মুবারকের পুনর্বিচারের নির্দেশ

মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের পুনর্বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। এর আগে রাজধানী কায়রোর একটি আদালত সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের প্রাণহানি ঠেকাতে ব্যর্থতার দায়ে মুবারককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
মুবারকের তরফ থেকে মামলাটি পুনর্বিচারের আবেদন জানানো হলে আপিল বিভাগ গতকাল রবিবার এই নির্দেশ দেন। মুবারকের সমর্থকরা আদালতের রায়কে স্বাগত জানান।
এর ফলে মুবারক (৮৪), তাঁর দুই ছেলে আলা ও গামাল মুবারক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাবিব আল-আদলি ও শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তাপ্রধানদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিচার নতুন করে করা হবে। তবে মামলা চলাকালীন মুবারক ও তাঁর ছেলেদের কারাগারেই থাকতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ আরো কয়েকটি অভিযোগে মামলা চলছে। গত মাসে বাথরুমে পড়ে গিয়ে আহত হওয়ায় মুবারক বর্তমানে কায়রোর সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে আপিল আদালতের বিচারক আহমেদ আলি আবদেল রহমান গতকাল রায়ে জানান, মুবারক, আল-আদলি ও আইনজীবীদের করা পুনর্বিচারের আবেদন আদালত গ্রহণ করছেন। তিনি কায়রোর ফৌজদারি আদালতের দেওয়া আগের সব রায় বাতিলের নির্দেশ দেন। বিচার বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, নতুন করে বিচার শুরুর দিনক্ষণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। পুনর্বিচারের খবরে গতকাল আদালতের বাইরে মুবারক সমর্থকরা তাঁর ছবিসহ মিছিল করে।
মিসরে মুবারকবিরোধী আন্দোলন শুরুর দুই বছর পূর্ণ হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে এ রায় দেওয়া হলো। ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি মিসরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৮ দিনের মাথায় ১১ ফেব্রুয়ারি মুবারকের পতন ঘটে। ওই বিক্ষোভে প্রায় ৮০০ লোক মারা যায়। এই প্রাণহানি ঠেকাতে না পারার ব্যর্থতার দায়ে গত ২ জুন কায়রোর ফৌজদারি আদালত মুবারককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ছয়জন নিরাপত্তাপ্রধানকেও একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
উপহার নেওয়ার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ : মিসরের একটি পত্রিকার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১০ লাখ ডলার মূল্যের উপহার সামগ্রী নেওয়ার অভিযোগে গত শনিবার মুবারককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিষয়টি তদন্তের জন্য তার বিরুদ্ধে ১৫ দিনের আটকাদেশ দিয়েছেন সরকারি তহবিলবিষয়ক আইনজীবী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, মুবারকের শাসনামলে মিসরের আল আহরাম সংবাদপত্র বিভিন্ন সময় মুবারক, তাঁর পরিবারের সদস্য ও মন্ত্রীদের ঘড়ি, কলম, ব্যাগ, বেল্ট, স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দেয়। প্রেসিডেন্টের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের নিদর্শন হিসেবে এগুলো দেওয়া হয়। দৈনিক এল সোরুক পত্রিকা জানায়, উপহারগ্রহীতাদের তালিকায় মুবারকের স্ত্রী সুজানে মুবারক, তাঁর দুই ছেলে, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাবেক তথ্যমন্ত্রী সাফওয়াত এল শেরিফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ নাজিফের নাম রয়েছে। এদিকে আল আহরাম পত্রিকার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মুবারকের শাসনামলে পত্রিকার পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপহার দেওয়ার রীতি ছিল। তাঁরা ১০ লাখ ডলার মূল্যের উপহার দিয়েছেন। তবে বিক্ষোভ-পরবর্তীকালে পত্রিকার ব্যবস্থাপনা পরিষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি : কায়রোয় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে অবস্থানরত মুরসিবিরোধী বিক্ষোভাকারীদের ওপর মুখোশ পরা বন্দুকধারীরা গুলি চালিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এ সময় বন্দুকধারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটে। কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সংঘর্ষে সাত পুলিশ ও ১৬ জন বেসামরিক লোক আহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি প্রণীত সংবিধান বাতিলের দাবিতে গত এক মাস বিক্ষোভকারীরা তাঁবু খাটিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে বিক্ষোভ করছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, দুই বন্দুকধারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.