বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক- সীমান্তে প্রাণহানি বন্ধ হোক

বাংলাদেশ ও ভারত সুপ্রতিবেশী দুটি দেশ, সুদীর্ঘকাল ধরে দেশ দুটির মধ্যে সৌহার্দ্য, বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে। শুধু দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্কই নয়_ দেশ দুটির জনগণের মধ্যেও নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণ প্রায় একই ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণ করে।
ঐতিহাসিক সম্পর্কের সূত্র ধরে দেশ দুটির মানুষের মধ্যে যাতায়াত, যোগাযোগ ও ভাববিনিময়ের ধারা অব্যাহত আছে। রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতি, পাসপোর্ট-ভিসার বিধি মেনেই এই সংযোগ পরস্পরের। কিন্তু দু'দেশের উষ্ণ এই পারস্পরিক সম্পর্ক মাঝে মধ্যেই তিক্ত হয়ে ওঠে সীমান্তে গুলিবর্ষণের ঘটনায়। বাংলাদেশের বহু নাগরিক ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। অতি সম্প্রতি নিরপরাধ নারী শিশু ফেলানীর মৃত্যুর ঘটনা বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। সকলেই এ হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, অবৈধ বা অসচেতনভাবে সীমান্ত অতিক্রমণের চেষ্টা হলে গুলি করে হত্যা করাই কি একমাত্র সমাধান? আন্তর্জাতিক বিধি অনুসারে, নিয়ম লঙ্ঘন করে সীমান্ত অতিক্রমণের ঘটনা ঘটলে অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের কাছে সোপর্দ করা যায়। বিধি অনুসারে শাস্তিও দেওয়া যায়। দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের পারস্পরিক আলাপ ও যোগাযোগের মাধ্যমেও অনেক সমস্যার সমাধান মেলে। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে তেমনটি না ঘটে ক্রমাগতভাবে গুলি এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে কেন? বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আবদ্ধ দুটি দেশের মধ্যে এমন ঘটনা পৃথিবীতে খুব কম ঘটে। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গুলি বন্ধ করার দাবি দীর্ঘদিন ধরে বহাল আছে। গত শনিবার বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রধানদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএসএফ প্রধান কথা দিয়েছেন, সীমান্তে আর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে না ভারত। প্রাণঘাতী বুলেটের বদলে রাবার বুলেট ব্যবহার করা হবে। পরীক্ষামূলক হলেও সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। তবে একথাও সত্য, রাবার বুলেট কম ক্ষতিকর নয়। নিকটবর্তী দূরত্ব থেকে নিক্ষেপিত রাবার বুলেট প্রাণহানির কারণ হতে পারে। মারাত্মক আহত হওয়ার ঘটনাও এর মাধ্যমে ঘটতে পারে। ফলে রাবার বুলেটও যথেষ্ট সাবধানতা সহকারে ব্যবহৃত হতে হবে। তবে সুপ্রতিবেশী দুটি দেশ যদি সীমান্ত অতিক্রমণ রোধে বন্দুক-বুলেটের ব্যবহার বন্ধ করে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে অন্যবিধ পদ্ধতি অবলম্বন করে, তবে সেটি হবে কাঙ্ক্ষিত অবস্থান। প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। আমরা মনে করি, নিয়মিতভাবে পারস্পরিক আলোচনা ও বৈঠকগুলো আমাদের সীমান্তে যৌক্তিক এবং গ্রহণযোগ্য পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে পারবে। দু'দেশের সরকারের মধ্যে এমন তৎপরতা অব্যাহত থাকুক এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.