শীত-কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হবে না আর by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

শীত মৌসুমে ধানের বীজতলা নিয়ে কৃষকদের আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না। ‘শুষ্ক বীজতলা’ পদ্ধতি ব্যবহার করে তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশা থেকে ধানের বীজতলা রক্ষা করা যাবে।
কৃষিতে দুর্যোগ ও জলবায়ু ঝুঁকি-ব্যবস্থাপনা (ডিসিআরএমএ) প্রকল্পের আওতায় পদ্ধতিটি প্রচলন করা হয়েছে। গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম জানান, উপজেলার ৮-১০ জন কৃষক এই পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করে সফলতা পেয়েছেন।
যেভাবে পদ্ধতিটি এল: ডিসিআরএমএ প্রকল্পের পরিচালক আবু ওয়ালী রাগিব হাসান জানান, শুষ্ক পদ্ধতির বীজতলা নিয়ে তিন বছর ধরে গবেষণা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম। অবশেষে তিনি সফল হয়েছেন। গত বছরের দিকে প্রকল্পটি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু হয়। কৃষি কর্মকর্তারা গত বছর মানিকগঞ্জে একটি প্রদর্শনী প্লট করে সফলতা পেয়েছেন।
শুষ্ক বীজতলা তৈরির প্রণালি: রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই পদ্ধতিতে বীজতলায় ধানবীজ বপনের আগে ৪৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজ বপনের পর হালকা মাটি ছিটিয়ে দিতে হবে। বীজ মাটির সঙ্গে নেড়েচেড়ে মিশিয়ে দিলেও চলবে। সব শেষে পানি দিয়ে বীজতলা ভিজিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এমনভাবে ঢাকতে হবে যেন বাতাস ঢুকতে না পারে। এতে পলিথিনের ভেতর তাপ ও আর্দ্রতা তৈরি হবে। আর্দ্র থাকায় বীজতলায় সেচ দিতে হবে না, আর তাপের কারণে চারা দ্রুত বাড়বে। এভাবে ২২ দিন পর্যন্ত পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। তার পরের তিন দিন একটু একটু করে রোদ লাগিয়ে চারা ঢেকে রাখতে হবে। ২৫ দিন পর বীজতলা থেকে চারা তুলে খেতে রোপণ করতে হবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে তীব্র শীতেও চারা নষ্ট হবে না; বরং দ্রুত বাড়বে।
সুফল পাচ্ছেন কৃষকেরা: গোদাগাড়ীর বেশ কিছু কৃষক এবার শুষ্ক পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। গত শুক্রবার উপজেলার সাড়োইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এ পদ্ধতিতে তৈরি বীজতলার চারা সতেজ ও সবুজ রয়েছে। ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতেও সেগুলোর কোনো ক্ষতি হয়নি। আর খোলা পদ্ধতিতে তৈরি বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষক আরিফুল ইসলাম এবার আট বিঘা জমিতে বোরো চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জানান, এ পদ্ধতির খবর পাওয়ার আগেই তিনি ছয় বিঘা জমির জন্য খোলা পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেন। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি ২০ দিন আগে দুই কাঠা জমিতে এ পদ্ধতিতে বীজতলা করেন। একই উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামের কৃষক রাকিব উদ্দিন ও নিমঘটু গ্রামের আদিবাসী কৃষক কংগ্রেস টুডু যথাক্রমে তিন কাঠা ও দুই কাঠা জমিতে শুষ্ক বীজতলা তৈরি করেন।
আরিফুলের খোলা বীজতলায় গিয়ে দেখা যায়, চারা সবেমাত্র মাথা উঁচু করেছে। তবে কুয়াশায় যেন পুড়ে গেছে। অন্যদিকে শুষ্ক বীজতলায় গিয়ে পলিথিন সরিয়ে দেখা যায়, সেখানে ধানের চারা সবুজ হয়ে বেড়ে উঠছে।
কৃষি কর্মকর্তারা যা বলেন: গোদাগাড়ীর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, শুষ্ক পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরিতে বড় খরচ পলিথিন কেনা। তবে সুবিধা হচ্ছে, একই পলিথিন একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে। শুষ্ক বীজতলায় কোনো কীটনাশক ছিটাতে হয় না। প্রতিদিন পানি দিতে হয় না।
প্রকল্পটির পরিচালক আবু ওয়ালী রাগিব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন প্রশিক্ষণে কৃষি কর্মকর্তাদের এ পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছি। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে সাফল্য পেয়েছেন।’ তিনি জানান, কৃষকদের মধ্যে এই পদ্ধতি নিয়ে বেশ সাড়া পড়েছে। শীত ও কুয়াশার মতো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে কৃষক আর ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

No comments

Powered by Blogger.