ছায়ানটে গান কবিতা ও কথায় ওয়াহিদুল হক স্মরণ- সংস্কৃতি সংবাদ

রবিবার সকাল-সন্ধ্যা দুই বেলায় গানের সুর ও কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ ধ্বনিত হয় ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে। সঙ্গীতজ্ঞ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক ওয়াহিদুল হকের প্রয়াণবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনে ছিল এ আয়োজন।
দিনব্যাপী এই গুণীজন স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে তাঁরই গড়া সংগঠন ছায়ানট। দিনভর গান, কবিতা ও কথামালায় জানানো হয় শ্রদ্ধা-ভালবাসা। সকাল থেকেই গানের সুরে শুরু হয় স্মরণের আয়োজন। সকাল সাতটা থেকে ৮টা পর্যন্ত ওয়াহিদুল হকের ভক্ত, অনুসারী ও ছায়ানটের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন গানের পরিবেশনায়। গাওয়া হয় বিশটি সম্মেলক গান। সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠানমালা। স্মরণের এ পর্বে ছিল গান, কবিতা আবৃত্তি, স্মৃতিচারণা ও পাঠ।
ওয়াহিদুল হককে নিবেদিত ছায়ানট সভাপতি সন্্জীদা খাতুনের কথামালা দিয়ে শুরু হয় সান্ধ্যকালীন আয়োজন। তিনি বলেন, দেশের সংস্কৃতিকে মানুষের ছড়িয়ে দিতে মোখলেসুর রহমান ও ওয়াহিদুল হকসহ কিছু মানুষের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে ছায়ানট। আর ছায়ানট সব সময় স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেছে। এই চিন্তাটিই ওয়াহিদুল হকের মনে সর্বদা জাগরিত হতো। ছায়ানটকে তিনি শুধু গানের স্কুল হিসেবে ভাবতেন না, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ক্ষেত্র মনে করতেন। সংস্কৃতিকে তিনি কখনও শুধু বিনোদন হিসেবে ভাবেননি। কথা শেষে গীত হয় সম্মেলক গান। ছায়ানট শিক্ষার্থীদের অনেক কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে যায়Ñ বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি। আর কথামালার সঙ্গে কবিতা আবৃত্তি করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। এরপর পরিবেশিত হয় সমবেত সঙ্গীত আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে। কথা ও গানের একটি পর্ব সঞ্চালনা করেন কণ্ঠশিল্পী ইফ্্ফাত আরা দেওয়ান। এ পর্বে গান শোনান তানিয়া মান্নান, লাইসা আহমদ লিসা, ইফ্্ফাত আরা দেওয়ান, শারমিন সাথী ইসলাম ও ইখ্তিয়ার ওমর। তাদের গাওয়া গানগুলো ছিল হৃদয় আমার প্রকাশ হলো, তুমি কিছু দিয়ে যাও, নয়ন মেলি দেখি, যদি আপনার মনে, যখন রব আমি ইত্যাদি। পাঠ পর্বে সিডি থেকে বাজানো হয় ওয়াহিদুল হকের কথামালা। এরপর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি তারেক আলী সঞ্চালনায় ছিল কথা ও গানের আরেকটি পর্ব। এ পর্বে গান শোনান সিফায়েত উল্লাহ্্ মুকুল, তারেক আলী ও এটিএম জাহাঙ্গীর। এরপর সিডিতে বাজানো হয় ওয়াহিদুল হকের গাওয়া একটি গান। মিলনায়তনে ছড়িয়ে পড়ে ‘হে চঞ্চল হে/আমি সুদূরের পিয়াসী গানের সুর।’ জাতীয়সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান।
কলকাতায় নয় দিনের বাংলা গানের উৎসব ॥ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক শিল্পীর অংশগ্রহণে কলকাতায় বসছে বাংলা গানের আসর। টালিগঞ্জের আইটিসি রিসার্চ সঙ্গীত অ্যাকাডেমি চত্বরে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে নয় দিনের এ গানের উৎসব। বাংলা গানের উৎসব শীর্ষক বৃহৎ পরিসরের এ আয়োজনে কলকাতাবাসীকে গান শোনাবেন বাংলাদেশের প্রায় পঞ্চাশজন খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গীকৃত উৎসবে কলকাতার প্রথিতযশা শিল্পীরাও গান শোনাবেন। বাংলাদেশের শিল্পীরা গাইবেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ পঞ্চকবির গান, সেকালের বাংলা গান, রাগপ্রধান গান, ফিউশন, জীবনমুখী, আধুনিক ও লোকগান। গানের পাশাপাশি উৎসবে থাকবে রবীন্দ্রনাথের গীতিনৃত্যনাট্য ও কবিতা আবৃত্তি।
