পৃথিবী সৃষ্টিকালীন রহস্যের সন্ধানে by ইব্রাহিম নোমান

সৃষ্টির শুরুতে কেমন ছিল আমাদের এ পৃথিবী কিংবা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে আমাদের এ পৃথিবী? তা নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। আর এসব রহস্যের জট খুলতে এবার বিজ্ঞানিরা সক্ষম হয়েছেন।
কয়েক শ' কোটি বছর আগের কথা। পৃথিবী তখন একেবারে নবীন। ভূপৃষ্ঠ থেকে তখন গ্যাস নিঃসৃত হয়ে মিশে যেত বায়ুম-লে। সেসময়ে আগ্নেয়গিরির ব্যাপক উদ্্গিরণ চলছিল। উৎৰিপ্ত লাভার সঙ্গে ভূঅভ্যনত্মরের গলিত হাল্কা উপাদান তখন মিশে যেতে আকাশে। অবশ্য, কিছু হাল্কা উপাদান তখন পৃথিবীর কেন্দ্রভাগে থেকে যায়। 'নেচার' সাময়িকীতে রাইস ইউনিভার্সিটি ভিত্তিক একদল বিজ্ঞানী এখন পৃথিবী সৃষ্টিকালীন একটি রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করছেন। কিছুদিন পর্যনত্ম বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল হিলিয়াম ও আর্গনের মতো হাল্কা পদার্থ এখনও পৃথিবীর অভ্যনত্মরে রয়েছে। এই ধারাণাটি বিজ্ঞানীদের বেশ ধাঁধায় ফেলেছিল। কারণ এ ধরনের পদার্থের প্রবণতাই হচ্ছে আগ্নেয়গিরির অগ্নু্যৎপাতের সময় বায়ুম-লে চলে যাওয়া। অবশ্য এসব পদার্থ পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে ফুরিয়ে গেছে। ভূবিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত যে, ভূত্বকের অনেক গভীরে অবশিষ্ট পদার্থসমূহ রয়ে গেছে। কিছু গ্যাস কেন রয়ে গেল আর অন্যসব গ্যাস কেন বায়ুম-লে ফিরে গেল তার কারণ ব্যাখ্যা করতে বিজ্ঞানীরা এই গলদঘর্ম হচ্ছেন। এ বিষয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য অভিমত এই যে, পৃথিবীর সর্বনিম্নের বহিরাবরণ উপরিভাগের আবরণ ব্যাপকভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। তাই পৃথিবীর সৃষ্টিকালীন উপাদান এভাবে রয়ে গেছে।
সর্বশেষ গবেষণায় রাইস, মিশিগান, ইউনিভার্সিটি এবং ক্যালিফোর্নিয়া_সার্কেলে ইউনিভার্সিটি একদল বিজ্ঞানী অভিমত পোষণ করেন যে, প্রায় ৩৫০ কোটি বছরে আগে পৃথিবীর অভ্যনত্মরীণভাগ অনেক উষ্ণ ছিল। এ সময়ে বিদ্যমান নির্দিষ্ট ভূপদার্থগত অবস্থা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার নিচে একটি 'ডেনসিটি ট্র্যাম্প' বা পদার্থের ঘনত্বজনিত ফাঁদ সৃষ্টি করে। ঐ ফাঁদে তাপ ও চাপের ফলে ভূপদার্থগত এক বিরল অবস্থার সৃষ্টি হয়। যেখানে তরল পদার্থের ঘনত্ব কঠিন পদার্থের চাইতেও বেশি ছিল।
আজ ভূ-আবরণে সৃষ্ট তরল পদার্থের ঘনত্ব কঠিন পদার্থের চাইতেও কম এবং তাই তা আগ্নেয়গিরির আকারে পৃথিবীর উপরিভাগে উঠে আসে। অবশ্য কয়েক শ' কোটি বছর আগে পৃথিবীর বহিতর্্বক বা বহিরাবরণ অপেৰাকৃত উত্তপ্ত থাকায় অভ্যনত্মরভাগের পদার্থসমূহ গলিত অবস্থাই ছিল এবং তা ঘন তরল পদার্থ আকারে নিশ্চল, দানাদার রূপ ধারণ করে এবং পরিশেষে ভূআবরণের তলদেশ নিমজ্জিত হয়। গবেষণা নিবন্ধের মূল লেখক রাইস ইউনিভার্সিটির আর্থ সায়েন্সের এ্যাসোসিয়েট প্রফেরস সিন-টাই লি এ সম্পর্কে বলেন, যখন কোনকিছু গলে যায়, আমরা ধারণা করি তা থেকে গ্যাস বেরিয়ে যায় এবং এ কারণে মানুষ মনে করে যে, আটকে পড়া পদার্থ অবশ্যই আফিম আকারে থাকবে যা কখনও গলেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এই ধারণা নিয়েই মতানত্মর রয়েছে। কারণ এই প্রমাণ রয়েছে যে, সকল আবরণ কমপৰে একবার গলে গেছে। এ অবস্থায় আমরা এমন একটি প্রক্রিয়ার কথা বলছি যেখানে বস্তু গলে গেছে, কিন্তু গ্যাস বের হতে পারেনি। কারণ গলিত পদার্থ কখনও উপরে উঠে আসে না।
লি বলেন, পৃথিবীর অভ্যনত্মরভাগের কম ঘনত্ববিশিষ্ট গলিত পদার্থ বেরিয়ে আসার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর কঠিন আবরণ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু 'আবাসাইড ডাউন' মডেল বা বিপরীতধমর্ী নমুনা থেকে পৃথিবীর আদিমতম অবস্থার কতিপয় ভূরাসায়নিক ও ভূপদার্থগত অনিয়মের ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব। যেখানে আটকাপড়া গ্যাস সম্পর্কেও যৌক্তিক ব্যাখ্যা মিলবে। এ থেকে বোঝা যায় তত্ত্বটি যুক্তিগ্রাহ্য বলে।
বিজ্ঞানীরা এখন পৃথিবীর আদিমতম অবস্থা সম্পর্কে এই সর্বশেষ তত্ত্বের প্রায়েগিক সব ব্যাখ্যা দিতে ব্যসত্ম। দেখা যাক, পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য উন্মোচনে এই তত্ত্ব কতটা কার্যকর প্রমাণিত হয়। বিশ্বের বিজ্ঞানমনস্ক সকল মানুষ সেই আশায় প্রহর গুনছেন।

No comments

Powered by Blogger.