মংলার একমাত্র ফেরিটি ১৬ ঘণ্টাই বন্ধ থাকে! by সুমেল সারাফাত

নাব্যতা-সংকটের কারণে বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মংলা নদী পারাপারের একমাত্র ফেরিটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টাই বন্ধ থাকছে। ফলে জোয়ারের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকদের।
বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মংলা উপজেলাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০২ সালে ফেরি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নদীর দক্ষিণ (পুরাতন মংলা) ও উত্তর (বাসস্ট্যান্ড) পাড়ে দুটি ঘাট নির্মাণ শেষে ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরিটি চালু করা হয়। ভোগান্তি কমতে থাকে দ্রুত পচনশীল মাছ ও কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনের। এতে করে ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে অধিক সময় ও অর্থ ব্যয় হ্রাসের পাশাপাশি জরুরিভাবে রোগীসহ অন্যান্য প্রয়োজনে নৌকায় নদী পার হওয়ার ঝুঁকি ও দুর্ভোগ কমতে থাকে। কিন্তু তিন-চার বছর যেতে না যেতেই নদীতে অব্যাহতভাবে চর পড়তে থাকায় এর স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হতে থাকে।
ফেরির মাস্টার (চালক) সোহরাব হোসেন জানান, বর্তমানে নদীর দক্ষিণ পাড়ের প্রায় মাঝ পর্যন্ত এলাকায় ভাটার সময় চর জেগে উঠছে। এ কারণে দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টার ১৫-১৬ ঘণ্টাই পানির অভাবে ফেরিটি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সওজ বিভাগ ঘাটের পন্টুন ও বেইলি সেতু চার দফায় নদীর দিকে ২০০ ফুট বাড়ালেও অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। কয়েক দিনের মধ্যেই বর্ধিত অংশে নতুন করে চর জেগে উঠছে। মংলা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশার ইমান হোসেন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গুরুতর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা সম্ভব না হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনা নিয়ে যেতে হয়। ভাটির সময় ফেরি না চলায় গুরুতর অসুস্থ ও মুমূর্ষু রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে জোয়ারের অপেক্ষা করতে হয়।
মংলা উপজেলা মৎস্য আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি দিন ইসলাম জানান, দ্রুত পচনশীল ও জরুরি পণ্য নিয়ে যথাসময়ে ফেরি পার হতে না পারায় তা অনেক ক্ষেত্রেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে তাঁরা চরম আর্থিক ক্ষতির সমঞ্চুখীন হচ্ছেন।
মংলা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. নূর আলম জানান, উপজেলা প্রশাসনের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের মালামাল পরিবহনেও ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। মংলা নদী খনন করলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার কথা নিশ্চিত করে বাগেরহাটের সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনোয়ার উজ জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, ঘাট সম্প্রসারণ করতে করতে নদীর মাঝ পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছে। এ অবস্থায় খননের বিকল্প নেই। কিন্তু নদী খনন তাঁদের দপ্তরের কাজ নয়।

No comments

Powered by Blogger.