থানায় মামলা নিতে গড়িমসি ॥ প্রাণনাশের হুমকি পাষ- স্বামীর, নিরাপত্তাহীনতায় রোজিনা পরিবার

 স্বামীর ঢেলে দেয়া কেরোসিনের আগুনে ঝলসানো গৃহবধূ রোজিনা আক্তার আর আগের অবস্থানে ফিরে আসতে পারবেন কিনা না তা নিয়ে শঙ্কিত পুরো পরিবার।
কারণ সারা শরীরে ঝলসানো দগদগে ঘা নিয়ে প্রতি মুহূর্তেই তিনি যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। তিনি তাঁর এই করুণ পরিণতির জন্য দায়ী পাষ- স্বামী মনির হোসেনের বিচার চান। এমনই কথা জানালেন হতভাগী রোজিনা আক্তার। বুধবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটে এক সংবাদ সম্মেলনে হতভাগী রোজিনা কষ্ট ও যন্ত্রণায় আরও জানান, পুলিশ থানায় মামলা নেয়নি। আদালতে মামলা গ্রহণ করে থানায় পাঠালেও পুলিশ তা নিয়ে গড়িমসি করছে। এ ঘটনা জানার পর পাষ- স্বামী ঢাকায় এসে তাঁদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গেছে। এখন তাঁরা রীতিমতো চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্বামীর নির্যাতনের শিকার রোজিনার পিতা হতদরিদ্র রিকশাচালক মোঃ আবুল হোসেন বলেন, ২০১০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার গরু ব্যাপারী আবুল কাশেমের বড় ছেলে মনির হোসেনের সঙ্গে বড় মেয়ে রোজিনা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় জামাতা মনির হোসেন তাঁর কাছে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। না দেয়ায় মেয়ের শ্বশুরালয় মুরাদনগর থানাধীন ইলিয়টগঞ্জ গ্রামে রোজিনার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। পরে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার ঢুহুগী গ্রামের জমি বিক্রি করে এক লাখ ২০ হাজার যৌতুক দেই। কয়েকমাস যাবার পর জামাতা মনির বিদেশে যাবার জন্য পুনরায় যৌতুক দাবি করে। তা না হলে হুমকি দেয় মেয়ে রোজিনাকে মেরে গুম করে ফেলবে। এ নিয়ে বহুবার সালিশ দরবারে মীমাংসা করে দেয়া হয়। আবুল হোসেন আরও জানান, এরই জের ধরে গত ২২ নবেম্বর রাতে জামাতা মনির হোসেন মেয়ে রোজিনাকে বেদম প্রহার করে। এক পর্যায়ে জামাতা মনির মেয়ে রোজিনার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তাঁর আর্তচিৎকারে গ্রামের লোকজন তাকে উদ্ধার করে গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ওই অবস্থায় শ্বশুরালয়ে মেয়ে রোজিনাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এই সংবাদ পেয়ে গত ৪ ডিসেম্বর মেয়ে রোজিনাকে তাঁর শ্বশুরালয় থেকে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঘটনাটি মুরাদনগর থানায় ওসিকে জানালে তিনি মামলা নেননি। উল্টো ওসি তাদের মীমাংসার জন্য প্রস্তাব দেন। পরে বাধ্য হয়ে কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করি। আদালত মামলাটি নথিভুক্ত করার জন্য মুরাদনগর থানাকে অবহিত করে। কিন্তু পুলিশ এখনও পর্যন্ত আদালতের মামলাটি নথিভুক্ত করেনি। উল্টো মামলার কথা শুনে জামাতা মনির ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মীরহাজারীবাগের বাসায় এসে মেয়ে রোজিনাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তুলে নেয়ার জন্য চেষ্টা চালায়। তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমার মেয়ে নির্যাতনকারী মনিরের বিচার চাই। এ সময় তার পাশে বসা গুরুতর আহত মেয়ে রোজিনা আক্তারের চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল। তার পাশে হতভাগীর মাও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

No comments

Powered by Blogger.