পাখি আমাদের বন্ধু ভালবাসতে হবে তাদের- জাবিতে পাখিমেলা by মোরসালিন মিজান, আহমেদ রিয়াদ

 অত্যন্ত বেদনার যে, এক সময় পাখি মানেই ছিল পাখি শিকার। অনেকে বন্দুক হাতে পাখি মারাকে নিজেদের আভিজাত্য জ্ঞান করতেন। লেখাপড়া জানা মানুষও হাসতে হাসতে প্রাণ কেড়ে নিত মুক্ত বিহঙ্গের।
তবে এখন বলতেই হবে, অবস্থা বদলেছে। মন চাইলেই বন্দুক নিয়ে বেরিয়ে পড়ার সুযোগ নেই। কঠিন কঠিন আইন আছে। কার্যকরও হচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা, সচেতনতা বেড়েছে। হ্যাঁ, পাখির বেঁচে থাকার জন্য মানুষের সচেতনতাটাই বেশি দরকার। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন নিজ উদ্যোগে কাজটি করছে। তবে আলাদা করে বলতে হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। হ্যাঁ, এই ক্যাম্পাসটি পাখির অভয়ারণ্য। বিশেষ করে শীতে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি অতিথি হয়ে এখানে আসে। পাখা মেলে উড়ে বেড়ায়। আর উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়। এখানেই শেষ নয়, সচেতনতা বাড়াতে এই ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় পাখি মেলার। ২০০০ সালে প্রথম এই মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব। বর্তমানে মেলা আয়োজন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। শুক্রবার জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে উদ্বোধন করা হয় এবারের মেলার। দিনব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাজেদা বেগমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ ফরহাদ হোসেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ম. হামিদ, বন বিভাগের কর্মকর্তা তপন কুমার দে, বিশিষ্ট পাখিবিশারদ ইনাম আল হক, ইশতিয়াক সোবহান, ড. রোল্যান্ড হালদার, মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ স্বভাবতই পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমী। পরিবেশ, প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা থেকে সমাজ রাষ্ট্রের সৃষ্টি। বন্যপ্রাণী, পাখি আমাদের পরিবেশ, প্রকৃতিকে রক্ষা করছে। এ জন্য পরিবেশকে বাঁচাতে পশু-পাখি ভালবাসতে হবে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ প্রণয়ন করেছে। এ আইনের সুফল হিসেবে দেশব্যাপী প্রকৃতিবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠবে। পাখিমেলা আয়োজনের জন্য প্রাণিবিদ্যা বিভাগকে সাধুবাদ জানান এবং এ ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, কোন নির্দিষ্ট সময়ে পৃথিবীর যে দশটি স্থানে সবচেয়ে বেশি পাখি আসে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ব¦বিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এটি অত্যন্ত আনন্দের যে, পাখি আমাদের বন্ধু হয়েছে। এখন আমাদের উচিত এই বন্ধুদের যতœ করা। আপনজনের মতো ভালবাসা। আমরা তাই করছি। জাবি ক্যাম্পাসে পাখির বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। জলাশয়গুলো রক্তশাপলা এবং পাখি আহার হিসেবে গ্রহণ করেÑ এমন জলজ উদ্ভিদে ভরে উঠেছে। পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলদ, ঔষধি ও শোভাবর্ধক ফুল গাছের চারা রোপণ করায় ক্যাম্পাসে পাখি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের উপস্থিতি বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির প্রতি মানুষের যে মমত্ববোধ, সেই সচেতনতা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও আশপাশের এলাকার মানুষের সঙ্গে পাখিমেলা উপভোগ করেন ঢাকার এক দল সাংবাদিক। মেলার কয়েকটি স্টলে ছিল পাখি বিষয়ক বিভিন্ন উপস্থাপনা। এ ছাড়াও আয়োজন করা হয় ছোটদের পাখি বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কুইজ, বই, পোস্টার প্রদর্শনীর। দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মেলার পৃষ্ঠপোষক বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের চেয়ারম্যান সাংবাদিক কামরুল ইসলাম চৌধুরী। পরে শুরু হয় পাখি দেখার পালা। পাখিপ্রেমী মানুষ জলাশয় ঘুরে পাখিদের ওড়াওড়ি দেখেন।
তবে সব মিলিয়ে পাখিরা কেমন আছে তা জানালেন পাখি বিশারদ ইনাম আল হক। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, এশিয়াতে গত দশ বছরে পাখির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সে তুলনায় ভাল আছে বাংলাদেশ। গত পাঁচ বছরে এখানে খুব খারাপ কিছু ঘটেনি। আমাদের দেশে এখন সাড়ে ছয় শ’ প্রজাতির পাখি রয়েছে। বাড়ছে না, কমছেও না। অবশ্য ভূতিহাঁস, চখাচখি হাঁসসহ ৩শ’র মতো পরিযায়ী পাখি ঘুরে বেড়ায়। দোয়েল, শালিকের মতো পাখিগুলো স্থায়ীভাবে থাকে এই দেশেই। তিনি বলেন, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, কেউ দেশের পাখী এবং একই সঙ্গে অতিথি পাখি হত্যা করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদ- অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান আছে। এটিও কাজে আসছে ভাল।
মেলায় ভোলা থেকে এসেছিলেন মজিদ শাহ নামের এক তরুণ। বাইনোকুলারে চোখ রেখে পাখি দেখছিলেন। তবে শুধু পাখীপ্রেমী নন, তিনি বার্ড ওয়াচার। এখানে ওখানে পাখি দেখে বেড়ান। ভাল খোঁজ খবর রাখেন। তিনি বলেন, জাবিতে পাখিরা মন্দ নেই। এত এত পাখি মনের আনন্দে উড়ছে। এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য হয় না। দেখে মন ভাল হয়ে যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বৃক্ষ পাখি বান্ধব নয় বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ইউক্যালিপটাস, রেইনট্রিসহ বেশ কিছু গাছ ক্যাম্পাসে আছে যেগুলো পাখিবান্ধব নয়। পাখির জন্য আরও বড় আকারের সার্ভে প্রয়োজন বলেও মত দেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.