খুলনা-রাজশাহী- শাহরিয়ারের ব্যাটে ঝড়

সকালে নাশতার টেবিলে বড় হতাশ শোনাচ্ছিল কোচ ওয়াহেদুল গনির কণ্ঠ। ওয়েস্টার্ন ইন হোটেলে গত তিন দিনে যতবার দেখা হয়েছে, মলিন দেখা গেছে শাহরিয়ার নাফীসের মুখটাও। টানা তিন ম্যাচে পরাজয়ের পর এমনই হওয়ার কথা।
সেই খুলনা রয়েল বেঙ্গলস বাঘের গর্জন দিয়ে উঠল সন্ধ্যায়। মলিন শাহরিয়ার নাফীস আনন্দলাফ দিয়ে শূন্যে ভাসলেন। তাঁর সেঞ্চুরিতেই উড়ে গেল দুরন্ত রাজশাহী। শাহরিয়ার নাফীসের অপরাজিত ১০২ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম সেঞ্চুরি (অলক কাপালি আইসিএলে সেঞ্চুরি করলেও ‘নিষিদ্ধ ক্রিকেট’ বলে ক্রিকেটের পরিসংখ্যানে স্থান পায়নি সেটা)। রেকর্ডও হলো একটি। শাহরিয়ার ও লু ভিনসেন্টের ওপেনিং জুটি ২০ ওভার অবিচ্ছিন্ন থেকে করেছে ১৯৭ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২০ ওভারে কোনো উইকেট না হারানোর ঘটনা এই প্রথম। ওপেনিং জুটিতেও এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ১৮ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে ওয়েলিংটনের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের (২০১) রেকর্ডটা গড়েছে সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টসের পিটার ইনগ্রাম-জেমি হাউ জুটি। সব ধরনের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেই যখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, বিপিএলে তো সর্বোচ্চ হবেই। তবে সেটা শুধু ওপেনিংয়ে নয়, যেকোনো জুটিতেই। আগের ম্যাচগুলোর মতো শাহরিয়ারের এমন কীর্তির ম্যাচটাও হলো প্রায় ফাঁকা গ্যালারির সামনে।
গত বিপিএল শাহরিয়ারকে কেবল বেদনাই উপহার দিয়েছে। প্রথম পাঁচ ম্যাচে অধিনায়ক থাকলেও এরপর বাদই পড়ে গিয়েছিলেন বরিশাল বার্নার্সের একাদশ থেকে। এবার প্রথম তিন ম্যাচে রান ছিল ৫, ৪৩ ও ৬। দ্বিতীয় ম্যাচে পুরোনো দল বরিশালের বিপক্ষে ৪৩ ছিল টি-টোয়েন্টিতে তাঁর সর্বোচ্চ। কাল সেটিকে অনেক পেছনে ফেলে শাহরিয়ারই এখন দ্বিতীয় বিপিএলের নায়ক। বিদেশিদের ছাপিয়ে গত দুই দিনে স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স যে আলোর মিছিলে যোগ দিচ্ছিল, তাতে সবচেয়ে উজ্জ্বল মশালটা জ্বাললেন তিনিই।
খুলনার ইনিংসের প্রথম ওভারটি মেডেন নিয়েছিলেন মনির হোসেন। সেই শেষ, দ্বিতীয় ওভার থেকেই শুরু ভিনসেন্ট-শাহরিয়ারের তাণ্ডব। মঈন আলীর দ্বিতীয় ওভারে ভিনসেন্টের দুই ছক্কা ও দুই বাউন্ডারিতে ২১। মনিরের পরের ওভারে শাহরিয়ারের ব্যাট থেকেও দুটি বাউন্ডারি। এরপর প্রায় প্রতি ওভারেই থেমে থেমে উঠতে থাকে ঝড়, শেষ দিকে যেটা হয়ে ওঠে আরও প্রবল। শেষ ৫ ওভারে এসেছে ৬২ রান। দুরন্ত রাজশাহীর অসহায় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত শন আরভিন, ৪ ওভারে দিয়েছেন ৪৪। মাত্র ৬৯ বলে অপরাজিত ১০২ রানে এক ডজন বাউন্ডারির সঙ্গে তাইজুল আর নাঈম ইসলামকে মারা দুটি ছক্কা আছে শাহরিয়ারের। সেঞ্চুরি না পেলেও (৫১ বলে ৮৯) ছক্কা মারার প্রতিযোগিতায় ম্যাচসেরা শাহরিয়ারকে অনেকটাই পেছনে ফেলতে পেরেছেন ভিনসেন্ট। ৬টি চারের সঙ্গে তাঁর ছক্কা ৮টি।
টি-টোয়েন্টি এমনিতেই ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের খেলা। ১৯৭ রান তাড়া করার ম্যাচে সেটা তো আরও বেশিই হবে। দুরন্ত রাজশাহীর ব্যাটসম্যানরা সেভাবেই চেষ্টা করতে গিয়ে ক্রমেই পিছিয়ে গেলেন লড়াই থেকে। শেষ পর্যন্ত ৯ বল বাকি থাকতেই অলআউট ১২৯ রানে। প্রাপ্তি ৬৮ রানের বড় পরাজয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
খুলনা রয়েল বেঙ্গলস: ২০ ওভারে ১৯৭/০ (ভিনসেন্ট ৮৯*, শাহরিয়ার ১০২*; মনির ০/৩৩, মঈন ০/৩২, নাঈম জুনিয়র ০/২৯, তাইজুল ০/১৬, এডমন্ডসন ০/৩৯, আরভিন ০/৪)। দুরন্ত রাজশাহী: ১৮.৩ ওভারে ১২৯ (তামিম ৫, কভেন্ট্রি ২৩, জহুরুল ২৬, ক্যাটিচ ১৬, জিয়া ০, আরভিন ২২, মঈন ২২, তাইজুল ০, নাঈম জুনিয়র ৯, এডমন্ডসন ০, মনির ০*; ফরহাদ ৩/২২, আসিফ ১/৩০, নাবিল ১/৩১, জাদরান ২/৯, হ্যারিস ২/১৯, সানজামুল ০/১৩)।
ফল: খুলনা রয়েল বেঙ্গলস ৬৮ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শাহরিয়ার নাফীস।

No comments

Powered by Blogger.