প্রখ্যাত সাহিত্যিক আবু রুশ্‌দ মতিনউদ্দিনের ইন্তেকাল

 বিশিষ্ট শিৰাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, খ্যাতিমান লেখক সৈয়দ আবু রম্নশ্দ মতিনউদ্দিন মঙ্গলবার রাতে তাঁর ধানম-ির বাসভবনে ইনত্মেকাল করেন (ইন্নালিলস্নাহি...রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
প্রফেসর আবু রম্নশ্্দ মতিনউদ্দিন ১৯১৯ সালে কলকাতার এক সম্ভ্রানত্ম মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আবদুল করিম এবং মাতা আমাতুজ জোহরা। তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইংরেজীতে গ্র্যাজুয়েশন ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। পরবতর্ীতে তিনি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিএ (অক্সন) হন। তিনি তরম্নণ বয়সেই বাংলা সাহিত্যে এক উজ্জ্বল তারকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং পরিণত বয়সে বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক, গল্প ও প্রবন্ধ রচয়িতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
সাহিত্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক (১৯৮১), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯২), শেরে বাংলা পুরস্কার (১৯৯২) সহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর রচিত বইয়ের মধ্যে 'এলোমেলো', 'সামনে নতুন দিন', 'ডোবা হলো দীঘি', 'নোঙ্গর', 'অনিশ্চিত রজনী' ইত্যাদি উলেস্নখযোগ্য। এ ছাড়াও তিনি ফকির লালন শাহের ৭৬টি গানের ইংরেজী অনুবাদ করেন।
ওয়াশিংটনের পাকিসত্মান দূতাবাসে এডুকেশন কাউন্সিলর হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরম্ন হলে তিনি পাকিসত্মানের দূতাবাস ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধের পৰে কাজ করা শুরম্ন করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের সপৰে জনমত গড়ে তোলার জন্য বিভিন্নস্থানে জনসংযোগ ও সভা করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের মুক্তিযুদ্ধের পৰে আনার জন্য অবদান রাখেন। তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর বড় মেয়ে নিলুফার ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট বিভাগের ফেলো ছিলেন। তিনি ২০০৪ সালের মার্চ মাসে ইনত্মেকাল করেন। তাঁর স্বামী কাজী বাহারম্নল ইসলাম দেশের বিশিষ্ট ব্যাংকার। বর্তমানে তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর একমাত্র ছেলে আবু সাইদ কামাল ওয়াশিংটনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিৰকতা করছেন। অপর মেয়ে শাহীন রম্নশ্দ প্রখ্যাত আইনজীবী ও নিউইয়র্কে বসবাস করেন।
তার মৃতু্যতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এক শোকবার্তায় বলেছেন, তাঁর নানা কর্মকা-ের বিবরণ স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলের ৩য় খ-ে পাওয়া যাবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিবার ও আমি তাঁর একজন স্নেহভাজন বন্ধু ও সহকমর্ী ছিলাম। ছাত্র বয়সে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'রাজধানীতে ঝড়' আমাকে নাড়া দেয় ও তাঁর প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
তাঁর এক ভাই বিখ্যাত সাহিত্যিক রশীদ করিম। বর্তমানে তিনি পৰাঘাতে ভুগছেন। ছোট ভাই ফাজলে রশীদ বিশিষ্ট সাংবাদিক ও জাতীয় প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী।
তাঁর ছোট ভাই রশীদ করিমও একজন নামকরা সাহিত্যিক। তার ইনত্মেকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং তার স্ত্রী ও পুত্র কন্যাদের আনত্মরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ তাঁর মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। মন্ত্রী এক শোকবার্তায় বলেন, প্রফেসর আবু রম্নশ্্দ মতিনউদ্দিনের মৃতু্যতে জাতি একজন গুণী শিৰাবিদকে হারাল। তাঁর মৃতু্যতে সাহিত্যাঙ্গনে এক শূন্যতার সৃষ্টি হলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর অবদান জাতি আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তিনি মরহুমের শোকসনত্মপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
মরহুমের কুলখানি শুক্রবার বাদ মাগরিব তাঁর ধানম-ির বাসভবনে (বাড়ি নং-৮সি/১ রাসত্মা নং-১৪, 'সি্নগ্ধা' এপার্টমেন্টে) অনুষ্ঠিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.