বোরোর সেচে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ নিয়ে দুশ্চিনত্মা- ১৫ লাখ টন ডিজেল আমদানির সিদ্ধানত্ম by সোহেল রহমান

 চলতি বোরো মৌসুমে বিদু্যতের বাড়তি চাহিদা পূরণে দুশ্চিনত্মায় রয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকলেও সেচ মৌসুমে সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট দাঁড়াবে।
কৃষি ফলনের জন্য সারাদেশে সেচ পাম্প চালাতে বাড়তি দেড় হাজার মেগাওয়াটেরও বিদ্যুত প্রয়োজন হবে। শহর এলাকায় লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বাড়তি চাহিদা পূরণ করা হবে। কৃষকদের সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে রাত এগারোটা থেকে ভোর পাচটা পর্যনত্ম নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যত সরবরাহ এবং সেচের জন্য প্রায় ১৫ লাখ টন ডিজেল আমদানির সিদ্ধানত্ম নিয়েছে সরকার। তারপরও বোরোর জন্য আড়াই লাখেরও বেশি পাম্পে বিদু্যত ঘাটতির আশঙ্কা করছে বিদু্যত উৎপাদন ও বিতরণের সঙ্গে সংশিস্নষ্টরা।
সরকারী হিসেবে সারাদেশে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪ বিদু্যতচালিত সেচ পাম্প ব্যবহৃত হবে। সেচ পাম্পগুলো চালাতে প্রতিদিন অফ পিক আওয়ারে (রাত এগারোটা থেকে ভোর পাঁচটা) পর্যনত্ম ১ হাজার ৬৬৫ মেগাওয়াট বিদু্যত সরবরাহ করতে হবে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৮ হাজার ৮০৭ সেচ পাম্পের জন্য বিদু্যতের চাহিদা রয়েছে ৭৩ মেগাওয়াট। ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৪৬ হাজার ৭০৭ সেচ পাম্পের বিপরীতে বিদু্যতের চাহিদা ২০৯ মেগাওয়াট। রাজশাহী অঞ্চলে ৪৭ হাজার ২৪৯ সেচ পাম্পের জন্য বিদু্যতের চাহিদা ৩০৯ মেগাওয়াট। রংপুর অঞ্চলে ৪৯ হাজার ৬৬৪টি সেচ পাম্পের জন্য বিদু্যতের প্রয়োজন হবে ২১৫ মেগাওয়াট। খুলনা অঞ্চলে ২৯ হাজার ৩১২ পাম্পের বিপরীতে চাহিদা ১২৮ মেগাওয়াট। কুমিলস্না অঞ্চলে ২০ হাজার ৯৩৫ সেচ পাম্পের জন্য বিদু্যতের চাহিদা ১০২ মেগাওয়াট। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৫ হাজার ৩৮১ পাম্পের বিপরীতে চাহিদা ২৪ মেগাওয়াট। সিলেট অঞ্চলে ৩ হাজার ৪ পাম্পের জন্য বিদু্যতের চাহিদা ১৫ মেগাওয়াট এবং বরিশাল অঞ্চলে ৭২৫ পাম্পের জন্য বিদু্যতের চাহিদা রয়েছে ৩ মেগাওয়াট। বিদু্যতচালিত সেচযন্ত্রের বাইরে ডিজেলচালিত আরও প্রায় ১৪ লাখ ২৫ হাজার সেচযন্ত্র রয়েছে। গোটা সেচ মৌসুমে ডিজেলচালিত পাম্পগুলোর জন্য প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন ডিজেলের প্রয়োজন হবে।
সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সেচ পাম্পগুলোতে বিদু্যত সরবরাহ করে থাকে। এর মধ্যে পলস্নী বিদু্যতায়ন বোর্ড (আরইবি) প্রায় ২ লাখ পাম্পে বিদু্যত সরবরাহ করে থাকে। অবশিষ্ট পাম্পগুলোতে বিদু্যত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বিদু্যত সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারী রণশীল হিসাবের বাইরে বর্তমানে সারাদেশে বিদু্যতের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াটের মতো। বর্তমানে বিদু্যত উৎপাদনের পরিমাণ ৩ হাজার ৫শ' থেকে ৩ হাজার ৭শ' মেগাওয়াটের মতো। বর্তমান ঘাটতির এই বিপরীতে বোরো মৌসুমে বাড়তি আরও প্রায় দেড় মেগাওয়াট বিদু্যতের প্রয়োজন হবে। সূত্র জানায়, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল রাজশাহী বিভাগে জানুয়ারি থেকেই সেচ পাম্প চালু করা হয়। ঢাকা বিভাগে জানুয়ারির শেষ দিকে সেচ পাম্প চালুর প্রয়োজন হয়। তবে দেশের দণি-পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে কিছুটা বিলম্বে সেচ কাজ শুরম্ন হয়। অঞ্চলভেদে জানুয়ারির প্রথম থেকে এপ্রিল পর্যনত্ম সেচ কার্যক্রম চলে।
সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের দামের কারণে ডিজেলচালিত সেচ যন্ত্রের পরিবর্তে বিদু্যতচালিত গভীর নলকূপের পরিমাণ বেড়ে গেছে। আবার বোরো মৌসুমে বরাবরই ডিজেল সংকটের কারণে কৃষককে নাকাল হতে হয়। একইভাবে জ্বালানি তেলনির্ভর সেচযন্ত্র ব্যবহারের কারণে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। যার প্রভাব পড়ছে উৎপাদিত ফসলের দামের ওপর । এসব দিক বিবেচনা করে বোরো মৌসুমে বিদু্যতের ঘাটতি মোকাবেলায় কৌশল খুঁজছে বিদু্যত উৎপাদন ও বিতরণের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট বিভাগগুলো। সেচ মৌসুমে প্রয়োজনীয় বিদু্যত সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পিডিবিসহ সংশিস্নষ্ট বিদু্যত কেন্দ্রগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংরণ ও নিয়মিত রণাবেণ কাজের জন্য বন্ধ রাখা কেন্দ্রগুলোকে চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে। দিনের বেলায় সাধারণ গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে শীঘ্রই রাতের সেচ পাম্প চালু রাখার নির্দেশ দেয়া হবে। সংশিস্নষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিদু্যত খাতের উন্নয়নের নানা পরিকল্পনা নেয়া হলেও তার কাঙ্ৰিত বাসত্মবায়ন হয়নি। এছাড়া বিদু্যত সঞ্চালনসহ বিতরণ ব্যবস্থারও উন্নয়ন হয়নি। রেন্টাল বিদু্যত কেন্দ্রগুলো সঠিক সময়ে উৎপাদনে না আসা এবং গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাহিদার তুলনায় বিদু্যত উৎপাদন কমে যায়।
সূত্র জানায়, বোরোর বাম্পার ফলন নিশ্চিত করতে কৃষি জমিতে সেচের জন্য প্রতিদিন রাত ১১টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যনত্ম গ্রামীণ জনপদে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদু্যত সরবরাহ করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে যাতে কেউ সেচযন্ত্র না চালায় সে ব্যাপারেও তদারকি জোরদার করা হবে। সরকারের প থেকে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় বিদু্যত সংযোগ দিতে আরইবিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ জন্য কৃষকের ওপর যাতে বাড়তি আর্থিক চাপ না পড়ে তাও নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিদু্যতের বাইরে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টন ডিজেল আমদানির সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। সারাদেশে চুরি হওয়া ট্রান্সফরমারগুলোও পুনরায় স্থাপন শুরম্ন করেছে আরইবি। যে সকল কৃষক নিজ খরচে ট্রান্সফরমার কিনবেন তাদের বিদু্যত সংযোগ দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বোরো মৌসুমে গ্রামে বিদু্যতের বাড়তি সরবরাহ নিশ্চিত করতে অফ পিক আওয়ারে শহরে লোডশেডিং বাড়ানো হবে। এছাড়া কৃষকের স্বার্থে শহরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো বন্ধ রাখারও অনুরোধ জানানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.