ক্যাম্পাসে প্রথম দিন

আশা-নিরাশার দোদুল্যমান অবস্থা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে রাজু। দিনাজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক অজপাড়াগাঁয়ে বেড়ে উঠেছে সে। গ্রামের স্কুল এবং কলেজের পাট চুকিয়েছে জীবনের প্রথম ধাপে।
এইচএসসি পাসের পর উচ্চশিক্ষায় তার আগ্রহ থাকলেও পরিবারের আর্থিক দীনতার কারণে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কোথায় পড়াশোনা করবে তা নিয়ে সৃষ্টি হয় সংশয়। পরে স্কুলের এক শিক্ষকের পরামর্শে বাড়িতে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাজু। ঢাকার দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার পর ভর্তির সুযোগ পায় সে। যথারীতি ভর্তিও হয়। ঢাকায় তার থাকার মতো কোন নিকটজনের বাসা না থাকায় বা মেসে থাকার মতো আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় সে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তার এলাকার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে আবাসিক হলের কমনরুমে ওঠার সুযোগ তৈরি করে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর প্রথমদিন তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আবাসিক হলসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ‘বড় ভাইরা’ রাজুদের মতো প্রথম বর্ষে পড়ুয়া আরও যারা নতুন ভর্তি হয়েছে তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। কেউ কেউ আবার সালাম না দেয়ার জন্য গালমন্দও করেছে। এ স্মৃতি শুধু রাজুর একার নয়, ক্যাম্পাস জীবনের প্রথমদিন থেকেই এমন বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় অনেক শিক্ষার্থীকে। বিশেষ করে যারা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসে তাদের জন্য এ সমস্যা আরও বেশি প্রকট।
উচ্চশিক্ষার চারণভূমি আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম দিনে কোন বিচিত্র অভিজ্ঞতার শিকার হয়নি কিংবা হয়রানির শিকার হয়নি, এমন ঘটনা খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থী জানায় তাদের অভিজ্ঞতার কথা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ঊর্মি আক্তার বলল, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রথম প্রথম খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। কোথায় থাকব, কি খাবÑ এ নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। পরে সিনিয়র আপুদের সহযোগিতায় সব ঠিক হয়ে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমপা জানাল, তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথমদিনেই নানা সমস্যার কথা। প্রথমে এসে হলে সিট না পেয়ে উঠতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন একটি ছাত্রী নিবাসে। সেখান থেকেই অনেকদিন ক্লাস করেছি। পরে সিনিয়র এক আপুর কক্ষে উঠি; কিন্তু প্রথমে তিনি আমাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। বিভিন্ন সময় আমাকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়েছেন। পরে অবশ্য সব ঠিক হয়ে গেছে। একপর্যায়ে তিনিই আমার কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। তাঁর কাছ থেকেই আমি সব পরামর্শ পাই। রুমপা আরও জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির প্রথম দিন থেকেই প্রত্যেক ছাত্রের নিয়মানুবর্তিতা পালন করা উচিত। মেনে চলতে হয় শিক্ষক ও সিনিয়রদের বিভিন্ন পরামর্শ। এর মাধ্যমেই শিক্ষার্থী নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে সবার কাছে। তবে কোনভাবেই ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া যাবে না প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের। ভীত-সন্ত্রস্ত থাকলে আরও বেশি বিড়ম্বনায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিদুর রহমান জানায়, ক্যাম্পাসে জীবনের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের কাছে ক্যাম্পাসকে সম্পূর্ণ একটা নতুন জগত মনে হয়। তাই প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের মনে একটু বেশি ভয় কাজ করে। তবে ভয় থেকে দূরে থাকতে হবে।
আচার-আচরণে বিনয়ী হলে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম দিন একটু ভুলের জন্য শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে এমন নজির কম নয়। এজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালাসহ নানা নিয়ম-কানুন মেনে চলা উচিত।
মাঈন উদ্দিন

No comments

Powered by Blogger.