আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

 আমরা যে ভাষায় আজ কথা বলি, যে ভাষা নিয়ে গর্ব করি, আর মাত্র তিন দিন পর সে ভাষার জন্য যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের স্মরণে পালিত হবে আনত্মর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
এ দিবসটির জন্য এবং মায়ের মমতাময়ী এ ভাষার জন্য শুধু নাম জানা রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউরই নয়, আরও অনেকে দিয়েছেন প্রাণ। '৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিসত্মানী শাসকদের বিরম্নদ্ধে বাঙালীরা প্রথম যে হরতাল করে, সেটি ভাষার দাবিতেই পালিত হয়েছিল। '৪৮ সালের ২৩ ফেব্রম্নয়ারি গণপরিষদের এক প্রসত্মাবে উর্দু ও ইংরেজীকে পরিষদের ভাষা করা হয়। প্রসত্মাবে বলা হয়, এ দুই ভাষা ছাড়া আর কোন ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। তখন পরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত একটি সংশোধনী প্রসত্মাব আনেন ইংরেজী ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও গণপরিষদে ব্যবহারের ভাষা করার জন্য। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রসত্মাব পাকিসত্মানী শাসকদের উত্তেজিত করে তোলে। তাঁরা প্রসত্মাবটিকে নিছক সঙ্কীর্ণ প্রাদেশিকতার মনোভাব হিসেবে উলেস্নখ করেন। প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান বলেন, প্রসত্মাবটি পাকিসত্মানের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ সৃষ্টি করবে বলে মনত্মব্য করেন। তাই প্রসত্মাবটি আসা উচিত হয়নি। এ সময় লিয়াকত আলী খানের সুরে কথা বলেন পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীনও। ধীরেন্দ্রনাথের প্রসত্মাব অগ্রাহ্য হলে প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে পূর্ব বাংলার জনগণ। '৪৮ সালের ২৮ ফেব্রম্নয়ারি তমদ্দুন মজলিস ও পূর্ব পাকিসত্মান মুসলিম ছাত্রলীগের যৌথসভায় ১১ মার্চ হরতাল পালনের সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়। এটাই ছিল দেশ বিভাগের পর পূর্ব পাকিসত্মানের প্রথম হরতাল। হরতালের দিন বগুড়ায় যে মিছিল বের হয়, তাতে নেতৃত্ব দেন বগুড়া কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ড. মুহম্মদ শহীদুলস্নাহ। ওই সব আন্দোলনের ফসলই আজকের বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ। আর এ ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য প্রতিবছর ফেব্রম্নয়ারিতে আয়োজন করা হয় মাসব্যাপী আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমীর মূল মঞ্চে আলোচনা হবে একুশের কবিতা নিয়ে। এতে সভাপতিত্ব করবেন কবি আসাদ চৌধুরী। প্রবন্ধ পাঠ করবেন ড. বায়তুলস্নাহ কাদরী। আর আলোচনায় অংশ নেবেন কবি হাবীবুলস্নাহ সিরাজী, মুহাম্মদ সামাদ, আহমদ মযহার ও ফারজানা সিদ্দিকা।

No comments

Powered by Blogger.