গার্মেন্টসে অগ্নিনিরাপত্তায় অগ্রগতি জানতে চায় ইইউ পার্লামেন্ট- বিজিএমইএ’র সঙ্গে চুক্তি হওয়া ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলোর তালিকাও পাঠাতে বলেছে by এম শাহজাহান

 ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অগ্নিনিরাপত্তার অগ্রগতি জানতে চায়। জানতে চাওয়া হয়েছে অগ্নিনিরাপত্তা রোধে কারখানা মালিকরা কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
এ ছাড়া কতগুলো বিদেশী ক্রেতা প্রতিষ্ঠান অগ্নিনিরাপত্তা রোধে সহায়তা করছে তারও একটি সুস্পষ্ট তালিকা চেয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
সম্প্রতি অগ্নিনিরাপত্তার জন্য বিজিএমইএর সঙ্গে যেসব ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এমওইউ স্বাক্ষর করেছে তাদের নামের তালিকা চেয়ে ব্রাসেলের বাংলাদেশ দূতাবাসকে চিঠি দিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। ওই দূতাবাসের কনস্যুলার তপন ঘোষ এ বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ই-মেইল বার্তায় জানিয়েছেন। পাশাপাশি বিজিএমইএর সঙ্গে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে চুক্তি হওয়া ব্র্যান্ডগুলোর নামের তালিকা দ্রুত পাঠাতে বলা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত পোশাক নেয় এ রকম বড় ১৯টি ব্র্যান্ড কোম্পানি অগ্নিনিরাপত্তার ব্যাপারে বিজিএমইএর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে এবারকোমবিক এ্যান্ড ফিটস, সিএ্যান্ডএ, কেরিফোর, গেপ ইনস, এইচ এ্যান্ড এম, জেসিপনি, কাপাই, কিক টেক্সটাইল, লিন্ডেক্স, এমকিউ, পিভিএইচ, আরএনবি রিটেল এ্যান্ড ব্র্যান্ড, টার্গেট, টিসিবো, টারানোভা, টেসকো ভিপি এবং ওয়ালমার্ট ।
জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে পোশাক রফতানি হয়ে থাকে ৫১ শতাংশের ওপরে। যা জিএসপি সুবিধার আওতায় রফতানি হয়ে থাকে। আর বাদবাকি ৪৯ শতাংশ রফতানি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু এসব দেশে পোশাক রফতানিত শুল্ক সুবিধা পাওয়া যায় না। সম্প্রতি তাজরিনে অগ্নিকা-ে ১১১ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বাংলাদেশের জিএসপি সুুবিধা বাতিলের সরাসরি হুমকি না দিলেও পোশাক শিল্পের অগ্নিনিরাপত্তার অগ্রগতি কী তা জানতে চেয়েছে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইউরোপী পার্লামেন্টকে পোশাক শিল্পের অগ্নিনিরাপত্তার অগ্রগতি জানাতে কাজ শুরু করেছে। অগ্নিনিরাপত্তার জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত ব্র্যান্ডগুলোর নামের তালিকা চেয়ে মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে ফ্যাক্স বার্তা পাঠিয়েছে বিজিএমইএর কাছে।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, অগ্নিনিরাপত্তার ব্যাপারে বিজিএমইএর সঙ্গে ইতোমধ্যে ১৯টি ব্র্যান্ড কোম্পানি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আগামীতে আরও চুক্তি স্বাক্ষর হবে। অগ্নিনিরাপত্তার ব্যাপারে বিজিএমইএ থেকে ক্র্যাশ প্রোগাম চালু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অগ্নিনিরাপত্তার ব্যপারে কারখানাগুলোকে গুণগত মানের পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশী ক্রেতারা কারখানায় অগ্নিনিরাপত্তা বাড়াতে ট্রেনিং প্রোগাম, ক্র্যাশ প্রোগ্রাম এবং বিভিন্ন মনিটরিং টিমের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, দেশের পোশাক রফতানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়েনের অবদান সবচেয়ে বেশি। ইইউভুক্ত ২৭টি দেশে জিএসপি সুবিধার আওতায় পোশাক রফতানি হচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দেশের পোশাক খাত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিজিএমইএ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট যা জানতে চেয়েছে তা জানানো হয়েছে। আমরা সরকারের মাধ্যমে সবকিছু জানাতে চাই। এ ছাড়া বিজিএমইএর কাছে আলাদাভাবে জানতে চাওয়া হলেও সবকিছু জানানো হবে। তিনি বলেন, অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে আমরা যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে সফররত মার্কিন কংগ্রেস প্রতিনিধি দল। বিজিএমইএ পোশাক কারখানায় অগ্নিনিরাপত্তা বাড়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য দেশের সকল কারখানাকে এক পাল্লায় আনা ঠিক নয়।
এদিকে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা বাতিল সংক্রান্ত ইউএসটিআরের শুনানিতে পাঠানোর জন্য সরকারের মতামত চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে তা ইউএসটিআরে পাঠানো হবে। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থা মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়, এনজিও ব্যুরো, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, ফায়ার সার্ভিস, বেপজা, ফ্রোজেন ফুড এ্যাসোসিয়েশন, সিপিডি, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুটি বৈঠক করা হয়েছে। সকল পক্ষের মতামত চূড়ান্ত করে আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে ইউনাইটেড স্টেটস অব রিপ্রেজেন্টটেটিভ (ইউএসটিআর) কার্যালয়ে প্রেরণ করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সূত্র মতে, তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকা-ে ১১১ শ্রমিকের মৃত্যুর পর গত ১৪ থেকে ১৭ জানুয়ারি এই চার দিন ইউরোপী পার্লামেন্টের প্লেনারি সেশনে টেক্সটাইল কারখানার অগ্নিনিরাপত্তা, শ্রমমান ও শ্রম অধিকার, ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে এক বির্তক অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিরাপত্তা, ন্যূনতম মজুরি প্রদান, কাজের পরিবেশ নিরাপত্তা নিশ্চিত, অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়। পাশাপাশি জিএসপি বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.