃতি ও লেখালেখির মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী চেতনা সংগঠনের তিনি অগ্রবতর্ী ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ বাংলা একাডেমী মিলনায়তনে লেখক সংগ্রাম শিবির আয়োজিত এক সভায় ড. আহমদ শরীফ ভবিষ্যতের বাঙালী শীর্ষক এক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের আহমদ শরীফ দ্রোহ ও প্রতিবাদকে জীবনচেতনার অংশ হিসেবে গ্রহণ করেন। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মনসামঙ্গল কাব্যে চাঁদ সওদাগরের উত্তরাধিকারের অহঙ্কার তাঁর চিনত্মা চেতনায় প্রভাবিত করে তাঁকে প্রতিবাদী দরিদ্র নিঃস্ব মানুষের প েকাজ করার শক্তি যুগিয়েছিল নিঃসন্দেহে।
আশি ও নব্বই দশকে মৌলবাদ ও স্বৈরাচারের বিরম্নদ্ধে তিনি কলম ধরেছিলেন। জাতীয় রাজনীতি নিয়ে ভাবনা দৈনিক ও সাময়িক পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
আহমদ শরীফের গবেষণার ত্রে বিসত্মৃত। সমাজ ও সমকালের বহুমুখী সঙ্কট, সম্ভাবনা ও মুক্তির বিচিত্র উপাদান তাঁর গবেষণায় আত্মীকৃত হয়েছে। সাধারণ মানুষ, সংগ্রামী উপাখ্যান ও বাসত্মবতার নিরিখে মানুষের কর্মমুখর সৃজনী অংশগ্রহণকে তিনি উদ্দীপ্ত করতে চেয়েছেন। তিনি ছিলেন অটল, হিমালয়ের মতো। আহমদ শরীফ তাই আজও নতুন প্রজন্মের কাছে এক প্রেরণার উৎস।

No comments

Powered by Blogger.