মানুষের ভালবাসায় অভিভূত থাই রাজকুমারী- রাতে চর থেকে গ্রহ নৰত্র পর্যবেক্ষণ by আবু জাফর সাবু

 থাইল্যান্ডের রাজকুমারী মাহাচাক্রী সিরিনধর্ন গাইবান্ধার নদী তীরবর্তী বেলের চরে মঙ্গলবার রাত কাটিয়ে এবং এদেশের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত এবং প্রাণঢালা অভিনন্দন পেয়ে অভিভূত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে তিনি দারম্নণ পছন্দ করেছেন এদেশীয় খাবার, প্রকৃতি এবং পরিবেশ। বিশেষ করে এই নিভৃতচরে রাত কাটানোর বিষয়টি তিনি দারম্নণভাবে উপভোগ করেছেন। যা তিনি ব্যক্ত করেছেন আয়োজক 'জীবিতা বাংলাদেশের' কর্মকর্তাদের কাছে। ওই রাতে চরে ডিনারের খাবার তালিকায় ছিল ভাত, চিংড়ির সু্যপ, নারকেলের রসে রান্না করা ভেটকি মাছের ঝোল, পটেটো চিপস্ এবং ফুলকপি, আলু, মটরসুটি সমন্বয়ে রান্না করা দু'রকমের সবজি।
থাই দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় রাজকুমারীকে চর থেকে রাতের আকাশ পর্যবেণ করার পদপে নেয়া হয়। সেজন্য ঢাকা থেকে আসা এ্যাসটোনমিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের জ্যোতির্বিজ্ঞানী সুজন কুমার এবং মশহুর-উল-আমিন তাঁকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেন। ধুধু বালুচরে বসানো দুরবিণ যন্ত্র দিয়ে তাদের সহযোগিতায় রাজকুমারী সাড়ে ৯ টার পর প্রায় ১ ঘণ্টা অত্যনত্ম কৌতূহল নিয়ে শনি, মঙ্গলগ্রহসহ নির্মল আকাশে বিদ্যমান গ্রহ নত্রাদি নিবিড়ভাবে পর্যবেণ করেন। বুধবার সকালে ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবতর্ী বেলের চরে এদেশীয় নকশী পিঠা, ফলের রস, চাপাতি, ডিম দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনে রাজকুমারী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা অত্যনত্ম ব্যসত্ম দিন কাটিয়েছেন। ওইদিন কর্মসূচীতে যখন সেখানেই গেছেন হাজার হাজার মানুষ পথের দু'পাশে দীর্ঘণ দাঁড়িয়ে থেকে রাজকুমারীকে অভিনন্দিত করেছেন। লাল শার্ট এবং জিন্সের প্যান্ট পরিহিত এবং একসঙ্গে তিনটি ক্যামেরা ঘাড়ে চলাফেরায় দারম্নণ স্মার্ট ভিনদেশী এই রাজকুমারীকে দেখে এদেশের সাধারণ মানুষও দারম্নণ খুশী। বিশেষ করে প্রকল্প পরিদর্শনকালে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সহজভাবে মেশার বিষয়টি সকলকেই অভিভূত করেছে। রূপকথার কল্পলোকের যে রাজকুমারীর দেখার প্রত্যাশায় তাঁরা ছিলেন তাঁকে অত্যনত্ম সাদামাটাভাবে দেখে শ্রদ্ধা এবং ভালবাসায় অনেকেই আপস্নুত হয়েছেন।
বুধবার সকাল ১০ টায় রাজকুমারী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা সাদুল্যাপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্রামে কৃষক মোকছুদ মিয়ার বাড়িতে ঢেঁকিতে ধানভানা প্রত্য করেন। রবিউল ইসলাম এবং হামিদা বেগমের বাড়িতে গিয়ে জীবিতা বাংলাদেশের গর্ভবতী মা শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংক্রানত্ম সেবা কার্যক্রম সরেজমিনে প্রত্য করেন সফরকারী দলটি। এছাড়া ুদ্র ব্যবসায়ী মুড়ি মুড়কি বিক্রেতা শানত্মি কুমারের বাড়িতে গিয়ে রাজকুমারী সেখানে দেখেন কিভাবে একজন হতদরিদ্র পরিবার এদেশের সাধারণ মানুষের নাসত্মা হিসেবে ব্যবহৃত মুড়ি এবং মুড়কি তৈরি করে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। এর পর ওই উপজেলার প্রয়াত জমিদার প্যারি মাধবের বাড়ির ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ প্রত্য করেন। পরিদর্শনকালে তিনি প্রতিটি নিদর্শন গভীরভাবে অবলোকন করেন এবং প্রচুর ছবি তোলেন।
সম্পর্কের নতুন দিগন্ত ॥ দীপু মনি ॥ থাইল্যান্ডের রাজকুমারী বলেন, এদেশের মানুষ অত্যনত্ম সহজ সরল এবং বন্ধুভাবাপন্ন ও অতিথিপরায়ন। তিনি এদেশে এসে মুগ্ধ হয়েছেন। থাইল্যান্ডের সঙ্গে এদেশের প্রকৃতি ও মানুষের ভিন্নতা থাকলেও এই সফরকালে তিনি উপলব্ধি করেছেন যে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পরিবেশে আলাদা একটি সৌন্দর্য রয়েছে। যা তিনি একটি নদীবেষ্টিত চরে রাত যাপনকালে আনত্মরিকভাবে অনুভব করতে পেরেছেন। এই এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁর মনে হয়েছে তাদের জীবনাচরণ অনেক বেশি ইতিবাচক। নারীরা গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি সংসারে আয়বর্ধক বিভিন্ন কর্মকা-ে যুক্ত হয়েছেন-যা একটি ভাল দিক। রাজকুমারী মাহা আরও বলেন, মাতৃ ও শিশু মৃতু্য রোধে তাদের স্বাস্থ্য সেবায় এদেশের আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.