আবার আক্রান্ত শিক্ষক-শান্তি ফিরে আসুক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আক্রান্ত। অভিযোগের তীর সেই ছাত্রলীগের দিকেই। অবশ্য এটাই প্রথম নয়। এর আগেও আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলার অভিযোগে ছাত্রলীগ অভিযুক্ত ছিল।
শনিবারের ঘটনায় ক্যাম্পাসে অবস্থানরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা চলছিল অনেক আগে থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষক উভয় পক্ষের আন্দোলনের মুখে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন উপাচার্য এরই মধ্যে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। কিন্তু তার পরও শিক্ষকদের আন্দোলন চলছিল। তাঁদের সব দাবি পূরণ হয়নি- এ অজুহাতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন কিছু শিক্ষক। শনিবার শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দাবিতে সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে অনশন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে। অভিযোগ উঠেছে, এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে মিশে যায়। একই সময় সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে অবস্থানরত শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় একদল বহিরাগত ছাত্র। শিক্ষকরা ছাত্রদের ইট-পাটকেল তো বটেই, লাঠিপেটারও শিকার হন। শিক্ষকদের অভিযোগ, হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দেখা গেছে।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে অনেক দিন থেকেই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বিগত পাঁচ মাস। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকার উদাহরণ পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে পাওয়া যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ-জাতীয় ঘটনা ঘটছে। ছাত্ররাজনীতি যেমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সংঘাতপ্রবণ করে তুলছে, তেমনি শিক্ষকদের রাজনৈতিক মতান্তর বা আনুগত্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ যে নষ্ট করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার পরও শিক্ষকদের ওপর ছাত্রদের হামলা মেনে নেওয়া যায় না। 'বড় কোনো দাবি আদায় করতে গেলে ছোটখাটো ঘটনা ঘটতেই পারে'- কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এমন কথা বলেছেন বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বে যারা নিয়োজিত, তাদের স্থানীয় শীর্ষ কর্মকর্তার এ ধরনের উক্তি আস্কারা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। উপরন্তু ছাত্রলীগকে নিশ্চয় কেউ শিক্ষক পেটানোর দায়িত্ব দেয়নি।
আমরা চাই, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তি ফিরে আসুক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ সবাই পায় না। এ সুযোগ যাদের হয়েছে, তাদের উচিত প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগানো। ছাত্র-শিক্ষক সবাইকেই বাণিজ্যিক সুবিধার কথা ভুলে শিক্ষার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.