আমিনবাজারে ছয় ছাত্র হত্যা মামলা: ছাত্রদের বিরুদ্ধে করা ডাকাতির মামলা মিথ্যা প্রমাণিত- ৬০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

রাজধানীর অদূরে আমিনবাজারের বরদেশী গ্রামে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৬০ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।
গতকাল রোববার র‌্যাবের সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ ছাড়া ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শী আহত ছাত্র আল আমিনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় দায়ের করা ডাকাতির মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। আদালত তা গ্রহণ করে আল আমিনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে ওই মিথ্যা মামলা করার দায়ে বাদী আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ২১১ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে নামাজ শেষে মিরপুর মাজার রোড থেকে অদূরে আমিনবাজারে ঘুরতে যান শামস রহিম ওরফে শাম্মাম, ইব্রাহিম খলিল, টিপু সুলতান, তৌহিদুর রহমান পলাশ, কামরুজ্জামান কান্ত, মনিব সেতাব ও আল আমিন। সেখানে একদল লোক ডাকাত আখ্যায়িত করে পিটিয়ে ছয়জনকে হত্যা করে। আল আমিন গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান।
পরে বিচার বিভাগীয় তদন্তে আল আমিনসহ নিহত ছাত্ররা নিরপরাধ প্রমাণিত হন। আর হত্যার ঘটনায় সাভার থানার পুলিশ একটি মামলা করে। ওই মামলার তদন্ত শেষে গতকাল অভিযোগপত্র দিয়েছে র‌্যাব।
অভিযোগপত্রভুক্ত ৬০ আসামির মধ্যে ১১ জন কারাগারে ও ১৩ জন জামিন মুক্ত আছেন। পলাতক বাকি ৩৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি ও ক্রোকি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। আদালত ১৬ জানুয়ারি অভিযোগপত্র উপস্থাপনের দিন ধার্য করেছেন।
অভিযোগপত্র: স্থানীয়ভাবে মেম্বার হিসেবে পরিচিত প্রধান আসামি আবদুল মালেক বালু ব্যবসায়ী। তিনিসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলাও রয়েছে। তাঁরা ওই এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন বলে তদন্তে সাক্ষ্য-প্রমাণ মিলেছে বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে মারধর, হত্যা, হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩০৭, ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। মামলায় ৯২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, আবদুল মালেক, আবদুর রশিদ মেম্বারসহ অন্য আসামিরা ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে বাঁশের লাঠি, দেশি অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে ছয় ছাত্রকে হত্যা করেন। এরপর হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আসামি আবদুল মালেক পরিকল্পিতভাবে স্থায়ীয় মসজিদের মাইকে ডাকাতির কথা প্রচার করে গ্রামের সাধারণ মানুষকে জড়ো করেন। শুধু তা-ই নয়, আবদুল মালেক হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাভার থানায় ছাত্রদের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতির মামলা করেন।
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা: আবদুল মালেক, সাইদ মেম্বার, আবদুর রশিদ, ইসমাইল হোসেন, জমশেদ আলী, মীর হোসেন, মুজিবুর রহমান, কবীর হোসেন, মনোয়ার হোসেন, রজব আলী, আলম, রানা, আবদুল হামিদ, আসলাম মিয়া, শাহীন আহম্মেদ, ফরিদ খান, রাজীব হোসেন, রহিম ওরফে হাতকাটা রহিম, ওয়াসীম, সেলিম, সানোয়ার হোসেন, সামছুল হক মেম্বার, রাশেদ, সহিদুল, সাত্তার, সেলিম, মনির হোসেন, ছাব্বির আহম্মেদ, আলমগীর, সানোয়ার হোসেন ওরফে আনু, মোবারক হোসেন, আমিন খন্দকার, কবির, রুবেল, নুর ইসলাম, আমিন, সালেহ আহম্মেদ, শাহাদত হোসেন ওরফে জুয়েল, টুটুল, আমিন, মাসুদ, নিজাম উদ্দিন, মোখলেছ, কালাম, আহাদ আলী, বাদশাহ মিয়া, টোটন, সাইদুল, রহিম, শাহজাহান, সুলতান, সোহাগ, লেমন, সাইমন, এনায়েত, হায়দার, খালেক, ইমান আলী, দুলাল ও আলম। তাঁদের মধ্যে ১৪ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
চারজনকে অব্যাহতির আবেদন: ঘটনায় জড়িত হিসেবে তদন্তে ফরহাদ, লাটন, শহিদ ও তারা মিয়া নামের আরও চারজনের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সঠিক ঠিকানা না পাওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহিত দেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই চারজনের সঠিক নাম-ঠিকানা যদি কখনো পাওয়া যায়, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.