এ উপলক্ষে রবিবার বেঙ্গল শিল্পালয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন, কিরণ চন্দ্র রায়, শামা রহমান, খায়রুল আনাম শাকিল ও ডেইলি স্টারের সংস্কৃতি সম্পাদক সাদিয়া আফরিন মল্লিক। এছাড়াও উৎসব নিয়ে কথা বলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল খায়ের, মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী ও পরিচালক সুবীর চৌধুরী।
বাংলা গানের উৎসবে গান শোনাবেনÑ ইয়াকুব আলী খান, শামা রহমান, খায়রুল আনাম শাকিল, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মিতা হক, ফরিদা পারভীন, সুবীর নন্দী, ইফ্ফাত আরা দেওয়ান, জয়তী চক্রবর্তী, ফারহানা রহমান, সন্দীপ ভট্টাচার্য্য, সুচেতা গঙ্গোপাধ্যায়, ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সুচিশ্রী রায়, বিদূষী কৌশিকি দেশিকান, প-িত অরুণ ভাদুড়ি, প-িত অজয় চক্রবর্তী, সানী জুবায়ের, নন্দিতা ইয়াসমিন, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, বাপ্পা মজুমদার, ফাহমিদা নবী, শুভমিতা, শ্রীকান্ত আচার্য, অদিতি গুপ্ত, লাইসা আহমদ লিসা, বুলবুল ইসলাম, শ্রেয়া গুহঠাকুরতা, শারমিন সাথী ইসলাম, অদিতি মহসিন, স্বাগতালক্ষ্মী, সিদ্দিকুর রহমান, চন্দনা মজুমদার, রব ফকির, রামকানাই দাশ ও কিরণ চন্দ্র রায়। তরুণদের মধ্যে জীবনমুখীসঙ্গীত পরিবেশন করবেন অর্ণব, কৃষ্ণকলি, অর্ক, গৌরব, নবনিতা, বুনো, পান্থ কানাই, জালাল, অঞ্জন, জীবন, সাদ ও সোয়েব। কবিতা আবৃত্তি করবেন বাকশিল্পী আসাদুজ্জামান নূর ও মাহবুবুর রহমান।
আর্ট লাউঞ্জে চট্টগ্রামের শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ॥ চট্টগ্রামের চারুশিল্পীদের প্রতিষ্ঠান সন্তরণ আর্ট অরগানাইজেশন। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছরই সদস্য শিল্পীদের নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সেই ধারাবাহিকতায় রবিবার থেকে গুলশানের বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে শুরু হলো যৌথ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। চট্টগ্রামের সাত শিল্পীর কাজ নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘সময় ও শিল্পের সমীকরণ।’
রবিবার সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে সতেরো দিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এমএম ইস্পাহানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ইস্পাহানী। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বেজিংয়ের গ্যালারিয়া কনটিনুয়া স্যান গিমিনয়ানোর মারিও ক্রিশ্চিয়ানি।
প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া শিল্পীরা হলেনÑ বিভল সাহা, মঞ্জুর আহমদ, নাসির উদ্দীন, নূর-ই-ইলাহী, শতাব্দী সোম, শহীদুল ইসলাম ও তানজিল ফাতেমা টুসী। প্রদর্শনীতে আটটি স্থাপনাকর্মসহ মোট শিল্পকর্মের সংখ্যা প্রায় ৩০টি। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
ঠাকুরগাঁওয়ে নাট্যোৎসব শুরু ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, ঠাকুরগাঁও জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে শুরু হয়েছে ৮ দিনব্যাপী নাট্যোৎসব।
শনিবার রাত ৮টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল ঝুনা চৌধুরী। জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাসের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন টিভি নাট্য অভিনেতা লিটু আনাম ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতানুল ফেরদৌস নম্র চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ঝুনা চৌধুরী ও লিটু আনামের হাতে উৎসব কমিটির পক্ষে ক্রেস্ট ও গায়ে উত্তরীয় পরিয়ে দেন জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাস ।
উদ্বোধনের পর গ্রীন থিয়েটারের পরিবেশনায় মঞ্চ নাটক আমরা আসছি ও আলপনা সাহিত্য সংসদের পরিবেশেনায় চোখে আঙ্গুল দাদা পরিবেশিত হয়।
উৎসবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও স্থানীয় ১১টি নাট্যদল ৭টি পথনাটক ও ১১টি মঞ্চনাটক পরিবেশন করবে। নাট্যোৎসব উপলক্ষে সকালে একটি শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। উৎসব চলবে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ।

No comments

Powered by Blogger.