রাজশাহী ভার্সিটি ঘিরে শিবিরের সন্ত্রাসের উস কোথায়?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুসারী শিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় চারপাশের এলাকায় জামায়াত-শিবির নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রভাব বিসত্মারের জন্য পাশর্্ববর্তী কাজলা, বিনোদপুর, ধরমপুর, মির্জাপুর, ডাশমারি, বুধপাড়া, মেহেরচন্ডী, কড়াইতলা, খড়খড়ি, চৌদ্দপায়া, চরশ্যামপুর, কাটাখালি, বেলপুকুর, জামিরা, হরিয়ান, টাঙ্গন প্রভৃতি এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছে প্রায় অর্ধলাখ জামায়াত-শিবির কর্মী।
এসব এলাকায় কয়েকটি বেসরকারী সংগঠনের মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরের দরিদ্র কমর্ীদের বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। স্বাধীনতার আগে থেকে শুরম্ন করে বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমল পর্যনত্ম জামায়াত-শিবির কর্মীদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে জামায়াত-শিবিরের অবস্থান আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। অবশ্য একবার ১৯৯৬ মাঝামাঝি থেকে ২০০১ সালের অক্টোবর পর্যনত্ম আওয়ামী লীগের শাসনামলে জামায়াত-শিবির এই সুবিধা পায়নি। অর্থের উৎস বন্ধ না করে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে এসব এলাকায় জামায়াত-শিবিরের অবস্থান দুর্বল করা সম্ভব নয় বলে ওয়াকিফহাল এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে রাবি প্রগতিশীল শিক-কর্মকর্তারা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে অর্থের উৎস চিহ্নিত ও বন্ধ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির সুবিধাও বন্ধ করতে হবে। অর্থের মাধ্যমে জামায়াত-শিবির চক্র সাধারণ মানুষকে তাদের প েটানছে। এটা তাদের এক ধরনের রণকৌশল বলা যেতে পারে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক সংলগ্ন শিবির পরিচালিত দারম্নস সালাম ছাত্রাবাসের দেয়ালের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের নানাভাবে আর্থিক সহায়তাকারী একটি এনজিও'র সাইনবোর্ড ঝুলছে। জেনুইন স্যোসাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন (জেসো) নামের ওই সংগঠনটির চেয়ারম্যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াতের অনুসারী সহকারী পরীা নিয়ন্ত্রক ড. মমিনুল ইসলাম। রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে শিবিরের সংঘর্ষে মমিনুলের এক চোখ বিনষ্ট হলে তাকে চারদলীয় জোট সরকার আমলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী পরীা নিয়ন্ত্রক পদে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়। জেসো এনজিও'র প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডাঃ ওয়াসিম হোসেন। উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সকলেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক, জামায়াত-শিবিরের প্রথম সারির পরামর্শদাতা। এরা হলেন যথাক্রমে- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর অব এ্যামেরিটাস ড. একেএম ইয়াকুব আলী, রসায়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম. উমার আলী, সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর এম কোরবান আলী, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এম আজহারম্নল ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর আবু বক্কর সিদ্দিক ভুঁইয়া, অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর শাহ হাবিবুর রহমান, আরবী বিভাগের প্রফেসর ড.আব্দুল হক, সংস্থাপন শাখার অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ড. শেখ সা'দ আহমেদ এবং আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম আব্দুল হান্নান প্রমুখ।
ওয়াকিফহাল সূত্রে জানা যায়, জেসো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশের জামায়াত-শিবির কর্মীদের আর্থিকভাবে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে সামাজিক পুনর্বাসন কর্মসূচী পরিচালনা করছে। সংগঠনটি গরিব ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান, দরিদ্র পরিবারে রিকশা, সেলাই মেশিন ও গবাদিপশু বিতরণ করে। এমনকি কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বেকারদের বিনা সুদে ঋণসহ প্রতিমাসে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। এভাবে সংগঠনটি প্রতিমাসে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করছে। জামায়াত-শিবিরের কর্মী ছাড়াও সাধারণ দরিদ্র মানুষকে প্রতিষ্ঠানের এসব কর্মসূচীর আওতায় জামায়াত- শিবিরের অনুসারী হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। হতদরিদ্র, দুস্থ মানুষ আর্থিক সহায়তা পেয়ে জামায়াত-শিবিরের ঢুকে পড়ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত শিবিরের সামপ্রতিক তা-বের পর এসব কর্মকা-ে ব্যবহৃত অর্থের উৎস সন্ধানে তদনত্মে নেমেছে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া গোয়েন্দারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে সন্দেহভাজন বিদেশী এনজিও যথাক্রমে- রিভাইভাল অব ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি (কুয়েত), হায়াতুল ইগাছা, আল-মারকাজুল ইসলামী, চ্যারিটেবল সোসাইটি (কাতার), কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটি, আল-মুনতাদা আল ইসলামী, আল-ইসলামী সোসাইটি অব-সোসাল রি-ফর্ম, ইসলামী রিলিফ এজেন্সী, রাবেতা আলম আল ইসলামী, আল হারমাইন এনাম অরনেট, ইন্টারন্যাশনাল রিলিফ অগর্ানাইজেশন, আল-হমোমাইন ইসলামিক ফাউন্ডেশন (সৌদি আরব), আল-ফোরকান (দুবাই) এবং ওয়েল ফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন (ইউকে) প্রভৃতির কর্মকা- রয়েছে কিনা তদনত্ম করে দেখছে।
তবে জেসো'র চেয়ারম্যান ড. মমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, সংগঠনটি দুস্থ ও অসহায় মানুষের সেবা করছে। সংগঠনের সদস্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাঁদার টাকা দিয়ে কাজ করছে। সেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসাবে এটি জামায়াত-শিবির বা কোন বিশেষ দলের প ে কাজ করে না বলে দাবি করেন তিনি। তবে এলাকাবাসীর দাবি জেসো ছাড়াও বেশ কয়েকটি বেসরকারী সংগঠনের উলেস্নখিত এলাকায় কাজ করছে। যেখান থেকে জামায়াত-শিবিরের দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.