রধানমন্ত্রীর ভাষণ জনমতের প্রতি পরিহাস: বিএনপি

জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ ‘জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র ও জনমতের প্রতি চরম পরিহাস’ এবং তাতে ‘ক্ষমতার দম্ভ ফুটে উঠেছে’ বলে মনে করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের ওপর গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র ও সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর ওই ভাষণে মানুষের জন্য আশার কোনো কথা নেই। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের বিষয়েও একটি কথাও তিনি বলেননি। বরং তাঁর সরকারে অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার আশা ব্যক্ত করেছেন। ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ প্রত্যাখ্যান করছি’—এ উক্তি করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে অতীতে কখনো কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি, ভবিষ্যতেও তা সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে গত চার বছরে সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্যের যেসব কথা বলা হয়েছে, তা ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘চরম হাস্যকর’ বলে দাবি করেন তরিকুল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে কথা বলেছেন, তা অসত্য ও মনগড়া। বরং জোট সরকারের সময়কার প্রবৃদ্ধির ধারাকে বর্তমান সরকার নিম্নমুখী করেছে। সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে, অনেকে শূন্য হাতে দেশে ফিরছে।
বিএনপির সমন্বয়ক বলেন, গুম হওয়া বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করা ও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও সুবিচারের অঙ্গীকার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এর কোনোটিই পূরণ হয়নি। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ও টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে জনগণের উদ্বেগ নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল ষড়যন্ত্রকারীদের আড়াল করে বিচারের কৃতিত্ব দাবি করে জাতির সঙ্গে পরিহাস করেছেন।
তরিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ-পরিস্থিতির চরম অবনতির অজুহাতে বিনা টেন্ডারে দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর নিকটজনদের। তাঁদের ভর্তুকি মূল্যে তেল সরবরাহ করতে গিয়ে এখন দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এর সঙ্গে বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম।
বিএনপির সমন্বয়ক বলেন, ‘ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নিজের, তাঁর পিতার ও সন্তানদের যে প্রশস্তি গেয়েছেন, তা খুবই অশোভন। আর রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে যে বিষোদ্গার ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে যে কটূক্তি করেছেন, তা-ও জাতি প্রত্যাশা করেনি।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উল্লেখ করে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আমরা কখনোই বিরোধী নই, বরং আন্তরিক। বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। কারণ, আওয়ামী লীগের তৎকালীন (১৯৭২-৭৫) সরকার ত্রিদেশীয় চুক্তি সই করে স্বীকৃত ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে বিনা বিচারে ছেড়ে দিয়েছিল।’
তরিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপির মহাসচিবকে হাস্যকর মামলা দিয়ে সরকার আটকে রেখেছে। অথচ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২১ আসামিকে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সরকার ক্ষমা করে দিয়েছে। সাড়ে সাত হাজার মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাদেক হোসেন খোকা, রুহুল কবির রিজভী, আবদুস সালামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.